সম্প্রতি টানা ১২ দিনের যুদ্ধে ‘ইসরায়েল’-এর হামলায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুনর্গঠনের জন্য ইরান দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছে। এর অংশ হিসেবে, তেহরান এখন চীনা নির্মিত এইচকিউ-৯বি দূরপাল্লার ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র (এসএএম) ব্যাটারি হাতে পেয়েছে।
সোমবার (৭ জুলাই) সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই।
গোয়েন্দা তথ্য সম্পর্কে অবগত এক আরব কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আই-কে বলেন, গত ২৪ জুন ইরান ও ‘ইসরায়েলে’র মধ্যে একধরনের অঘোষিত যুদ্ধবিরতির পর চীন এসব ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করেছে। এইচকিউ-৯বি দূরপাল্লার সিস্টেমগুলো ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি, রাডার স্থাপনা এবং কমান্ড কাঠামোকে লক্ষ্য করে তৈরি করেছিল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক আরব কর্মকর্তা বলেন, মার্কিন মিত্র আরব দেশগুলো জানে যে ইরান তাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘শক্তিশালী ও উন্নত’ করার চেষ্টা করছে। এই তথ্য তারা হোয়াইট হাউসকেও জানিয়েছে।
এইচকিউ-৯বি হলো আগের এইচকিউ-৯ সিস্টেমের উন্নত সংস্করণ এবং রাশিয়ার এস-৩০০পিএমইউ১ প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে তৈরি হলেও এতে যুক্ত হয়েছে চীনের নিজস্ব রাডার ও ইলেকট্রনিক্স প্রযুক্তি। এই সিস্টেমে দুই ধাপের একটি শক্ত জ্বালানিচালিত ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, যার সর্বোচ্চ পাল্লা ২৬০ কিলোমিটার এবং সর্বোচ্চ উচ্চতা ২৭ কিলোমিটার পর্যন্ত।
ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রথমে জড় গতিপথে চলে, এরপর মাঝপথে মাটিতে থাকা কন্ট্রোল সিস্টেম থেকে নির্দেশনা পায়, আর শেষ ধাপে এটি সক্রিয় রাডার প্রযুক্তি ব্যবহার করে লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত করে। এই ক্ষেপণাস্ত্র ঘণ্টায় ম্যাচ ৮.২-এর বেশি গতিতে ছুটতে পারে, যা শব্দের চেয়ে চারগুণেরও বেশি দ্রুত।
রাডার সিস্টেমটি ৩৬০ ডিগ্রি এলাকায় নজরদারি করতে পারে এবং একসাথে ১০০টি লক্ষ্য ট্র্যাক করতে পারে। সিস্টেম কনফিগারেশন অনুযায়ী একসঙ্গে ৬ থেকে ৮টি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার সক্ষমতাও আছে। এটি তৈরি করেছে চীনের প্রিসিশন মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশন (সিপিএমআইইসি)।
যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর চীন থেকে ইরান ঠিক কতগুলো সারফেস-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পেয়েছে তা নির্দিষ্ট করে কেউ বলেননি। তবে একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইরান এসব ক্ষেপণাস্ত্রের দাম পরিশোধ করছে তেলের চালানের মাধ্যমে।
চীন বর্তমানে ইরানি তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। মার্কিন জ্বালানি তথ্য প্রশাসনের (ইআইএ) মে মাসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান যে পরিমাণ অপরিশোধিত তেল ও ঘনীভূত তেল রপ্তানি করে তার প্রায় ৯০ শতাংশই যায় চীনে।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও গত কয়েক বছর ধরে চীন নিয়মিত বিপুল পরিমাণে ইরানি তেল আমদানি করে যাচ্ছে। অনেক সময় ইরান এসব তেল মালয়েশিয়া বা অন্য দেশ দিয়ে ট্রান্সশিপমেন্ট (মাঝপথে স্থানান্তর) করে, যেন তেলের প্রকৃত উৎস গোপন রাখা যায়।
দ্বিতীয় আরেক আরব কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আই-কে বলেন, ‘ইরানিরা খুব সৃজনশীলভাবে বাণিজ্য করে।’
এদিকে, সোমবার ‘ইসরায়েলে’র প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে এক বৈঠকে ইরান এবং তার পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে হোয়াইট হাউসের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও প্রতিবেদন প্রকাশের সময় পর্যন্ত তারা কোনও সাড়া পায়নি।
১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে ইরাকের সঙ্গে যুদ্ধ চলাকালীন ইরান উত্তর কোরিয়ার মাধ্যমে চীন থেকে এইচওয়াই-২ সিল্কওয়ার্ম ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র পেয়েছিল। ট্যাঙ্কার যুদ্ধের সময় কুয়েতে আক্রমণ ও মার্কিন পতাকাবাহী তেল ট্যাঙ্কারে আঘাত করার জন্য ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ব্যবহার করেছিল।
২০১০ সালে খবর ছড়িয়েছিল যে ইরান চীন থেকে এইচকিউ-৯ বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র পেয়েছে ইরান।
ইরান সম্ভবত তার আকাশ প্রতিরক্ষায় রাশিয়ার এস-৩০০ সিস্টেম ব্যবহার করবে, যা ক্রুজ ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে পারে এবং পাশাপাশি বিমান ও ড্রোন আঘাত হানতেও সক্ষম। এর সঙ্গে ইরান আরও ব্যবহার করবে পুরনো চীনা সিস্টেম এবং নিজস্ব তৈরি খোরদাদ সিরিজ ও বাভার-৩৭৩ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যাটারি।
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে ‘ইসরায়েল’ পরিচালিত মার্কিন তৈরি এফ-৩৫ স্টিলথ যুদ্ধবিমানকে গুলি করে ভূপাতিত করার সক্ষমতা সীমিত।
এদিকে চীন ইতোমধ্যে পাকিস্তানকে তার এইচকিউ-৯ এবং এইচকিউ-১৬ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিক্রি করেছে। বিভিন্ন প্রতিবেদনে জানা গেছে, মিশরও চীনের এইচকিউ-৯ সিস্টেম হাতে পেয়েছে।