ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার হুমকি দিয়েছিল ‘ইসরায়েল’-এর গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ।
সম্প্রতি ইরানের বিরুদ্ধে টানা ১২ দিনের যুদ্ধে তাকে হত্যার পরিকল্পনার কথার জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপরই তার বিরুদ্ধে চটেছেন ইরানিরা।
গাজায় হত্যাযজ্ঞ, ইসলামি প্রজাতন্ত্রে আক্রমণ ও সর্বোচ্চ নেতাকে ‘শেষ করার’ পরিকল্পনায় ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ‘ইসরায়েলি’ প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে হত্যা করা ‘জায়েজ’ বলে ফতোয়া দিয়েছেন দুইজন জ্যেষ্ঠ ইরানি ধর্মগুরু। এই ফতোয়া ইরানে বেশ কয়েকজন ধর্মগুরুর সমর্থন পেয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, এই ফতোয়াকে কেন্দ্র করে অনলাইনে অর্থ সংগ্রহও চলছে।
সোমবার (৭ জুলাই) ইরানের রাষ্ট্র-নিযুক্ত ১০ জন ধর্মীয় নেতা একটি খোলা চিঠি প্রকাশ করেন। এতে ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুকে ‘কাফের যোদ্ধা’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ইরান ইন্টারন্যাশনাল।
এ ছাড়া ইরানের পশ্চিম আজারবাইজান প্রদেশের এক সরকারি ধর্মযাজক আজেরি ভাষায় দেওয়া এক বক্তব্যে ঘোষণা করেন, যদি কেউ ট্রাম্পকে হত্যা করতে পারে, তাকে ১০০ বিলিয়ন তোমান (প্রায় ১ দশমিক ১৪ মিলিয়ন ডলার) পুরস্কার দেওয়া হবে।
পশ্চিম আজারবাইজান প্রদেশের সরকারি ইসলামিক প্রচার সংস্থার প্রধান মনসুর ইমামি এক চাঞ্চল্যকর ঘোষণায় বলেন, ‘যদি কেউ ট্রাম্পের মাথা এনে দেয়, তাহলে তাকে আমরা ১০০ বিলিয়ন তোমান (প্রায় ১ দশমিক ১৪ মিলিয়ন ডলার) পুরস্কার দেবো।’
এদিকে, ইরানের একটি ওয়েবসাইট থারডটআইআর-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তারা ট্রাম্পকে হত্যার জন্য প্রকাশ্যে তহবিল সংগ্রহ করছে। সাইটটিতে সম্প্রতি দেখা গেছে, এতে ২১ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি অনুদান সংগ্রহ করা হয়েছে। ওই ওয়েবসাইট অনুসারে, ২ কোট ১৮ লাখ ৭৮ হাজার ৫২৫ ডলার সংগ্রহ হয়েছে।
ওয়েবসাইটটিতে পারসি, আরবি ও হিব্রু ভাষায় বলা হয়েছে, ‘আমরা শপথ করছি, যারা যোদ্ধাদের ও ইমাম মাহদির (যার আগমন সুগম করতে আমরা শহীদ হই) প্রতিনিধির জীবনকে হুমকির মুখে ফেলা ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে পারবে, তাদের উপযুক্ত পুরস্কার দেওয়া হবে।’
এই ছবির সত্যতা এখনো নিশ্চিতভাবে যাচাই করা যায়নি।
সোমবার টাকার কার্লসনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান স্পষ্ট করেন যে, যেসব ধর্মীয় ফরমান বা ফতোয়া ইদানীং জারি হয়েছে, সেগুলো সরকার বা সর্বোচ্চ নেতার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।
তিনি বলেন, ‘আমার জানা মতে, এসব ফতোয়া ডোনাল্ড ট্রাম্প বা কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়। আর এগুলোর সঙ্গে ইরানি সরকার বা সর্বোচ্চ নেতার কোনো সম্পর্ক নেই।’
তবে এর আগে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতার ঘনিষ্ঠ এক কট্টর ধর্মগুরু আলিরেজা পানাহিয়ান ‘ইসরায়েল’-এর সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে খামেনির জীবনের ওপর হুমকির প্রতিশোধ নিতে মুসলমানদের ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে হত্যার আহ্বান জানান।
পানাহিয়ান সম্প্রতি একটি ধর্মীয় ফতোয়া উদ্ধৃত করে বলেছেন, যারা ইরানের সর্বোচ্চ নেতার বিরুদ্ধে হুমকি দেয়, তারা ‘মোহারেব’ বা ‘আল্লাহর শত্রু’ হিসেবে গণ্য হবে।
এর আগে, শীর্ষ দুই ইরানি ধর্মগুরু আয়াতুল্লাহ নাসের মাকারেম শিরাজি ও আয়াতুল্লাহ হোসেইন নুরি হামেদানি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ‘ইসরায়েল’-এর প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আলাদা ফতোয়া জারি করেন। শিরাজি বলেন, ‘যে-কেউ ইসলামী উম্মাহর নেতাদের হুমকি দেয় এবং সে হুমকি বাস্তবায়নের চেষ্টা করে, সে মোহারেব হিসেবে বিবেচিত হবে।’
সোমবার ইরানের খোরাসান প্রদেশে সর্বোচ্চ নেতার প্রতিনিধি আহমেদ আলমোলহোদা এই ফতোয়াগুলোর সমর্থনে বলেন, ‘যারা খামেনিকে অপমান করে, তারা ধর্মত্যাগী ও আল্লাহর শত্রু। এদের এমনভাবে চিহ্নিত করা ইসলামী প্রজাতন্ত্র ও বিপ্লবকে আরও শক্তিশালী করবে।’
এই প্রসঙ্গে ১৯৮৯ সালের সেই বিখ্যাত ফতোয়ার কথাও মনে করিয়ে দিচ্ছে অনেককে, যখন ইরানের তৎকালীন সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি ব্রিটিশ লেখক সালমান রুশদির বিরুদ্ধে ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস বই লেখার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া জারি করেছিলেন। সেই ঘটনার দীর্ঘদিন পর ২০২২ সালে রুশদির ওপর নিউ ইয়র্কে ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে এবং তিনি এক চোখ হারান।