জয়নব আবু হালিব—মাত্র পাঁচ মাস বয়সি এই শিশুটির কী দোষ ছিল, তা কেউ বলতে পারে না। সে জানে না, সংঘাত মানে কী, নির্মমতা মানে কী। শুধু জানে মায়ের কোলেই মিলবে প্রশান্তি, মিটবে ক্ষুধা। কিন্তু সেই ক্ষুধা নিবারণে মায়ের কিছুই করার ছিল না। কারণ, সামনে দখলদার ‘ইসরায়েলি’ বাহিনীর বাধা। আর সেই বাধার মুখে ধীরে ধীরে ক্ষুধায়, অপুষ্টিতে শুকিয়ে কাঠ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে নিষ্পাপ জয়নব।
সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনে রোববার জানানো হয় এই মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর।
প্রতিবেদনে বলা হয়, তীব্র অপুষ্টিতে ভুগে শুক্রবার মায়ের কোলে মৃত্যু হয়েছে ৫ মাস বয়সি জয়নবের। এ ঘটনা বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তৈরি করলেও গাজায় খাদ্য সংকট আরও তীব্র হচ্ছে।
শিশুটির মা ইসরা আবু হালিব সিএনএনকে বলেন, ‘গত তিন মাস ধরে জয়নবকে একাধিকবার হাসপাতালে নিতে হয়েছে। শুক্রবারও আমি তাকে দক্ষিণ গাজার একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলাম। আমি ৩০ মিনিটেরও বেশি পথ হেঁটেছি, কারণ কোনো যানবাহন নেই... দীর্ঘ মাটির রাস্তা, আবহাওয়া ছিল খুব গরম, আমি নিজেও ক্ষুধার্ত ছিলাম, আমার কাছে পানিও ছিল না।’
তিনি আরও বলেন, ‘হঠাৎ আমি অনুভব করলাম, জয়নব নড়াচড়া করছে না, নিশ্বাসও নিচ্ছে না; তার শরীর ভারী হয়ে গেল। আমি আর কিছুই বুঝতে পারছি না…এই বিশ্বের চোখ খোলার জন্য আর কত নিষ্পাপ শিশুকে জয়নবের মতো ক্ষুধায় মরতে হবে?’
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ড. মুনির আল-বুরশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ জানান, জয়নব চরম অপুষ্টিতে মারা গেছে।’ তিনি আরও লেখেন, ‘শিশুটির শরীরের হাড় পর্যন্ত স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল। এ নিয়ে গাজায় পাঁচ বছরের নিচে ২ লাখ ৬০ হাজারের বেশি শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে।’
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানায়, ২০২৩ সালে সংঘাত শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় অপুষ্টিতে ১২২ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ৮৩ জনই শিশু।
এই মৃত্যুর বেশির ভাগই ঘটেছে গত মার্চ মাসের পর থেকে, যখন ‘ইসরায়েল’ গাজায় ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ করে দেয়। যদিও মে মাসের শেষ দিকে কিছুটা ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে সাহায্য সংস্থাগুলোর মতে, সেগুলো গাজার চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল, ফলে অপুষ্টি আরও ছড়িয়ে পড়েছে।