ইরানের আকাশসীমা বন্ধ থাকার মধ্যেও দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি রাজনৈতিক প্রতিনিধি দলের সদস্যদের সঙ্গে জেনেভায় সফর করেছেন। সেখানে তিনি তিনটি ইউরোপীয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক উচ্চ প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
ইসরায়েলি হামলা এবং ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা শুরুর পর এই প্রথমবারের মতো আরাঘচির দেশের বাইরে যাওয়ার ঘটনা। তবে কীভাবে তিনি আকাশসীমা বন্ধ থাকা অবস্থায় ইরান ত্যাগ করলেন এ নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়নি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, এ রকম পরিস্থিতিতে তার এই বিদেশ সফর সম্ভব হলো কীভাবে?
ইরানের আকাশসীমা বন্ধের সিদ্ধান্ত মূলত সামরিক ও রাজনৈতিক মহলের অভ্যন্তরীণ একটি সিদ্ধান্ত, যা বাস্তবায়নের জন্য দেশটির বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।
যদিও সাধারণ বাণিজ্যিক ফ্লাইটের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বিশেষ প্রয়োজন ও পরিস্থিতির ভিত্তিতে আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়। যেমন ট্রানজিট, জরুরি অবতরণ, নির্দিষ্ট ওভারফ্লাইট বা রাষ্ট্রীয় মিশনের ক্ষেত্রে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাধারণত ইরানের ইসলামি প্রজাতন্ত্রের মালিকানাধীন বিশেষ সরকারি বিমান ব্যবহার করেন, যা সাধারণ বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ হিসেবে গণ্য হয় না। তাদের বিদেশ সফরের সময় এমনকি যুদ্ধাবস্থাতেও জরুরি ভিত্তিতে নির্দিষ্ট বিমান করিডোর খুলে দেওয়া হয়ে থাকে। একই পদ্ধতি ব্যবহার করে বিদেশি নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সম্ভবত এমন একটি বিমানপথ নির্ধারণ করা হয়েছিল, যাতে মন্ত্রীর বিমানটি ইরানের আকাশসীমায় যত কম সময় থাকতে হয় এবং দ্রুত ‘উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ’ অঞ্চল এড়িয়ে আন্তর্জাতিক আকাশসীমায় পৌঁছে যায়।
এ ধরনের সফরের আগে বিমানটিকে ইরানের যুদ্ধবিমান দিয়ে সুরক্ষা দেওয়া হয়ে থাকতে পারে। এমনটি পুরোপুরি অস্বাভাবিক নয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, গত বছর ইরান-ইসরায়েল সামরিক উত্তেজনার সময় রাষ্ট্রপতি মাসুদ পেজেশকিয়ান কাতার সফরে গেলে তাঁর বিমানকে যুদ্ধবিমান দিয়ে পাহারা দেওয়া হয়েছিল।
অবশ্য, যদি আকাশপথ ব্যবহার করা একেবারে অনিরাপদ মনে হতো, তাহলে বিকল্প হিসেবে স্থলসীমান্ত পেরিয়ে কোনো প্রতিবেশী দেশে প্রবেশ করে সেখান থেকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক ফ্লাইটে গন্তব্যের দিকে যাত্রা করার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
এ কথা সত্য যে, সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যাঁকে এমন সংকটকালেও সর্বোচ্চ নিরাপত্তার মধ্যে রাখতে হয় এবং যেকোনো সামরিক কিংবা শারীরিক ঝুঁকি থেকে মুক্ত রাখা হয়।
আপনার মতামত লিখুন :