‘ইসরায়েলি’ প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু কর্তৃক গাজা শহরকে হামাসের ‘শেষ ঘাঁটি’ হিসেবে আখ্যায়িত করার পর, সেখানে একটি বড় আকারের স্থল আক্রমণের আশঙ্কায় ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকরা শহর ছেড়ে সরে যেতে শুরু করেছেন।
ইতোমধ্যে গাজার ৭৫ শতাংশ দখলে নিয়েছে আইডিএফ। এমতাবস্থায় গাজার রাফাহ সীমান্ত ক্রসিং পরিদর্শন করলেন মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেলাত্তি।
সোমবার (১৮ আগস্ট) এই গণ-প্রস্থান তীব্রতর হওয়ার পাশাপাশি মিশরের কায়রোতে কাতারি ও ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে যুদ্ধবিরতির জন্য নতুন করে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে, যার লক্ষ্য এই অঞ্চলের মানবিক বিপর্যয় রোধ করা এবং সংঘাতের অবসান ঘটানো।
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শীঘ্রই ‘ইসরায়েলি’ আক্রমণ শুরু হতে পারে এই আশঙ্কায় গাজার পূর্বাঞ্চল থেকে অনেকে পশ্চিমে সরে যাচ্ছেন, কেউ আবার আরও দক্ষিণে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এই সম্ভাব্য সাঁজোয়া অভিযানের ফলে লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে পারে, যাদের অনেকেই চলমান যুদ্ধে এর আগেও একাধিকবার নিজেদের ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
গাজা শহরের ব্যবসায়ী তামের বুরাই এই ভয়াবহ পরিস্থিতি বর্ণনা করে রয়টার্সকে বলেন, ‘গাজার মানুষ এমন এক দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির মতো, যারা মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের অপেক্ষায় আছে। আমি আজ অথবা আগামীকাল আমার বাবা-মা ও পরিবারকে দক্ষিণে সরিয়ে নিচ্ছি, কারণ হঠাৎ আক্রমণ হলে কাউকে হারানোর ঝুঁকি নিতে পারি না।’
‘ইসরায়েলি’ প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজা শহর দখলের ওপর জোর দিচ্ছেন। ‘ইসরায়েলি’ সামরিক বাহিনী সতর্ক করেছে যে, এমন অভিযান বাড়ালে জীবিত জিম্মিদের জীবন ঝুঁকিতে পড়তে পারে। পাশাপাশি সেনারা দীর্ঘস্থায়ী ও রক্তক্ষয়ী গেরিলা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে, কারণ ‘ইসরায়েল’ ইতোমধ্যেই গাজার প্রায় ৭৫ শতাংশ এলাকা দখল করেছে।
এদিকে গাজা শহরের ভেতরে অনেক ফিলিস্তিনি যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভের ডাক দিচ্ছেন। তারা হামাসকে আহ্বান জানাচ্ছেন যেন ‘ইসরায়েলি’ স্থল আক্রমণ এড়াতে আলোচনাকে আরও জোরদার করা হয়, কারণ এই যুদ্ধ অধিকাংশ ভূখণ্ড ধ্বংস করে দিয়েছে এবং ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় ডেকে এনেছে।
এএফপির প্রতিবেদন অনুসারে, সংঘাতপূর্ণ এই পরিস্থিতির মধ্যেই গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা জানিয়েছে, সোমবার সমগ্র ভূখণ্ড জুড়ে ‘ইসরায়েলি’ হামলা ও গোলাবর্ষণে কমপক্ষে ১১ জন নিহত হয়েছেন। এই বিষয়ে মন্তব্যের জন্য ‘ইসরায়েলি’ সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তবে তারা সাড়া দেয়নি।
অন্যদিকে কূটনৈতিক পর্যায়েও তৎপরতা চলছে। আজ সোমবার গাজার রাফাহ সীমান্ত ক্রসিং পরিদর্শনকালে মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেলাত্তি জানান, ‘মিশরের মাটিতে ফিলিস্তিনি ও কাতারি প্রতিনিধিরা আছেন, যারা হত্যা ও অনাহার বন্ধে কাজ করছেন।’
গত সপ্তাহে তিনি জানিয়েছিলেন, কায়রো, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলিত হয়ে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির জন্য মধ্যস্থতার চেষ্টা করা হচ্ছে, যাতে কিছু জিম্মি ও ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি পায় এবং গাজায় মানবিক ও চিকিৎসা সহায়তা বাধামুক্ত পৌঁছায়।
তবে গত মাসে কাতারের দোহায় দুই সপ্তাহ ধরে চলা আলোচনা সাফল্য ছাড়াই শেষ হওয়ায় এটি এখনকার আলোচনার জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে আছে।