ফিলিস্তিনের গাজাবাসীর জন্য জীবন রক্ষাকারী ত্রাণসামগ্রী নিয়ে যাওয়া ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ নৌবহরে ‘নিরস্ত্র ও বেসামরিক’ অধিকারকর্মীদের ওপর ইসরায়েলের ‘ভীতি প্রদর্শন ও বলপ্রয়োগের’ ঘটনায় ‘কঠোর ভাষায়’ নিন্দা জানিয়েছেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা। গত ৩১ জুলাই ত্রাণ নিয়ে গাজার উদ্দেশ্যে রওনা দেয় জিএসএফের নৌবহর। এতে কমপক্ষে ৪৪ দেশের ৫০০ নাগরিক রয়েছেন। বুধবার (০১ অক্টোবর) গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার মুখপাত্র সাইফ আবুকেশেক ইনস্টাগ্রামে প্রকাশিত একটি পোস্টে বলেছেন, ইসরায়েলি বাহিনী এরই মধ্যে সমুদ্রে ১৩টি নৌকা আটক করেছে এবং ওই নৌকাগুলোতে ৩৭টি দেশের ২০১ জনেরও বেশি মানুষ ছিলেন। এ ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তুরস্ক, মালয়েশিয়া, কলম্বো, ইতালি, গ্রীস, বেলজিয়াম, আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র।
মালয়েশিয়া
প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, মানবিক একটি অভিযানকে আটকে দিয়ে ইসরায়েল কেবল ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারের প্রতি নয়; বরং বিশ্ববিবেকের প্রতিও চরম অবজ্ঞা দেখিয়েছে। এ নৌবহর অবরুদ্ধ থাকা মানুষদের সংহতি, সহানুভূতি ও ত্রাণের প্রত্যাশার প্রতীক। আনোয়ার ইব্রাহিম সতর্ক করে দিয়ে লিখেন, ইসরায়েলের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে, বিশেষ করে মালয়েশিয়ার নাগরিকদের বিষয়ে সম্ভাব্য সব ‘বৈধ ও আইনানুগ উপায়’ প্রয়োগ করবে মালয়েশিয়া।
কলম্বিয়া
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা নৌবহরে থাকা দুজন কলম্বিয়ার নাগরিকসহ অধিকারকর্মীদের আটক করার ঘটনায় নিজ দেশ থেকে ইসরায়েলি কূটনৈতিক প্রতিনিধিদলকে বহিষ্কার করেছেন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো।
এক্সে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট লেখেন, বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর (ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী) ‘নতুন আন্তর্জাতিক অপরাধের’ প্রতিক্রিয়ায় কলম্বিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি ‘অবিলম্বে বাতিল’ করা হবে।
ভেনিজুয়েলা
সমালোচনা করেছে ভেনিজুয়েলাও। টেলিগ্রাম অ্যাপে পোস্ট করা বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউভান গিল বলেন, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ‘একটি বেসামরিক ও শান্তিপূর্ণ অভিযানে আক্রমণ করেছে। অভিযানের একমাত্র উদ্দেশ্য ক্ষুধা আর নির্মূলের শিকার ফিলিস্তিনি জনগণের কাছে ৫ হাজার ৫০০ টন মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক জলসীমায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর নৌকায় করে নৌবহরে ওঠার ঘটনায় ইহুদিবাদী সরকারের অপরাধমূলক স্বভাব আবারও উন্মোচিত করেছে।
তুরস্ক
গাজা অভিমুখী নৌবহরে ইসরায়েলি বাহিনীর বাধা দেওয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দেশটির সরকারি সংবাদ সংস্থা আনাদোলু জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক জলসীমায় বেসামরিক জাহাজের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের জীবনকে বিপন্ন করে তুলেছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করা বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে এ আক্রমণ প্রমাণ করে, গণহত্যাকারী নেতানিয়াহু সরকারের ফ্যাসিবাদী ও সামরিক নীতি, যারা গাজাকে দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দিয়েছে; এখন আর কেবল ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।
আয়ারল্যান্ড
এ বিষয়ে আয়ারল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টে বলেন, আজ রাতের প্রতিবেদনগুলো খুব উদ্বেগজনক। এটি একটি ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের ওপর আলোকপাত করার জন্য একটি শান্তিপূর্ণ অভিযান।
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা সমুদ্রপথে গাজায় ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার একটি বৈশ্বিক প্রচেষ্টা। এই নৌবহরে রয়েছে ৪০টির বেশি বেসামরিক নৌযান। এ বহরে প্রায় ৪৪টি দেশের ৫০০ মানুষের মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়ামসহ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের নির্বাচিত প্রতিনিধি, আইনজীবী, অধিকারকর্মী, চিকিৎসক ও সাংবাদিক।
আটকের ঘটনার পরও গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ বহরে থাকা নৌযানগুলো বাধার পরও গাজা অভিমুখে ভূমধ্যসাগরে ভেসে চলেছে।
জাতিসংঘ
এ ঘটনায় জাতিসংঘ আনুষ্ঠানিকভাবে বিবৃতি না দিলেও সংস্থাটির ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড বিষয়ক বিশেষ দূত ফ্রান্সেস্কা আলবানিজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে বলেন, বিশ্বের সাধারণ নাগরিকরা ছোট ও সীমিত সামর্থ্যের নৌযানে করে গাজা উপকূল থেকে মাত্র ৬০ নটিক্যাল মাইল (১১১ কিমি) দূরত্ব পর্যন্ত পৌঁছাতে পারছে। তাহলে আধুনিক ও সুসজ্জিত নৌবহর থাকা রাষ্ট্রগুলো কেন সহজেই ইসরায়েলের অবরোধ ভাঙতে পারছে না?
গাজামুখী গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা অভিযানে সমর্থন জানিয়ে আলবানিজ লিখেছেন, ‘চলো ফ্লোটিলা, নিরাপদে যাত্রা করো। ঈশ্বরের বাতাস তোমাদের সঙ্গী হোক।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন