রবিবার, ১৮ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


স্বপ্না চক্রবর্তী

প্রকাশিত: মে ১৮, ২০২৫, ০৯:০৪ এএম

রূপপুর আওয়ামী লীগের ফ্যান্টাসি প্রকল্প

স্বপ্না চক্রবর্তী

প্রকাশিত: মে ১৮, ২০২৫, ০৯:০৪ এএম

রূপপুর আওয়ামী লীগের ফ্যান্টাসি প্রকল্প

ছবি: সংগৃহীত

গ্রীষ্ম, সেচ মৌসুম, শিল্প খাত সব মিলিয়ে দেশে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ১৮ হাজার মেগাওয়াটের বেশি এখন পর্যন্ত হয়নি। কিন্তু দীর্ঘদিন থেকেই দেশীয় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা ৩০ হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি। চাহিদা না থাকা অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্রকেই বসিয়ে বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে ক্যাপাসিটি চার্জ।

তারপরও বিগত আওয়ামী লীগ সরকার নেয় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো বিশাল বড় প্রকল্প। ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পে রাশিয়ার অর্থায়ন রয়েছে ৯৩ হাজার কোটি টাকা। বাকিটা বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে পরিশোধ করার কথা। কিন্তু গোড়ায় গলদ প্রবাদটি সত্য হয়ে উঠেছে প্রকল্পটিতে। 

এই এক প্রকল্প থেকেই বিগত আওয়ামী লীগ সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার পরিবার আত্মসাৎ করেছে ৫৯ হাজার কোটি টাকা (গত বছরের ডলারের দামের হিসাবে)। শুধু নিজেদের আখের গোছাতেই চাহিদা না থাকা সত্ত্বেও প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে তোড়জোড় করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই এ প্রকল্পকে আওয়ামী লীগ সরকারের ‘ফ্যান্টাসি প্রকল্প’ হিসেবে মন্তব্য করছেন বিশেষজ্ঞরা। 

শেখ হাসিনা পরিবারের হাজার কোটি টাকা লোপাটের প্রকল্প : 

১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট করে কেন্দ্রটির দুটি ইউনিটের সক্ষমতা মোট ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর রূপপুর প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের কংক্রিট ঢালাইয়ের মধ্য দিয়ে রূপপুর প্রকল্পের মূল পর্যায়ের কাজ শুরু করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরবর্তী বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালের ১৪ জুলাই প্রকল্পের দ্বিতীয় ইউনিটের কংক্রিট ঢালাই উদ্বোধন করা হয়। তখন থেকেই দেশের বিদ্যুৎ খাতের আমূল পরিবর্তন আনবে প্রকল্পটি বলে ‘ফ্যান্টাসি’ তৈরি করা হয় সরকারের পক্ষ থেকে। যার কারণ গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর সামনে আসে। ওই বছরেরই ১৮ আগস্ট আন্তর্জাতিক একটি ওয়েবসাইট গ্লোবাল ডিফেন্স কর্পে বলা হয়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৫০০ কোটি ডলারের বেশি আত্মসাৎ করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা রোসাটম মালয়েশিয়ার একটি ব্যাংকের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে এ অর্থ আত্মসাতের সুযোগ করে দেয়। যাতে মধ্যস্থতা করেন ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিক। এতে বলা হয়, রাশিয়ার সহযোগিতায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণে খরচ ধরা হয় এক হাজার ২৬৫ কোটি ডলার। প্রয়োজনের তুলনায় যা অনেক বেশি। যাতে মালয়েশিয়ার একটি ব্যাংকের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে এই বাজেট থেকে ৫০০ কোটি ডলার আত্মসাতের সুযোগ করে দেয় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা রোসাটম। নিজের ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিকের মধ্যস্থতায় রাশিয়ার সঙ্গে এ চুক্তি করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর এ মধ্যস্থতার বিনিময়ে পাচার করা অর্থের ৩০ শতাংশ পেয়েছেন টিউলিপ সিদ্দিক, শেখ রেহানা ও পরিবারের কয়েকজন সদস্য। যে অভিযোগের তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। 

এ ব্যাপারে দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে ২০১৩ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে শেখ হাসিনার সাক্ষাতের সময় সঙ্গী ছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক।  সে সময় ঢাকা-মস্কোর বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তির মধ্যস্থতাও করেন তিনি। ২০০৯ সালে ‘প্রচ্ছায়া লিমিটেড’ নামে একটি ভুয়া কোম্পানি চালু করেন টিউলিপ সিদ্দিক, তার মা শেখ রেহানা ও চাচা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক। যুক্তরাষ্ট্রেও জুমানা ইনভেস্টমেন্ট নামে একটি কোম্পানি রয়েছে তাদের। এ কোম্পানির মাধ্যমেই বিভিন্ন দেশের অফশোর অ্যাকাউন্টে অর্থ পাচার করতেন শেখ হাসিনা।

এসব বিষয় নিয়ে আমরা তদন্ত করছি। আমরা প্রমাণ পেয়েছি, এই দুর্নীতিতে জড়িত খোদ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা। এই কেন্দ্রের নামে বিপুল অর্থ লোপাটের অভিযোগে শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার স্বামী শফিক আহমেদ সিদ্দিক, শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা ও শেখ রেহানার দেবর তারিক আহমেদ সিদ্দিকের মালিকানাধীন প্রচ্ছায়া লিমিটেডের ৮ পরিচালকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। আমরা সব অভিযোগের বিষয়েই তদন্ত করছি। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার স্নায়ুযুদ্ধের প্রভাব:

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকার নিজেদের মুনাফা বিবেচনায় তৎকালীন সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা করেই রাশিয়ার সঙ্গে কেন্দ্রটি নির্মাণের প্রকল্পটি হাতে নেয়। কিন্তু ৫ আগস্টের পর দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ বদলে গেছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্তরঙ্গ সম্পর্ক দৃশ্যমান। যদিও প্রকাশ্যে বলা হচ্ছে সব দেশের সঙ্গেই রয়েছে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অন্তর্বর্তী সরকার অনেকটাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুনজরে রয়েছে। এদিকে রাশিয়া-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বন্দ্ব বিশ্বব্যাপী আলোচিত। দুই দেশের ঠাণ্ডা লড়াইয়ে আন্তর্জাতিক বাজারেও মাঝে মাঝে টানাপোড়েন দেখা দেয়। আর এরই প্রভাব পড়ছে এই কেন্দ্রের উদ্বোধনেও বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। 

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, বিগত সরকারের আমলে বিদ্যুৎ খাতে যেসব দুর্নীতির প্রকল্প ছিল, তার মধ্যে অন্যতম রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পটি। রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করে প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও কেন্দ্রটি তৈরির কাজ শুরু করে। এরই মধ্যে এই কেন্দ্র থেকে শেখ হাসিনা পরিবারের ব্যাপক দুর্নীতির তথ্য উঠে এসেছে। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতি ছাড়া কেন্দ্র উৎপাদনে আসতে পারবে বলে মনে হয় না। 

ঋণ পরিশোধে অচলাবস্থা:

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঋণ ও সুদ পরিশোধের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের এসক্রো অ্যাকাউন্টে ৮০৯ মিলিয়ন ডলার জমা হয়েছে। এসক্রো হলো এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে তৃতীয় পক্ষ অস্থায়ীভাবে লেনদেনের অর্থ জমা রাখে। অর্থাৎ লেনদেনের অর্থ ও সম্পদ তৃতীয় পক্ষের অ্যাকাউন্টে জমা রাখা হয়। তারপর চুক্তির সব শর্ত পূরণ হলেই তা সংশ্লিষ্ট পক্ষের কাছে পাঠানো হয়। মূলত ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর পর রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব। 

তাই রাশিয়ার ঋণ ও সুদ পরিশোধের অর্থ বিশেষ অ্যাকাউন্টে (এসক্রো) জমা দেওয়া ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আর কোনো উপায় ছিল না জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে অন্তত দশটি রুশ ব্যাংক সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন (সুইফট) সিস্টেম ব্যবহারে নিষিদ্ধ হয়। সুইফট মূলত মেসেজিং নেটওয়ার্ক সরবরাহ করে, যার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক লেনদেন করা হয়। বাংলাদেশের সুদের পাশাপাশি দশ শতাংশ অগ্রিম পরিশোধের কথা থাকলেও নিষেধাজ্ঞার কারণে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে লেনদেন স্থবির হয়ে আছে। নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে ওই অ্যাকাউন্ট থেকে ঋণ পরিশোধ শুরু হবে। তবে রাশিয়ার চাহিদা অনুযায়ী রুবলে নয়, বরং ডলারেই ঋণ পরিশোধ করা হবে বলেও জানান তিনি।

চুক্তি অনুযায়ী, ২০২৭ সালের ১৫ মার্চ থেকে মূল টাকা পরিশোধ শুরু হবে। তবে সম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই মেয়াদ ২০২৯ সালের ১৫ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ও বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারের অংশীদাররা রাশিয়াকে কীভাবে অর্থ পাঠানো যায় তা নিয়ে আলোচনার জন্য বৈঠক চালিয়ে যাচ্ছে। এখনো চূড়ান্ত হয়নি কোনো কিছু। তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি কীভাবে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা যায়। বিকল্প উপায়ের দিকেও নজর আছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। গত বছর থেকে আমরা অর্থ পরিশোধের জন্য ঝুঁকি ও ঝামেলামুক্ত উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছি। তবে বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। জানা গেছে, চীনের একটি ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছিল রাশিয়া। এই প্রস্তাবের সম্ভাবত্য যাচাই করা হচ্ছে।

অলস সময় পার করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা:

উদ্বোধন না হওয়ায় দিনের পর দিন কেন্দ্রটিতে অলস সময় পার করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এরই জেরে সম্প্রতি কেন্দ্রটির ভেতরে তৈরি হয়েছে অন্তর্কোন্দলও। এক পক্ষ ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করছে। আবার অন্য পক্ষ তার পক্ষে নানান যোগসাজশ করছে। সম্প্রতি এসব কারণে চাকরিও হারিয়েছেন বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী। এমনকি তাদের প্রকল্প এলাকায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া হয়েছে। অব্যাহতিপত্রে বলা হয়েছে, এনপিসিবিএলে তাদের আর প্রয়োজন নেই। ৮ মে থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হলো। তবে সবাই নোটিশ পেমেন্ট বাবদ তিন মাসের বেতন পাবেন। নিরাপত্তার স্বার্থে এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প এলাকায় প্রবেশ ও আবাসিক এলাকা গ্রিনসিটিতে প্রবেশ বন্ধ করা হলো।

তবে চাকরিচ্যুত কর্মকর্তাদের দাবি, ১৮ জন কর্মকর্তার সবাই দক্ষ ছিলেন। তাদের মধ্যে ১২ জন বুয়েট থেকে পাস করা প্রকৌশলী। ১৮ জনই পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিভিন্ন বিষয়ে রাশিয়া থেকে একাধিকবার প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদ করায় তাদের অবৈধভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

সঞ্চালন নিয়ে দুই মন্ত্রণালয়ের পাল্টাপাল্টি অবস্থান:

এদিকে কেন্দ্রটির উদ্বোধন নিয়েও পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিচ্ছে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বারবার বলা হচ্ছিল, গত মার্চ মাসেই উৎপাদনে আসবে দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প হিসেবে চিহ্নিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। এমনকি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রাশিয়ার রোসাটম থেকে খোদ প্রধান উপদেষ্টাকে জানানো হয়েছিল শেষ হয়ে গেছে এটির নির্মাণকাজ। এই কেন্দ্রের নির্মাণের তদারকিতে নিয়োজিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বলছে, সঞ্চালন লাইন প্রস্তুত না হওয়ায় উৎপাদন শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে ভিন্ন কথা। 

তাদের দাবি, ওই কেন্দ্রের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে আনার জন্য সঞ্চালন লাইনের কাজ পুরোপুরি শেষ। বরং বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজই বাকি। আর তাই উদ্বোধন সম্ভব হচ্ছে না। দুই মন্ত্রণালয়ের পাল্টাপাল্টি দোষারোপের কারণেও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এর উদ্বোধন। এত দিন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছিল, কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটের তিনটি সঞ্চালন লাইনের মধ্যে দুটির কাজ শেষ হলেও বাকি একটি লাইনের (রূপপুর-গোপালগঞ্জ) কাজ শেষ হয়নি। ফলে উৎপাদন শুরু করতে পারলেও এর বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হওয়া অনিশ্চিত। যেহেতু এটি পারমাণবিক জ্বালানি (ইউরেনিয়াম) দিয়ে চলবে, তাই একবার চালু হলে আর বন্ধ করা সম্ভব হবে না। তাই যতক্ষণ সঞ্চালন লাইন প্রস্তুত না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত উৎপাদন শুরু করা যাবে না। কিন্তু বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান রূপালী বাংলাদেশের কাছে বলেন, সঞ্চালন লাইন প্রস্তুত। বরং বিদ্যুৎকেন্দ্রটিই উৎপাদনে যেতে প্রস্তুত না হওয়ায় উদ্বোধন হচ্ছে না।

রয়েছে আরও নানান প্রতিবন্ধকতা:

তবে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু করতে শুধু সঞ্চালন লাইনের কাজ শেষ না হওয়াই একমাত্র বড় প্রতিবন্ধকতা নয়। এর সঙ্গে নিরাপত্তাব্যবস্থা, ভৌত অবকাঠামো, টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম এবং কেন্দ্র চালুর জন্য বিকল্প হিসেবে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রস্তুত রাখারও চ্যালেঞ্জ রয়েছে। জানা গেছে, পারমাণবিক কেন্দ্রটি চালাতে হলে বিকল্প হিসেবে অন্তত ১ হাজার ৯০৭ মেগাওয়াট সক্ষমতার গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রস্তুত রাখতে হবে। সম্প্রতি রুশ পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
 
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যে সংকট তৈরি হয়েছে তা কীভাবে কাটিয়ে উঠবে তা নিয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, আমরা আশা করেছিলাম গত বছরের ডিসেম্বরেই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে। কিন্তু যেহেতু একটা গণঅভ্যুত্থান দেশে হয়ে গেছে। তাই কিছুটা স্থবিরতা থাকবে এটা স্বাভাবিক। তবে আমরা বিশ্বাস করি, অন্তর্বর্তী সরকার এই সংকট কাটিয়ে উঠবে এবং শিগগিরই সঞ্চালন লাইনের কাজও শেষ হবে।

Link copied!