বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


স্বপ্না চক্রবর্তী

প্রকাশিত: জুন ১৯, ২০২৫, ০৩:০৪ এএম

করোনার মতোই রূপ বদলাচ্ছে ডেঙ্গু

স্বপ্না চক্রবর্তী

প্রকাশিত: জুন ১৯, ২০২৫, ০৩:০৪ এএম

ছবি-রূপালী বাংলাদেশ

ছবি-রূপালী বাংলাদেশ

২০২০ থেকে ২০২৩ সালের শেষ পর্যন্ত নানান ধরনের ভ্যারিয়েন্টে করোনা ভাইরাস ভুগিয়েছিল দেশবাসীকে। সম্প্রতি আবারও বাড়ছে করোনার সংক্রমণ, তবে ভিন্ন রূপে। করোনার মতোই রূপ পাল্টাচ্ছে ডেঙ্গুও। চিকিৎসকেরা বলছেন, দুই-তিন বছর আগে ডেঙ্গুর যেরকম লক্ষণ দেখা যেত যেমন-১০৪ থেকে ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় জ্বর, র‌্যাশ আসা, চার-পাঁচ দিন পর প্লাটিলেট কমে যাওয়া; সে রকম লক্ষণ এখন দেখা যাচ্ছে না। হঠাৎ করেই জ্বর বা সামান্য জ্বর। দুই-তিন দিনের মধ্যে প্লাটিলেট কমে যাওয়া, রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। সবচেয়ে ভয়ংকর দিক হচ্ছে ডেঙ্গুর সঙ্গে পেটে কিংবা বুকে পানি, হার্টের সমস্যার মতো জটিলতা এবার বেশি হচ্ছে। কিন্তু তবু ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা নিধনে অনেকটাই নির্ভার ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপ মতে, মৌসুম শুরুর আগেই ঢাকার দুই সিটির ১৩টি ওয়ার্ডে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পাওয়া গেছে। জরিপটি করা হয়েছিল গত ফেব্রুয়ারি মাসে, যা বুধবার(১৮ জুন) প্রকাশ করা হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক বাস্তবতায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রতিটি ওয়ার্ডই ঝুঁকিপূর্ণ। শুধু রাজধানী নয়, এডিসের লার্ভার ঘনত্ব বাড়ায় সারা দেশই ঝুঁকিপূর্ণ। সারা দেশেই এবার ডেঙ্গুর বিস্ফোরণের আশঙ্কা রয়েছে। তাই মশা নিধনে লোক দেখানো আড়ম্ভর না করে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ তাদের।

এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা প্রতি বছর তিনটি জরিপ পরিচালনা করত। কিন্তু বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর জরিপগুলো করা হয়নি। বিগত এক বছরে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাত্র একটি জরিপ পরিচালনা করে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর), যা বুধবার (১৮ জুন) প্রকাশ করা হয়। কিন্তু ফেব্রুয়ারির জরিপ জুন মাসে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। 

তাদের দাবি, শীতকালের ওয়াজ গরমকালে করলে যে পরিস্থিতি তৈরি হবে, এই জরিপ সেই পরিস্থিতিই তৈরি করবে। প্রকাশিত ওই জরিপে বলা হয়, ঢাকা নগরীর ১৩টি ওয়ার্ডে এডিস মশার লার্ভার ঝুঁকিপূর্ণ উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ঝুঁকিতে থাকা ওয়ার্ডগুলো হলো- ২, ৮, ১২, ৩৪, ১৩, ২২ নম্বর। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডগুলো হলো-৩, ৪, ২৩, ৩১, ৪১, ৪৬, ৪৭ নম্বর। এসব ওয়ার্ডের মধ্যে রয়েছে কালশী, টোলারবাগ, মনিপুর, পীরেরবাগ, রামপুরা, মেরাদিয়া, বেগমবাজার, ওয়ারী, শাঁখারীনগর লেন, পোস্তগোলা, বাসাবো, লালবাগের আশপাশের এলাকা।

এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপের সূচক ‘ব্রুটো ইনডেক্স’ নামে পরিচিত। সাধারণত এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপের স্বীকৃত পদ্ধতি ‘ব্রুটো ইনডেক্স’-এর মানদণ্ডে লার্ভার ঘনত্ব ২০ শতাংশের বেশি হওয়া মানেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। দুই সিটির ৯৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৩টিতে ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি। এর অর্থ হচ্ছে, এসব এলাকার ১০০টির মধ্যে ২০টির বেশি পাত্রে লার্ভা পাওয়া গেছে। এই এলাকাগুলো ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। উভয় সিটিতেই এডিস মশার লার্ভা সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে বহুতল ভবনে ৫৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এ ছাড়া ১৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ নির্মাণাধীন ভবনে, একক বাড়িতে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ, সেমিপাকা বাড়িতে ৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ এবং ফাঁকা স্থানে ২ দশমিক ৮ শতাংশ। 

কিন্তু শুধু ঢাকা নয়, বরিশালসহ আরও দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় ডেঙ্গুর লার্ভার ঘনত্ব ২০-এর ওপরে পাওয়া গেছে জানিয়ে কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসে কিছুটা শীত শীত ভাব থাকে প্রকৃতিতে। কিন্তু এখন তো ভরা বর্ষা। সারা দেশে বৃষ্টি হচ্ছে প্রতিদিন। এ সময়টায় যদি শীতকালের জরিপ প্রকাশ করা হয়, তাহলে কীভাবে হবে? বতর্মান প্রেক্ষাপটে শুধু ঢাকা নয়, সার দেশই ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে দেশের ১১টি জেলা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে এখনো সর্বোচ্চ সংক্রমণ রাজধানী ঢাকায়। বাকি ১০ জেলা ঢাকার বাইরে। এসব জেলায় গত দুই মাসে চার গুণ রোগী বেড়েছে। বিশেষ করে বরগুনা, বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। 

তিনি বলেন, এ বছর সবচেয়ে বেশি উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে বরিশাল বিভাগ। এ বছর রোগীর ৪৬ শতাংশই এই বিভাগে। অন্যদিকে, জেলার মধ্যে বরিশাল বিভাগের বরগুনায় সর্বোচ্চ সংক্রমণের রেকর্ড হয়েছে। বছরে রোগীর ২৮ শতাংশই এখানকার। এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে আছে রাজধানী। বছরে রোগীর ২৩ শতাংশ এখানে।  এরই মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বরগুনাকে ‘ডেঙ্গু হটস্পট’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। বরগুনাসহ ঢাকার বাইরের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইইডিসিআর রোগতত্ত্ববিদদের নিয়ে সাত সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ দল গঠন করেছে। সেই দল ইতিমধ্যে বরগুনা গেছে। আমরাও নিজেরা একটি দল নিয়ে সেখানে গিয়েছিলাম। সেখানকার মশার ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর ওপরে পেয়েছি বেশির ভাগ এলাকাতেই। উত্তরবঙ্গেরও কিছু কিছু জেলায় আমরা গিয়েছি, যেখানে ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর কাছাকাছি। তাই চলতি বছর যে ডেঙ্গু সংক্রমণের আরেকটা বিস্ফোরণ ঘটতে চলেছে, সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। তাই এখনই এডিস মশা নিধনে কার্যক্রর উদ্যোগ নিতে হবে। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গত মঙ্গলবার পর্যন্ত দেওয়া তথ্যমতে, এ বছর সর্বোচ্চ রোগী পাওয়া গেছে বরগুনায় ১ হাজার ৮৩২ জন, বছরে রোগীর ২৮ শতাংশ। অথচ দুই মাস আগেও এখানে রোগী ছিল মাত্র ১২৮ জন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংক্রমণ রাজধানীতে। এখানে রোগী ১ হাজার ৪৭২ জন, যা বছরে রোগীর ২৩ শতাংশ। এরপর বরিশালে ৫৭৫ জন, পটুয়াখালীতে ৩৭৯, চট্টগ্রামে ৩১২, কুমিল্লায় ২০৪, গাজীপুরে ১৩৭, কক্সবাজারে ১৩৪, মাদারীপুরে ১২৩, পিরোজপুরে ১১৯ ও চাঁদপুরে ১১১ জন রোগী পাওয়া গেছে। এ বছর রোগীর ৮৩ শতাংশ এই ১১ জেলার। বাকি ৪৮ জেলায় ১ হাজার ৬৮ জন রোগী। সর্বোচ্চ রোগী বরিশালে, সর্বনিম্ন সিলেটে। 

বরগুনায় কেন রোগী বেশি জানতে চাইলে বরগুনায় পরিদর্শনে যাওয়া আইইডিসিআর টিমে নেতৃত্ব দেওয়া রোগতত্ত্ববিদ ডা. তারিকুল ইসলাম লিমন রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমরা অনুসন্ধান শুরু করেছি। সিভিল সার্জন, ডিসি, পৌরসভার প্রশাসক, রোগীদের সঙ্গে কথা বলেছি। 

তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখানে মানুষের বৃষ্টির পানি জমানোর একটা প্রবণতা আছে। তারা পানি ধরে রাখে। এখন বৃষ্টি হচ্ছে। বাড়ির আশপাশে প্রচুর পরিষ্কার পানি জমে থাকে। এই পানি এডিস মশার লার্ভার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ। সে কারণে প্রচুর মশা হচ্ছে। আরেকটা মনে হয়েছে, এখানে মশারির ব্যবহারটা সঠিকভাবে হচ্ছে না। বাসার একজনের ডেঙ্গু হয়েছে। রোগীকে সঠিকভাবে মশারির নিচে রাখতে পারেনি। এতে বাসার কয়েকজন করে আক্রান্ত হয়েছে। 

এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, রোগতত্ত্বের কাজগুলো করছি। যেসব রোগী মারা গেছে, তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলব। এপিডোমিওলজি টিম আছে। আমরা মশার নমুনা সংগ্রহ করছি। আশা করছি অনুসন্ধান শেষ হলে প্রকৃত কারণ জানা যাবে।’কিন্তু ঢাকাসহ সারা দেশেই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না থাকায় মশা নিধন কার্যক্রম কার্যত স্থবির। রাজধানীতে লোক দেখানো কিছু আড়ম্ভর থাকলেও অন্যান্য জেলায় তাও নেই।

 রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, উত্তর সিটিতে লোক দেখানো মশা নিধনে কিছুটা তৎপরতা দেখলেও সপ্তাহে এক দিন ফগার মেশিনে মশার ওষুধ ছিটাতে দেখেন না দক্ষিণ সিটির বাসিন্দারা। কিন্তু এসব এলাকাতেই রোগী বেশি। এমন অবস্থা চলতে থাকলে করোনার মতো ডেঙ্গুও ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

রাজধানীতে ঝুঁকিপূর্ণ ১৩ এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করছেন, প্রতি তিন দিন পর পর তো দূরে থাক, সপ্তাহে এক দিনও মশার ওষুধ ছিটাতে দেখেন না কেউ। 

মেরাদিয়ার বাসিন্দা তানভীর আহমেদ বলেন, একদিকে করোনা বাড়ছে, অন্যদিকে ডেঙ্গু। করোনা থেকে না হয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূরে থাকা সম্ভব। কিন্তু ডেঙ্গু থেকে তো নিজে চাইলেও রক্ষা পাওয়া সম্ভব না। কেউ কি ২৪ ঘণ্টা মশারির ভেতরে থাকতে পারে, বলেন? আমার বাসায় না হয় জমানো পানি নেই। কিন্তু যে হারে বৃষ্টি হচ্ছে, আশপাশের যেকোনো বাড়িতে বৃষ্টির পানি জমে এডিসের প্রজনন ঘটতে পারে। এ ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন থেকে যদি মশার ওষুধ ছিটানো না হয়, তাহলে কেউই রক্ষা পাবে না। 

একই অভিযোগ করেন উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দা ফারজানা নীলা। তিনি বলেন, করোনা তো বাইরে গেলে হয়, কিন্তু ডেঙ্গু তো ঘরে বসেও সংক্রমণের শঙ্কা রয়েছে। এর ওপর আবার আমাদের এলাকায় এডিসের লার্ভা বেশি পাওয়া গেছে। টেলিভিশনে প্রতিদিন এসব খবর দেখলে সপ্তাহে এক দিনও সিটি করপোরেশনের ফগার মেশিন চোখে পড়ে না। বরং সংক্রমণ বাড়ার আগে মাঝে মাঝে ধোঁয়া দেখতে পেতাম। এখন তা-ও দেখি না। একই অভিযোগ করেন মগবাজারের নয়াটোলার বাসিন্দা হৃদম রেহমান। তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণের ভয়ে ঘর থেকে বের হতে ভয় হয়, আবার ঘরে থাকতে পারি না ডেঙ্গু মশার কামড়ের ভয়ে। আমাদের জীবনটা বুঝি এভাবে ভয়ে ভয়েই কাটাতে হবে। আর সিটি করপোরেশনের কর্তারা বড় বড় বুলি আওড়াবেন। মশা নিধনে কত শো-অফ দেখি টেলিভিশনের পর্দায়, কিন্তু বাস্তবে মাসের পর মাসও মশা মারার ধোঁয়া চোখে পড়ে নাÑ এমন আতঙ্কে দিন কাটে কাকে বোঝাই। 

তবে এসব উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ লার্ভার এলাকায় প্রাপ্তবয়স্ক মশা মারতে ফগার মেশিনে ওষুধ ছিটানোর বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী। তিনি বলেন, মশা নিধনে তিনটা কাজ একত্রে করতে হবে। এক নম্বর হচ্ছে মশা জন্ম নিতে পারে এমন জায়গাগুলো পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। প্রাপ্তবয়স্ক মশাগুলো মেরে ফেলতে ফগার মেশিনে ওষুধ ছিটাতে হবে। লার্ভিসাইড দিয়ে লার্ভাগুলো মেরে ফেলতে হবে। শুধু তাই নয়, যেসব এলাকায় ডেঙ্গুর লার্ভা পাওয়া গেছে, এমন ৪০০ মিটার এলাকায় লার্ভাসাইড ও ফগার মেশিনে ওষুধ ছিটাতে হবে। এ ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের তৎপরতা যতটুকু থাকা দরকার ছিল, ততটুকু আমাদের চোখে পড়ে না তা ঠিক। শুধু তাই নয়, আমরা আক্রান্তদের সঠিক সংখ্যাও জানতে পারছি না। কারণ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত প্রতি ১০০ জনে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে মাত্র ১০ জন। তাই সঠিক সংখ্যা নির্ধারণে শুধু হাসপাতাল নয়, ডায়াগনস্টিকগুলো থেকেও তথ্য নিতে হবে। সেখানে যারা আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের এলাকায় মশার ওষুধ ছিটাতে হবে। এই কাজটা করতে হবে বছরজুড়ে। জানুয়ারি থেকে শুরু করতে হবে। বিশেষ কিছু এলাকা আছে অটোনোমাস। যেমন- বিমানবন্দর, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নিয়মিত মশার ওষুধ ছিটানোর পাশাপাশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। 

তবে আতঙ্কিত না হয়ে মানুষকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ। তিনি রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, নিজের বাড়িঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি খাটিয়ে ঘুমাতে হবে। যদি সামান্য  জ্বরও হয়, তাহলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এডিস মশা ডেঙ্গু রোগের ভাইরাস বহন করে। ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তি শুধু নিজেই ভোগান্তির শিকার হন তা নয়, তিনি ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারীও বটে। সংক্রামক এডিস মশা কামড়ালে ডেঙ্গু হয়। এডিস মশা ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারীকে কামড়ানোর পর মশার ভেতর ভাইরাস মাল্টিপ্লাই করে। সংক্রামক মশা দুই-তিন সপ্তাহ বেঁচে থাকে। এ সময় যাকে কামড়াবে, তার দেহে সে ভাইরাস ঢুকিয়ে দিচ্ছে। অন্যান্য মশা যেমন কিউলেক্স ডিমকে পরিপক্ব করার জন্য সুযোগ পেলে একজনের কাছ থেকেই তার চাহিদামতো রক্ত নিয়ে নেয়। এডিস মশা কয়েক জনের কাছ থেকে তার প্রয়োজনীয় রক্ত নেয়। অনেক সময় রক্ত না নিয়েও হুল ঢুকিয়ে দিয়েও ভাইরাস ঢুকিয়ে দেয়। ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাবের সময়কাল সাধারণত এপ্রিল থেকে অক্টোবর। তবে এবার জুন থেকেই প্রকোপ শুরু হওয়াটা ভালো লক্ষণ বলে মনে হচ্ছে না। 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!