শান্তি অর্জনের জন্য ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।
রোববার (১৫ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
বার্তাসংস্থাটিকে হোয়াইট হাউসের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, তেহরান যদি পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি বন্ধে প্রস্তুত হয়, তবে এখনো শান্তিপূর্ণ সমাধানের সুযোগ রয়েছে।
সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া এক বিবৃতিতে ওই মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ‘আজ যা ঘটছে তা আর ঠেকানো যাবে না। কিন্তু আমরা এখনো একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছানোর সম্ভাবনা ধরে রাখছি । যদি ইরান আলোচনায় আগ্রহ দেখায়।’
তিনি বলেন, ‘শান্তি অর্জনের সবচেয়ে দ্রুত পথ হলো ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি পুরোপুরি পরিত্যাগ করা।’
এদিকে, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের অভিযোগে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অভিযোগ অস্বীকার করে ইরান এবং ওমানের মধ্যস্থতায় পাচ দফা বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। শুক্রবার (১৩ জুন) ষষ্ঠ দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও এখন তা নিয়ে এখন অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে।
ইরানে ইসরায়েলি হামলাকে ‘বিপজ্জনক এবং বেপরোয়া উত্তেজনা’ বলে নিন্দা জানিয়েছে ওমান।
ওমান বিবৃতিতে জানায়, ‘এটি অগ্রহণযোগ্য এবং চলমান আগ্রাসী আচরণের প্রতিনিধিত্ব করে যা এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতার ভিত্তিকে ক্ষুণ্ণ করে।’
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আল খামেনি বলেন, দেশটির পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে বাধা দেওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই যুক্তরাষ্ট্রের।
তিনি বলেন, ‘আমরা যখন জানিই যে, তারা এই আলোচনার কোনো মর্যাদা দেবে না, তা হলে আলোচনার অর্থ কী? সুতরাং আলোচনার এই আমন্ত্রণের লক্ষ্য হচ্ছে জনমতকে প্রতারিত করা।’
অপরদিকে, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেছেন, ‘আমাদের নীতি এখনো সর্বোচ্চ চাপ ও সামরিক হুমকির মুখে সরাসরি আলোচনায় না জড়ানো, তবে অতীতের মতো, পরোক্ষ আলোচনা চলতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শীঘ্রই আমাদের নিজস্ব প্রস্তাবিত পরিকল্পনা চূড়ান্ত হওয়ার পরে ওমানের মাধ্যমে অন্য পক্ষের কাছে জমা দেব।
এর আগে, শুক্রবার (১৩ জুন) ইরানের রাজধানী তেহরানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে হামলা চালায় ইসরায়েল। দেশটির সরকারি সংবাদ সংস্থা নূর নিউজের বরাতে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
এদিকে, এক বিবৃতিতে খামেনি বলেন, ইহুদিবাদী সরকার আমাদের প্রিয় দেশের বুকে তার রক্তাক্ত ও কলুষিত হাত বিস্তার করেছে, আবাসিক এলাকায় হামলা চালিয়ে আগের থেকেও স্পষ্টভাবে তার বর্বর স্বভাব প্রকাশ করেছে। এর জন্য তাদের কঠিন শাস্তি ভোগ করতেই হবে।
তিনি বলেন, এই হামলার মাধ্যমে ইহুদিবাদীরা নিজেদের জন্য এক তিক্ত ও যন্ত্রণাদায়ক পরিণতি ডেকে এনেছে এবং তা তাদের ভোগ করতেই হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শত্রুর এই আক্রমণে আমাদের কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানী শহীদ হয়েছেন। তবে ইনশাআল্লাহ, তাদের স্থলাভিষিক্তরা দ্রুতই সেই দায়িত্ব তুলে নিয়ে কাজ শুরু করবেন। ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের সশস্ত্র বাহিনী আল্লাহর ইচ্ছায় ইসরায়েলের মতো শত্রুদের কখনো ছাড় দেবে না।’
এর আগে, ইরানের রাজধানী তেহরানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে হামলা চালায় ইসরায়েল। দেশটির সরকারি সংবাদ সংস্থা নূর নিউজের বরাতে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে বিবিসি বলছে, তেহরানে নতুন করে ইসরায়েলি হামলার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, শহরের ওপর দিয়ে বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনীর গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে।
সংবাদ সংস্থা তাসনিমের খবরে আরও বলা হয়েছে, ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি, ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) সর্বাধিনায়ক মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি এবং ৯ জন পারমাণবিক বিজ্ঞানীও নিহত হয়েছেন।
এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ইরনার প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানীর একটি আবাসিক ভবনে চালানো হামলায় নারী ও শিশুসহ বেশ কয়েকজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
এ ছাড়া ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির উপদেষ্টা আলি শামখানি হামলায় ‘গুরুতর আহত’ হয়েছেন বলে রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম নূর নিউজ জানিয়েছে। তবে খামেনি সুস্থ আছেন, তাকে পরিস্থিতি সম্পর্কে জানানো হয়েছে।
বিভিন্ন ইরানি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র আবুল ফজল শেকারচি বলেছেন, এ হামলার জন্য ‘চরম মূল্য’ দিতে হবে ইসরায়েলকে।
এদিকে, ইরানে হামলা চালানোর পর পাল্টা হামলার শঙ্কায় ইসরায়েলে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। খবর বিবিসির
ইসরায়েল এ হামলাকে ‘রাইজিং লায়ন’ নাম দিয়েছে। ইরানের কমান্ডার এবং ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালানোর পর পাল্টা হামলার আশঙ্কায় রাজ্য জুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
ইসরায়েল জানিয়েছে, তেহেরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা ঠেকাতে দেশটির পারমাণবিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। ইরানের সংবাদমাধ্যম এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ অঞ্চলে ইসরায়েলের হামলা চালানোর বিষয়টি জানানো হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু রেকর্ডকৃত এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘আমরা ইসরায়েলের ইতিহাসের একটি নির্ণায়ক মুহূর্তে আছি।’
তিনি বলেন, ইসরায়েল একটি অভিযানে ইরানের পারমাণবিক বোমা নির্মাণে যুক্ত বিজ্ঞানী, তাদের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি এবং নাতাঞ্জের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে এবং এই অভিযান আরও কয়েক দিন চলবে।
একজন জ্যেষ্ঠ ইরানি কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, দেশের শীর্ষ নেতৃত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা বৈঠক করছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কার্টজ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ইসরায়েল রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইরানের ওপর পূর্ব প্রতিরোধমূলক হামলার পর, ইসরায়েল ও এর বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা অবধারিত।’
এদিকে, ইসরায়েলের হামলা ‘চমৎকার’ ও ‘অত্যন্ত সফল’ বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, আমরা সব জানতাম। আমি ইরানকে অপমান ও ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে চেয়েছিলাম। আমি খুব চেষ্টা করেছি। কারণ, আমি চাইতাম, একটা চুক্তি হোক। আমি ইরানকে ৬০ দিন সময় দিয়েছিলাম, আজ ৬১তম দিন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, আমি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে হামলা পিছিয়ে দিতে বলেছিলাম। আমি চেয়েছি কূটনৈতিকভাবে বিষয়টি (ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া সংকট) সমাধান হোক।
যদিও আলোচনায় ব্যর্থ হলে ইরানকে হামলার হুমকিও দিয়েছিলেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পাশে থাকবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, তিনি ইসরায়েলকে সমর্থন করেন। তবে এ হামলার জেরে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়তে পারে কি না, সে বিষয়ে কিছু বলেননি।
তিনি বলেন, ‘আমরা ইসরায়েলের খুব ঘনিষ্ঠ। আমরা তাদের সবচেয়ে বড় মিত্র,’ ‘দেখা যাক, কী হয়।’
তিনি বলেন, এ হামলা তার কৌশলের অংশ। একদিকে তিনি প্রকাশ্যে সোজাসাপটা কথা বলেন, অন্যদিকে আড়ালে দর-কষাকষি চালিয়ে যান।