ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে গত কয়েক সপ্তাহে অন্তত চারবার ফোনে কথা বলার চেষ্টা করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, কিন্তু মোদি তার ফোন ধরতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। জার্মান দৈনিক ফ্রাঙ্কফুর্টার আলগেমাইনে’র (এফএজেড) বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে। পত্রিকাটি বলছে, এটি মোদির গভীর ক্ষোভের পাশাপাশি সতর্ক অবস্থানের প্রতিফলন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। ফলে বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে দুই দশকের বেশি সময় ধরে গড়ে ওঠা ভারত-মার্কিন সম্পর্ক।
বার্লিনভিত্তিক গ্লোবাল পাবলিক পলিসি ইনস্টিটিউটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং পরিচালক থরস্টেন বেনার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ লেখেন, ‘এফএজেড জানিয়েছে, ট্রাম্প গত কয়েক সপ্তাহে চারবার ফোন করেছিলেন, কিন্তু মোদি কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।’
৩১ জুলাই ট্রাম্প ভারতকে উদ্দেশ করে মন্তব্য করেন, ‘ভারত আর রাশিয়া চাইলে একসঙ্গে তাদের মৃত অর্থনীতি নিয়ে তলিয়ে যাক, আমার কিছু যায় আসে না।’ এর পাল্টা জবাবে ১০ আগস্ট মোদি বলেন, ‘ভারত বিশ্বের শীর্ষ তিন অর্থনীতির একটিতে পরিণত হওয়ার পথে রয়েছে।’
জার্মান পত্রিকাটি বিশ্লেষণে বলেছে, ট্রাম্পের একাধিকবার চেষ্টা সত্ত্বেও মোদি ফোনে কথা বলেননি। বিষয়টি তার রাগের বহিঃপ্রকাশ ও কৌশলগত সতর্কতা উভয়ই প্রমাণ করে।
এর একটি কারণও ব্যাখ্যা করেছে এফএজেড। তারা জানিয়েছে, এক ফোন কলেই ট্রাম্প ভিয়েতনামের সঙ্গে বছরের পর বছর ধরে করা একটি বাণিজ্য চুক্তিকে পাল্টে দেন এবং ঘোষণা করেন যে সমঝোতা হয়েছে—যদিও বাস্তবে এমনটি ঘটেনি। মোদি এমন পরিস্থিতিতে পড়তে চাননি।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক ইন্ডিয়া-চায়না ইনস্টিটিউটের সহ-পরিচালক মার্ক ফ্রেজিয়ার বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল ব্যর্থ হচ্ছে। ভারত কখনোই চীনের বিপক্ষে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেয়নি।’
একইসঙ্গে এফএজেড জানিয়েছে, ভারতে ট্রাম্প পরিবারের রিয়েল এস্টেট প্রকল্পগুলো নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। দিল্লির কাছে তাদের নাম ব্যবহার করে নির্মিত বিলাসবহুল টাওয়ারে কোটি কোটি টাকার ফ্ল্যাট একদিনেই বিক্রি হয়ে যায়।
এছাড়া, ভারত-পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সামরিক সংঘাত নিয়ে ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, তার মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি হয়েছে। কিন্তু ভারত তা প্রত্যাখ্যান করে।
পত্রিকাটি জানায়, ট্রাম্প পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে হোয়াইট হাউসে নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানানোর ঘটনাও ভারতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছিল।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, সর্বশেষ ১৭ জুন মোদি ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। এরপর থেকে দুই নেতার মধ্যে আর কোনো আলাপ হয়নি।
নয়াদিল্লি বারবার পরিষ্কার করে বলেছে, ভারত কখনোই যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনায় বসবে না। প্রধানমন্ত্রী মোদি সোজাসাপ্টা জানিয়ে দিয়েছেন, ‘ভারত কোনো পরিস্থিতিতেই তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা মেনে নেবে না।’