ঢাকা রবিবার, ০৮ জুন, ২০২৫

ভারতের সঙ্গে বৈরিতা, বৈশ্বিক ‘হস্তক্ষেপ’ চায় পাকিস্তান

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ৮, ২০২৫, ০৬:১১ পিএম
যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে ওয়াশিংটনে একটি গ্রুপ ছবিতে পিপিপি চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির নেতৃত্বাধীন উচ্চপর্যায়ের পাকিস্তানি প্রতিনিধিদল। ছবি-সংগৃহীত

ভারতের সঙ্গে চলমান উত্তেজনা ও বিরোধের প্রেক্ষিতে বিশ্বশক্তিগুলোর ‘হস্তক্ষেপ’ চেয়েছে পাকিস্তান। বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের কূটনৈতিক দল রোববার (৮ জুন) লন্ডনে পৌঁছে এই অবস্থান তুলে ধরে।

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

এর আগে জুন মাসের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তান একটি বিস্তৃত কূটনৈতিক প্রচারাভিযান শুরু করে। উদ্দেশ্য ছিল ভারত-পাকিস্তান সাম্প্রতিক দ্বন্দ্ব বিষয়ে পাকিস্তানের দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করা এবং দিল্লির ক্রমবর্ধমান লবিং কার্যক্রমের পাল্টা ব্যাখ্যা দেওয়া।

দলের সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি, হিনা রব্বানি খার ও খুররম দস্তগীর; সিনেটর শেরি রহমান, মুসাদিক মালিক, ফয়সাল সুবজওয়ারি ও বুশরা আনজুম বাট; সঙ্গে আছেন প্রবীণ কূটনীতিক জলিল আব্বাস জিলানি ও তেহমিনা জানজুয়া।

‘যুদ্ধ অনিবার্য হতে পারে’

যুক্তরাজ্যে পৌঁছে জিও নিউজকে দেওয়া বক্তব্যে খুররম দস্তগীর বলেন, ‘আমরা আমেরিকানদের বোঝাতে চেয়েছি যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সাময়িক যুদ্ধবিরতি আনলেও মূল সংকট নিরসনের জন্য আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ দরকার। আমাদের মিশন ছিল সেটাই তুলে ধরা।’

তিনি হুঁশিয়ারি দেন, ‘যদি ভারত আলোচনায় না আসে, যদি তারা বলে যে প্রমাণ ছাড়াই যুদ্ধ চালাবে, তাহলে উপমহাদেশে যুদ্ধ অনিবার্য।’

সুবজওয়ারি বলেন, ‘আমরা চাই বিশ্বশক্তিগুলো ভারতের প্রতি বার্তা দিক যে পারমাণবিক অস্ত্রধারী প্রতিবেশীদের মধ্যে এভাবে উত্তেজনা চলতে পারে না। এটা কেবল উপমহাদেশ নয়, বিশ্বশান্তির জন্যও বিপজ্জনক।’

‘জলকে অস্ত্র বানানো চলবে না’

সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত শেরি রহমান জানান, তাদের বৈঠকগুলো ইতিবাচক হয়েছে। তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের বক্তব্য ও ঝুঁকিগুলো বুঝেছেন। সবাই একমত হয়েছেন, পানি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া খুবই বিপজ্জনক।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ভারতকে কালিমালিপ্ত করতে যাইনি, বরং পাকিস্তানের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছি।’

তিনি জম্মু-কাশ্মীরকে ‘গাজা-পরবর্তী সবচেয়ে বড় খোলা কারাগার’ বলেও অভিহিত করেন।

সিনেটর বুশরা বাট বলেন, ‘সিন্ধু পানি চুক্তিকে অবজ্ঞা করা হলে ভবিষ্যতে আর কোনো আন্তর্জাতিক চুক্তিই টিকবে না।’ কাশ্মীর ও পানির বিষয়টি তুলে ধরা নিয়ে নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটনের প্রতিক্রিয়াকে তিনি ‘দারুণ’ বলে অভিহিত করেন।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জলিল আব্বাস জিলানি বলেন, ‘আমাদের বার্তা ছিল— ভারত আগ্রাসন করেছে, কিন্তু পাকিস্তান শান্তিপ্রিয় দেশ। আমরা শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই।’

কূটনৈতিক প্রতিযোগিতায় ভারতও পিছিয়ে নেই

পাকিস্তানের এই কূটনৈতিক প্রচারণার পাল্টা হিসেবে ভারতও সাতটি সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার দেশ ও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কাছে। যুক্তরাষ্ট্রে তারা ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, সেনেটর ডেভ ম্যাককর্মিক, জিম রিশ, মার্ক ওয়ার্নারসহ প্রভাবশালী রাজনীতিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে।

ভারতীয় প্রতিনিধি দলে রয়েছেন শশী থারুর (কংগ্রেস), তেজস্বী সূর্যা ও ভূবনেশ্বর কালিতা (বিজেপি), মিলিন্দ দেওরা (শিবসেনা), শরফরাজ আহমেদ (ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা), শশাঙ্ক মণি ত্রিপাঠী এবং সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত তারণজিৎ সিং সান্ধু প্রমুখ।