পানি বিশুদ্ধকরণ টেকনোলজি পিওরইটের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠলেও দুই মাসেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। নির্দিষ্ট পরিমাণের পানি বিশুদ্ধ করতে না পারা, বেশি দাম নেওয়াসহ অনেক অভিযোগ উঠলেও নীরব রয়েছে ভোক্তা অধিদপ্তর।
পিওরইটের বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে ‘পিওরইটই পিওর না!’ শিরোনামে ৪ মে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করে রূপালী বাংলাদেশ।
প্রতিবেদনে বলা হছে, ২০২৪ সালের নভেম্বরে ১২০ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি করা হয় পানি বিশুদ্ধকরণ টেকনোলজি ‘পিওরইট’। বিশ্বখ্যাত বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ইউনিলিভারের এই ফর্মূলা কিনে নেয় যুক্তরাষ্ট্রের এও স্মিথ করপোরেশন। তবু ইউনিলিভারের নামেই ঢাকাসহ সারা দেশে পণ্যটি বাজারজাত করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। যদিও এটির কার্যকারিতা আগের মতো নেই। মানহীন পণ্যটি কিনে প্রতারিত হচ্ছেন ভোক্তারা।
দুর্ভোগে পড়ে কোম্পানির ১৬৬২৭ নম্বরে ফোন করেও সঠিক সেবা পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। তাদের অভিযোগ, কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পণ্যের নিম্নমানের বিষয়ে অভিযোগ করেও কাজ হচ্ছে না। নির্ধারিত ৩ হাজার ও ১ হাজার ৫০০ লিটার পানি বিশুদ্ধ করতে পারছে না পিওরইট। প্রতিটি কিট নির্ধারিত পরিমাপের অর্ধেক পানিও বিশুদ্ধ করতে ব্যর্থ হচ্ছে।
পণ্যের মানোন্নয়ন, গ্রাহকের বিক্রয়োত্তর সেবা ও সন্তুষ্টিসহ বিভিন্ন বিষয়ে জানতে ১৫ এপ্রিল এও স্মিথ করপোরেশনের চেয়ারম্যান ও চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার কেভিন জে হুইলারের কাছে মেইল করলেও জবাব মেলেনি। অন্যদিকে, ‘পরিমাপ মানদণ্ড নিশ্চিত’ করতে না পারায় পিওরইটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
এও স্মিথ করপোরেশন গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণ না করে বাংলাদেশ ছাড়াও চারটি দেশে পানি বিশুদ্ধকরণ মেশিনটি বিক্রি করছে। তবে শুধু বাংলাদেশে পণ্যের শ্রেণিকরণ নেই এবং বিক্রিত পণ্য বিনষ্ট বা মানহীন হলেও ফেরত নেওয়ার বিধান রাখেনি। অভিযোগকারী বা সেবাগ্রহণকারীকে বিক্রয়োত্তর সঠিক সেবা না দিয়ে দীর্ঘমেয়াদে আয়ের পরিকল্পনা করছে প্রতিষ্ঠানটি।
এদিকে, গ্রাহকের অভিযোগ নিয়ে পিওরইটের বর্তমান পরিচালক এও স্মিথ করপোরেশনের বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। বর্তমান কর্তৃপক্ষ হিসেবে পিওরইটের বিজনেস প্রধান নওয়াজেশ আহমেদকে গত মে মাসে ই-মেইলে করা হলে ‘অভিযোগপত্র পেয়েছেন’ বলে ফোনে জানালেও গতকাল পর্যন্ত কোনো জবাব দেননি।
অভিযাগ থাকলেও ব্যবস্থা না নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আলীম আখতার খান গত সোমবার (৩০ জুন) রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমরা মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বাস করি। তাদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে এবং আমাদেরও অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে আমরা ব্যবস্থা নেব।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রতি মাসে আমরা দু-একটি মামলা দিয়ে আদালতের মুখোমুখি দাঁড়াই। এ রকম কর্তৃপক্ষকেই আমাদের ফেস করতে হয়।’
গ্রাহকের স্বার্থ সংরক্ষণকারী সংগঠন কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) ঢাকা জেলা কমিটির প্রেসিডেন্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সামস এ খান রূপালী বাংলাদেশকে গতকাল বুধবার (২ জুলাই) বলেন, ‘জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এই অভিযোগ আমলে নিয়ে চূড়ান্ত ব্যবস্থা নিতে পারে। অথবা তাদের বিরুদ্ধে গ্রাহক উত্থাপিত অভিযোগ নিয়ে মামলাও করতে পারে।’ ক্যাব এর সাবেক সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘তবে তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তা আমলে নেওয়া যেতে পারে।
ইউনিলিভার বাংলাদেশে ২০১০ সালে পিওরইট চালু করে। অভিযোগের বিষয়ে ইউনিলিভার বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ই-মেইলে জানায়, ‘বাংলাদেশে পিওরইটের পৃথকীকরণ ২০২৪ সালের ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে। নতুন মালিকানার অধীনে পিওরইট তাদের প্রয়োজনীয় ওয়াটার পিউরিফিকেশন ডিভাইসের বিক্রি ও সেবা প্রদান অব্যাহত রেখেছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য এও স্মিথ করপোরেশনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ও বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে প্রকাশিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পাওয়া যাবে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম বা পরিকল্পনা বিষয়ে প্রাসঙ্গিক তথ্য এও স্মিথ করপোরেশন থেকে গ্রহণ করা উত্তম হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’
আপনার মতামত লিখুন :