দীর্ঘ ৩৫ বছরের অচলাবস্থার অবসান ঘটিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (রাকসু) নির্বাচনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর থেকে ক্যাম্পাসে শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা। শিক্ষার্থীদের মধ্যে এখন ভোটের আমেজ। ছাত্রসংগঠনগুলো নিজেদের সাংগঠনিক দক্ষতা বৃদ্ধি ও কর্মপরিকল্পনা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে। অপরদিকে শিক্ষার্থীরা যোগ্য নেতৃত্ব বাছাইয়ের ক্ষেত্রে মেলাচ্ছেন নানা সমীকরণ।
আসন্ন রাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল একক প্যানেলে নির্বাচন করবে। তবে শিবির বলছে, তারা এককভাবে নাকি সম্মিলিতভাবে নির্বাচন করবে, তা জানানোর সময় এখনো আসেনি। এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়করা এক ছাতার নিচে আসার চেষ্টা দীর্ঘদিন ধরে করলেও তা এখনো সফল হয়নি। তবে সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে সাথে নিয়ে সম্মিলিতভাবে নির্বাচনে আসবে গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট।
নির্বাচন নিয়ে শিবির ও সমন্বয়করা ইতিবাচক ধারণা পোষণ করলেও ছাত্রদল ও গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট সংশয় প্রকাশ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ছাত্রদল। তারা বলছেন, প্রশাসন একটি নির্দিষ্ট দলের হয়ে কাজ করছে। এ কারণে সবার সমান অধিকার নিশ্চিত হচ্ছে না। অপরদিকে নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র আবাসিক হলে স্থাপন করায় সংশয় প্রকাশ করেছে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। তারা বলছে, নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হলে রাকসুর ভোটকেন্দ্র পরিবর্তন করে একাডেমিক ভবনে স্থাপন করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৫৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর প্রথম রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫৬-৫৭ মেয়াদে। ওই সময় এর নাম ছিল রাজশাহী ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (রাসু)। মাঝখানে আইয়ুব খানের শাসনামলে এর কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর ১৯৬২ সালে এটি যাত্রা শুরু করে রাকসু নামে। এখন পর্যন্ত ১৪ বার রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৯-৯০ মেয়াদের জন্য।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশে বলা আছে, বাস্তব জীবনে কর্মদক্ষতা, যোগ্য নাগরিক ও নেতৃত্ব গড়ে তুলতে, দেশ-বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও অনুমোদিত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া, বক্তৃতা, লিখন, বিতর্ক ইত্যাদিতে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়ানোর জন্য এবং বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে সর্বাধিক সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করার জন্য শিক্ষার্থীদের উজ্জীবিত করতে কাজ করবে রাকসু। এ ছাড়া মানবিক-সামাজিক বিভিন্ন কর্মকা- আয়োজনও ছিল রাকসুর কর্মসূচিতে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলে শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন একটা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। এমতাবস্থায় কীভাবে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব? বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমাদের একটাই অনুরোধ, তারা যেন সব দলের জন্য সহাবস্থান নিশ্চিত করে। কোনো বিশেষ দলের হয়ে যাতে তারা কাজ না করে।
নির্বাচনে প্যানেলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যে পরিমাণ নেতাকর্মী রয়েছে, তা দিয়ে আমরা একাধিক প্যানেল দিতে পারি। তবে আমরা এককভাবে একটি প্যানেল দেব। রাকসু সব শিক্ষার্থীর প্রাণের দাবি। আমরা বিশ্বাস করি, এটা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের একটি প্ল্যাটফর্ম। জাতীয় নেতৃত্ব তৈরির ক্ষেত্রে এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে রাকসু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
শাখা ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদ ফয়সাল বলেন, দীর্ঘদিন পর রাকসুর তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে, এ কারণে আমরা খুবই আনন্দিত। ছাত্রশিবির অবশ্যই রাকসুতে অংশগ্রহণ করবে। প্যানেল একক হবে নাকি সম্মিলিত হবেÑ এই বিষয়ে মন্তব্য করার সময় এখনো আসেনি। শিবির এককভাবে নির্বাচনে আসতে পারে, আবার অন্য ব্যক্তি বা সংগঠনের সাথে সম্মিলিতভাবেও নির্বাচনে দাঁড়াতে পারে।
গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল বলেন, আমরা রাকসুতে যাচ্ছি। তবে আমাদের কিছু আপত্তি রয়েছে।
রাকসুর ভোটকেন্দ্র আবাসিক হলে নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে আমরা দেখতে পাচ্ছি, বর্তমানে ক্যাম্পাসে দখলদারির একটি অবস্থা ফিরে আসছে। তাই আমরা চাই রাকসুর ভোটকেন্দ্র পরিবর্তন করে একাডেমিক ভবনে স্থাপন করা হোক। গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনকে সাথে নিয়ে নতুন কোনো ব্যানারে একটি প্যানেল দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী সজীব বলেন, ৩৫ বছর পর রাকসু হচ্ছে এটা নিশ্চয়ই একটা আশা জাগানিয়া বিষয়। সব শিক্ষার্থীই এ কারণে উৎফুল্ল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সমন্বয়করা যারা ছিলাম, তারা সম্মিলিতভাবে একটি প্ল্যাটফর্ম দাঁড় করানোর চেষ্টা আমরা করেছিলাম, এখনো করছি। যদি এটা সফল না হয় তবে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে প্যানেল দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :