ফিলিস্তিনের গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে ইসরায়েল অন্তত দুই লাখ টন বিস্ফোরক ফেলেছে, যা জাপানের হিরোশিমায় ফেলা পারমাণবিক বোমার ছয় গুণ শক্তির বিস্ফোরকের সমান। তবে সব বিস্ফোরক কাজ করেনি। অন্তত ৭০ হাজার টন বোমা ও মাইন অবিস্ফোরিত থেকে গেছে গাজার মাটিতে। এই অবস্থায় বাসিন্দারা রয়েছেন ভয়াবহ ঝুঁকিতে। বিস্ফোরণে যে কোনো সময় ঘটতে পারে প্রাণহানি। তাছাড়া এই ঝুঁকি বছরের পর বছর থেকে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
গাজায় গত ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর হ্যান্ডিক্যাপ ইন্টারন্যাশনাল সতর্ক করে জানায়, বাস্তুচ্যুত বাসিন্দাদের বাড়ি ফিরে যাওয়া কিংবা তাদের চলাফেরার জন্য ধ্বংসস্তূপে থাকা অবিস্ফোরিত বোমা ব্যাপক ঝুঁকি তৈরি করেছে। মাইন অপসারণের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পাঠাতে সংস্থাটি আহ্বান জানিয়েছে।
হ্যান্ডিক্যাপ ইন্টারন্যাশনাল মাইন অপসারণ ও মাইনের শিকার ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করে। সংস্থাটির পরিচালক অ্যান-ক্লেয়ার ইয়ায়েশ বলেন, এটা গাজাবাসীর জন্য ব্যাপক ঝুঁকি তৈরি করেছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে আনুমানিক দুই লাখ টন বিস্ফোরক ফেলা হয়। ধ্বংসস্তূপের বিভিন্ন স্তরে জমে থাকা বিস্ফোরক পদার্থের মাত্রা অত্যন্ত বেশি। ইয়ায়েশ সতর্ক করে বলেন, এসব বিস্ফোরক ঘনবসতিপূর্ণ নগর এলাকায় অত্যন্ত জটিল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
এর আগে জানুয়ারিতে জাতিসংঘের মাইন অ্যাকশন সার্ভিস (ইউএনএমএএস) জানিয়েছিল, গাজায় ছোড়া বোমা ও পেতে রাখা মাইনের অন্তত ৫ থেকে ১০ শতাংশ বিস্ফোরিত হয়নি। সংস্থাটি জানায়, গত দুই বছর ধরে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকায় তাদের টিম গাজায় বড় ও বিস্তারিত জরিপ পরিচালনা করতে পারেনি। তাই বিস্ফোরকের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।
হ্যান্ডিক্যাপ ইন্টারন্যাশনালের জন্য গাজায় কাজ করেছেন সাবেক ব্রিটিশ সামরিক ডিমাইনার নিকোলাস অর। তিনি বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেন, গাজায় বোমা নিষ্ক্রিয়করণ পরিচালনার অনুমতি পাওয়া যায়নি। কারণ, ইসরায়েলি নজরদারি বিমান অবিস্ফোরিত অস্ত্র উদ্ধারকে হামাসের কার্যক্রম উল্লেখ করে হামলা চালাতে পারে। কারণ, হামাস অবিস্ফোরিত বোমা বা মাইন সংগ্রহ করে নতুন অস্ত্র তৈরি করে থাকে।
জাতিসংঘের মানবিকবিষয়ক সমন্বয় অফিস জানিয়েছে, মানবিককর্মীরা বিস্ফোরক ঝুঁকিতে আছেন– এমন সড়কগুলো পর্যবেক্ষণ করবে। অবিস্ফোরিত অস্ত্র ধ্বংসে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আনার জন্য এখনও তারা ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমোদন পায়নি। এই মুহূর্তে অন্তত তিনটি সাঁজোয়া যান এই কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
ছয়টি পারমাণবিক বোমার সমান বিস্ফোরক
গাজায় দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে হামলা অব্যাহত রাখে ইসরায়েলি দখলদার সেনাবাহিনী। তারা ব্যাপক বোমা বিস্ফোরণ করেছে আকাশ থেকে। স্থল অভিযানেও পাতা হয় বহু মাইন। স্থল ও আকাশ থেকে ছোড়া সব ধরনের অস্ত্র, ক্ষেপণাস্ত্র ও বিস্ফোরক ডিভাইস মিলে বিস্ফোরকের পরিমাণ আনুমানিক মোট দুই লাখ টন হবে। ব্র্যাডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি অধ্যয়নের অধ্যাপক পল রজার্স মনে করেন, গাজায় নিক্ষিপ্ত বিস্ফোরকে যে শক্তি রয়েছে, তা জাপানের হিরোশিমায় আঘাত হানা পারমাণবিক বোমার মোট শক্তির ছয় গুণ হতে পারে।
হিরোশিমায় নিক্ষেপ করা যুক্তরাষ্ট্রের বোমাটির ওজন ছিল প্রায় চার টন। এটি ১৩ বর্গকিলোমিটার এলাকা ধ্বংস করেছিল। তাৎক্ষণিকভাবে এবং পরবর্তী কয়েক মাসে এক লাখ ৮০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছিলেন। আর গাজায় বিস্ফোরক ফেলা হয়েছে বিশাল এলাকাজুড়ে। গাজার আয়তন ৩৬৫ বর্গকিলোমিটার। অবিরাম ও ক্রমাগত বিস্ফোরক নিক্ষেপ হয়েছে গাজায়। এতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটেছে। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে বহু মানুষ আটকা পড়েছে। শুধু বিস্ফোরকের ধ্বংসযজ্ঞ নয়, গাজায় মানবিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ধ্বংসের মাত্রা আরও বেশি। যার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপর পড়বে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন