সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে সংঘর্ষ এবং ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের পর আধুনিক যুদ্ধে উচ্চপ্রযুক্তির যুদ্ধবিমান ব্যবহারের অপরিহার্যতা আবারও সামনে আসছে। এই বাস্তবতায় অনেক দেশই এখন ভবিষ্যতের আকাশযুদ্ধের জন্য নতুন প্রজন্মের ফাইটার জেট তৈরির দিকে নজর দিচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে সামরিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে ২০২৩ সালেই যুক্তরাজ্য, জাপান ও ইতালি যৌথভাবে হাতে নেয় গ্লোবাল কমব্যাট এয়ার প্রোগ্রাম (জিসিএপি)-এর মতো উচ্চাভিলাষী সামরিক প্রকল্প, যার লক্ষ্য ২০৩৫ সালের মধ্যে ষষ্ঠ প্রজন্মের স্টিলথ ফাইটার জেট তৈরি করা।
এই যুদ্ধবিমান হবে স্টিলথ প্রযুক্তিসম্পন্ন, অর্থাৎ এমনভাবে ডিজাইন করা, যাতে এটি শত্রুপক্ষের রাডার বা নজরদারি ব্যবস্থার চোখে ধরা না পড়ে। লক্ষ্য একটাই—শত্রুর আকাশসীমায় প্রবেশ করে নির্ভুলভাবে আঘাত হানার ক্ষমতা অর্জন।
বর্তমানে যুক্তরাজ্যের ইউরোফাইটার টাইফুন, ইতালির সামরিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো এবং জাপানের মিতসুবিশি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ এই প্রকল্পে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। তবে সম্প্রতি একটি নতুন মোড় নিতে চলেছে জিসিএপি। এতে অংশীদার হতে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ সৌদি আরব।
জাপান টাইমস এবং দ্য আরব নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সৌদি আরবকে এই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে বর্তমান তিনটি অংশীদার দেশ। তবে চূড়ান্তভাবে যুক্ত হতে হলে সৌদি আরবকে কয়েকটি শর্ত পূরণ করতে হবে।
এর মধ্যে রয়েছে, প্রযুক্তি হস্তান্তর ও ভাগাভাগি বিষয়ে সম্মত হওয়া, প্রকল্পের বর্তমান তিন সদস্য রাষ্ট্রের সম্মতি অর্জন এবং ফাইটার জেট নির্মাণ বিষয়ে পূর্ব অভিজ্ঞতা অর্জন, যা ইউরোফাইটার তৈরির মাধ্যমে অর্জন করা যেতে পারে।
সৌদি আরব এই প্রকল্পে অংশ নিচ্ছে শুধু নিজস্ব প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়াতেই নয়, বরং একটি দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য অর্জন করতে, যা সামরিক প্রযুক্তিতে বিশ্বমানের শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।
এদিকে, মধ্যপ্রাচ্যের আরেকটি দেশও এই অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানটির উন্নয়ন ও উৎপাদনে ভূমিকা রাখতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। যদিও এখনো তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি।
বিশ্লেষকদের মতে, ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান নির্মাণের এই আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা ভবিষ্যতের সামরিক ভারসাম্য ও প্রযুক্তির দিকটি আমূল পাল্টে দিতে পারে। জিসিএপি কেবল একটি প্রতিরক্ষা প্রকল্প নয়, বরং এটি হয়ে উঠছে আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র, যেখানে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো সামরিক কৌশল, প্রতিরক্ষা শিল্প এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক—সবদিক থেকেই লাভবান হতে চায়।