ব্রাজিলের বেলেমে অনুষ্ঠিত কপ-৩০ সম্মেলনের সামনে আবারও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবারের বিক্ষোভ র্যালিতে বেলেম শহরের সাড়ে চার কিলোমিটার সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রতিবাদকারীরা। এতে দেশটির আদিবাসীদের পাশাপাশি যোগ দেয় নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। বিক্ষোভের আয়োজকেরা একে ‘গ্রেট পিপলস মার্চ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
বিক্ষোভে অংশ নিয়ে তুগা সিন্তিয়া বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা এখানে জীবাশ্ম জ্বালানির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া আয়োজন করেছি।’ ব্রাজিলের ফেডারেল ইউনিভার্সিটি অব প্যারার থিয়েটার গ্রুপ হাইড্রা ড্যান্স থেকে তিনি বিক্ষোভে শামিল হয়েছেন।
তুগা আরও বলেন, ‘আমি এখানে এসেছি, কারণ, কপ সম্মেলন ও তাদের তত্ত্বের জন্য যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়েছে। এখন আমাদের আসলে কাজ করার সময় এসেছে।’
সামোয়ার জলবায়ুকর্মী ব্রায়ানা ফ্রুয়েনও শনিবারের বিক্ষোভে অংশ নেন। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘এখনো জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতির সম্মুখসারিতে অবস্থান করে বেঁচে থাকার অভিজ্ঞতা কেমন, তা আমরা খুব ভালো করেই জানি।’
ব্রাজিলের বসবাসকারী ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘৩৫০’ থেকে আসা ইলান বলেন, ‘আমরা এখানে ন্যায়বিচারের জন্য, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধের দাবিতে মিছিল করছি।’
১০ নভেম্বর থেকে ২১ নভেম্বর ১২ দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবারের কপ-৩০ সম্মেলন। ৬ দিন পেরিয়ে গেলেও অংশগ্রহণকারী দেশগুলো চূড়ান্ত চুক্তির বিষয়ে একমত হতে পারেনি। এমনকি কোন কোন বিষয়ে একমত হওয়া যেতে পারে, সেটা নিয়েও তীব্র মতবিরোধে জড়িয়ে পড়েছে। সম্মেলন শেষে সবার মতৈক্যে কোনো চুক্তি আদৌ সম্ভব কি না, তা নিয়েও সন্দেহ রয়ে গেছে।
সম্মেলনের শুরুর দিকে গত সপ্তাহে বেলেম শহরে দুটি বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। এসব বিক্ষোভে নিজেদের নানা দাবি দাওয়া সম্বলিত ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে হাজির হন অংশগ্রহণকারীরা। এবারের বিক্ষোবে মুহুর্মুহু স্লোগান চলে—‘আমাজনকে মুক্ত করুন।’ এ সময় বিক্ষোভকারীরা তিনটি বিশালাকার কফিন বহন করেন। একটির ওপর লেখা ছিল তেল। অন্য দুটির ওপর যথাক্রমে কয়লা ও গ্যাস। ভয়ংকর দেখতে দুজন কফিন বহন করেন।
কপ-৩০ সম্মেলনের আয়োজক ব্রাজিল ২০৩৫ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী টেকসই জ্বালানির ব্যবহার চার গুণ বাড়ানোর জন্য দেশগুলোর প্রতি চাপ দিচ্ছে। এই টেকসই জ্বালানির মধ্যে রয়েছে বায়োফুয়েল, হাইড্রোজেন ও বায়োগ্যাস। তবে পরিবেশবিদেরা সতর্ক করছেন, ফসল থেকে জ্বালানি তৈরি করলে খাদ্যনিরাপত্তা ও প্রকৃতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
২০২১ সালে গ্লাসগোতে কপ-২৬ পর এবারই প্রথম জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনস্থলের বাইরে জলবায়ুকর্মীদের বিক্ষোভের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ তিনটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল মিশর , সংযুক্ত আরব আমিরাত ও আজারবাইজানে। এসব দেশে বিক্ষোভের অনুমতি না থাকায় শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছিল কপ সম্মেলন।

