কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা আন্তর্জাতিক চাপের পর ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজার জন্য মানবিক করিডোর স্থাপন ও জাতিসংঘের কনভয় প্রবেশে অনুমতির ঘোষণা দিয়েছে ‘ইসরায়েল’। সংবাদমাধ্যম বিবিসি রোববার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
এর আগে শনিবার এক বিবৃতিতে ‘ইসরায়েলি’ প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, তারা মানবিক সহায়তার জন্য বিমান থেকে ত্রাণসামগ্রী নিক্ষেপ কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার অনুমতি দিচ্ছে।
বিবিসি জানিয়েছে, প্রথম দফায় বিমান থেকে ফেলা হয় সাতটি প্যালেট, যাতে ছিল ময়দা, চিনি ও প্যাকেটজাত খাদ্য—যা সরবরাহ করেছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো।
এই ঘোষণা এমন এক সময় এলো যখন গাজার প্রায় ২০ লাখ মানুষের জন্য খাদ্য ও চিকিৎসার সংকট ক্রমেই তীব্র হচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক চাপ বেড়েছে। একাধিক সংস্থা সতর্ক করছে যে, মাসব্যাপী অবরোধে পুরো অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
আইডিএফ জানিয়েছে, তারা গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তা বাড়াতে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে এবং ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় মানবিক সহায়তা কার্যকর করতে প্রস্তুত।
তবে আইডিএফ অস্বীকার করেছে যে, তারা ইচ্ছাকৃতভাবে গাজায় দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করছে, যদিও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন উৎস থেকে এর বিপরীত চিত্র উঠে এসেছে।
তারা আরও জানিয়েছে, গাজায় একটি পানিশোধন প্ল্যান্টে পুনরায় বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হয়েছে, যা প্রায় ৯ লাখ বাসিন্দাকে পরিষেবা দেবে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স শনিবার রাতে জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি সূত্র নিশ্চিত করেছে যে উত্তর গাজায় মানবিক সহায়তার জন্য বিমান থেকে ত্রাণ নিক্ষেপ কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়েছে।
মার্চের শুরুতে ‘ইসরায়েল’ গাজায় সব ধরনের ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে দেয় এবং মে মাসে কিছু বিধিনিষেধসহ তা পুনরায় শুরু করে।
এর আগে ‘ইসরায়েল’ ও যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) মে মাসের শেষ থেকে গাজায় ত্রাণ সরবরাহ কার্যক্রম শুরু করার পর প্রায় প্রতিদিন খবর আসছে যে সহায়তার জন্য অপেক্ষমাণ ফিলিস্তিনিদের গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। বিবিসিকে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এসব ঘটনার জন্য দায়ী ‘ইসরায়েলি’ বাহিনী।
এরইমধ্যে জাতিসংঘ, বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং ‘ইসরায়েলের’ কিছু মিত্র দেশ গাজায় খাদ্য সংকটের জন্য ‘ইসরায়েলকে’ দায়ী করেছে এবং সহায়তা সরবরাহে পূর্ণ স্বাধীনতার আহ্বান জানিয়েছে।
হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক দিনে অপুষ্টিজনিত কারণে অন্তত ১২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ৮৫ জন শিশু।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানোম গেব্রিয়েসুস এই সংকটকে ‘মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
এদিকে, আইডিএফ তাদের বিবৃতিতে বলেছে, গাজায় খাদ্য বিতরণের দায়িত্ব জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোর। এই সংস্থাগুলোকে নিশ্চিত করতে হবে যাতে এই সাহায্য হামাসের হাতে না পৌঁছায়।
আপনার মতামত লিখুন :