শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


হাসান আরিফ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৫, ০২:৪৫ এএম

বাজেট ক্যালেন্ডারে পরিবর্তন উদ্দেশ্য নির্বাচন ও একীভূত ব্যাংকের তহবিলের জোগান

হাসান আরিফ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৫, ০২:৪৫ এএম

বাজেট ক্যালেন্ডারে পরিবর্তন উদ্দেশ্য নির্বাচন ও একীভূত ব্যাংকের তহবিলের জোগান

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণায় অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেট-সংক্রান্ত ক্যালেন্ডারে পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনের জন্য অতিরিক্ত বাজেট বরাদ্দ, পাঁচ ব্যাংক মিলিয়ে একটি ইসলামি ধারার ব্যাংক গঠন করতে ২০ হাজার ২০০ কোটি টাকার তহবিল দেওয়া এবং নির্বাচন-কেন্দ্রিক কাজের পরিধি বৃদ্ধি এবং এই সময়ে বাজেটের কাজ ব্যাহত হতে পারে ধরে নিয়ে সংশোধিত বাজেট দুই মাস আর আর্থিক, মুদ্রা ও বিনিময় হার সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের সভা এক মাস এগিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

অর্থ বিভাগ চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের ঘোষিত বাজেটে নির্বাচন কমিশনের জন্য ২ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে, যা গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা বেশি। যদিও জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য ৫ হাজার ৯২২ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছিল নির্বাচন কমিশন। মোট বরাদ্দের মধ্যে প্রায় ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা জাতীয় নির্বাচনের জন্য ব্যয় হতে পারে। এই ব্যয় নির্বাচন পরিচালনা ও আইনশৃঙ্খলা খাতে ধরা হচ্ছে। আর স্থানীয় নির্বাচনের জন্য ২ হাজার ৭৯৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা চাওয়া হয়। এ ছাড়া ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্র খাতে ৬৯ কোটি ২৫ লাখ টাকার চাহিদা ছিল।

জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি সিটি করপোরেশন, উপজেলা-জেলা পরিষদ, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ, উপনির্বাচনসহ অন্তত আড়াই হাজার নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজন হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনের জন্য যত বরাদ্দ রাখা হয়েছে, এর মধ্যে ২ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা পরিচালন ব্যয় বাবদ বরাদ্দ আর ২২৯ কোটি টাকা উন্নয়ন বরাদ্দ। এর মানে, নির্বাচনের কাজে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ হতে পারে।

দেশে সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি। সেটি ছিল ২০২৩-২৪ অর্থবছরে। ওই বছর নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের জন্য বরাদ্দ ছিল ৪ হাজার ১৯০ কোটি টাকা; যার মধ্যে পরিচালন খরচ বাবদ বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার ৯৮১ কোটি টাকা আর উন্নয়ন ব্যয় বাবদ বরাদ্দ ছিল ২০৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ২০২৪ সালের সর্বশেষ নির্বাচনের জন্য পরিচালন খরচ বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা।
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের জোর প্রস্তুতি নিয়ে নির্বাচন কমিশন কাজ করছে বলে গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন। তিনি বলেছেন, আগামী বছর রমজানের আগে, ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে নির্বাচন করার জন্য যা যা প্রস্তুতি নেওয়া দরকার, আমরা জোরেশোরে নিচ্ছি।’

নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্বাচনি প্রস্তুতির অন্যতম বিষয় হলো প্রয়োজনীয় কেনাকাটা। ভোটের জন্য প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ও ঢাকনা, ছবিসহ ভোটার তালিকা, ব্যালট পেপার, অমোচনীয় কালি, কয়েক ধরনের সিল, গালা, স্ট্যাম্প প্যাড, কালি, থলে, ১৭ ধরনের খাম, কাগজ, কলম, ছুরি, মোমবাতি, দেশলাইসহ অনেক কিছুর প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে ব্যালট পেপারের কাগজ সাধারণত নেওয়া হয় রাষ্ট্রায়ত্ত কর্ণফুলী পেপার মিল থেকে। ভোটের বেশ আগেই তাদের কাছে চাহিদাপত্র দেওয়া হয়। প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর ব্যালট পেপার ছাপা হয় সরকারি ছাপাখানায়। এর বাইরে অনেক সামগ্রী কিনতে হয় উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে। এ কারণে কিছুটা লম্বা সময় প্রয়োজন হয় কেনাকাটার জন্য।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট-সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন প্রস্তুতি রাখলেও অর্থ মন্ত্রণালয় আগাম বরাদ্দ দেয়নি। তাদের যুক্তি, সরকার রোডম্যাপ ঘোষণা করলেই অর্থ মন্ত্রণালয় নির্বাচনি ব্যয়ের জোগান দেবে। এটি এমন ব্যয়, যে বরাদ্দ না রাখলেও অন্য খাত থেকে কমিয়ে নির্বাচনি ব্যয় নির্বাহ করা যাবে।’

এদিকে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘নির্বাচনের জন্য যত টাকা লাগবে, তা দেওয়া হবে। এ নিয়ে কোনো সমস্যা নেই।’

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক, মুদ্রা ও বিনিময় হার-সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের সভা হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ সভা, যেখানে সরকারের আর্থিক, মুদ্রানীতি ও বিনিময় হার সম্পর্কিত বিভিন্ন নীতি ও কৌশলের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা হয় এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আলোচনা করা হয়। এই সভায় অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অর্থনীতি, বাণিজ্য, পরিকল্পনা এবং অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকেন এবং অর্থনৈতিক লক্ষ্যমাত্রা, যেমনÑ বাজেট, জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি এবং বাজেট ঘাটতি নির্ধারণ ও পর্যালোচনা করা হয়।
এভাবে সংশোধিত বাজেটে প্রতিটি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও খাতভিত্তিক বরাদ্দ পুনর্মূল্যায়ন করা হয়। এই মূল্যায়নে কোনো বরাদ্দ করানো বা বাড়ানো হয়ে থাকে। তাই জাতীয় বাজেটের ক্ষেত্রে সংশোধিত বাজেট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জাতীয় নির্বাচনের সময় বাজেট-সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা কঠিন হয়ে যাবে। তাই কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের সভা ও সংশোধিত বাজেট নির্বাচনের আগেই শেষ করতে চায় অর্থ বিভাগ। এ ছাড়া নির্বাচনের অতিরিক্ত বরাদ্দ ও পাঁচ ব্যাংক মিলিয়ে একটি ইসলামি ধারার ব্যাংক গঠন করতে ২০ হাজার ২০০ কোটি টাকা দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই অর্থ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও খাতভিত্তিক বরাদ্দ থেকে কাটছাঁট করে দেওয়ার জন্য একটা চিন্তা আছে। ফলে সংশোধিত বাজেট আগেই সারতে হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বাজেটে অর্থ বিভাগের হাতে থোক বরাদ্দ আছে ৪ হাজার কোটি টাকা। এই অর্থ পুরোটা দিলে আপৎকালীন প্রয়োজন মেটাতে অর্থ বিভাগের হাতে আর কোনো অর্থ থাকবে না। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের লভ্যাংশ থেকে পাঁচ ব্যাংকের জন্য অর্থ দেওয়ার কোনো আইনগত সুযোগ নেই। কারণ, বাংলাদেশ ব্যাংকের লভ্যাংশ পুরোটা সরকারের কোষাগারে জমা দিতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের লভ্যাংশ মূলত সরকারের নন-ট্যাক্স রেভিনিউর একটি খাত। তাই এই অর্থ খরচ করার কোনো এখতিয়ার বাংলাদেশ ব্যাংকের নেই, খরচের নিয়ন্ত্রণ একেবারেই সরকারের হাতে।

অর্থ বিভাগের তিনটি সূত্র রূপালী বাংলাদেশকে জানিয়েছে, পাঁচ ব্যাংক মিলিয়ে একটি ইসলামি ধারার ব্যাংক গঠনের জন্য সরকারের কাছে যে ২০ হাজার ২০০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে, তা দেওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর এ অর্থ সংগ্রহ করতে অর্থ বিভাগ দুটি মাধ্যম ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছে। প্রথম মাধ্যম হলোÑ বাজেটে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়, সব মন্ত্রণালয়ই তা পুরোপুরি ব্যয় করতে পারে না। ফলে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট জানুয়ারির মধ্যে প্রণয়ন করে ওই সব মন্ত্রণালয়ের অব্যবহৃত টাকা একত্রিত করে পাঁচ ব্যাংকের মূলধন হিসেবে দেওয়া যেতে পারে। এতে সরকারের ওপর বাড়তি চাপ পড়বে না, সমস্যারও সমাধান হবে।
একই সূত্র জানিয়েছে, অর্থ সংগ্রহের জন্য সরকারের দ্বিতীয় চিন্তা হলোÑ বন্ড বা ট্রেজারি বিল বিক্রি করে অর্থ সংগ্রহ করা। এতে সরকারের ওপর সুদের চাপ বাড়বে, তবে দ্রুত সময়ে অর্থ সংগ্রহের জন্য ট্রেজারি বিলকেই সবচেয়ে সহজ উপায় হিসেবে দেখা হচ্ছে।

একটি সূত্র জানিয়েছে, বন্ড তুলনামূলক সময়সাপেক্ষ হলেও ট্রেজারি বিলের মাধ্যমে দ্রুত টাকা সংগ্রহ করা সম্ভব। উদাহরণ হিসেবে সূত্রটি জানায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে ট্রেজারি বিল বিক্রি করে, সরকার চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে অতিরিক্ত ট্রেজারি বিল বিক্রি করেও টাকা সংগ্রহ করতে পারে। সরকার যে পরিমাণ টাকা সংগ্রহ করবে, তা শুধু ট্রেজারি বিল বিক্রির ক্যালেন্ডারে উল্লেখ করে দিতে হবে। তা ছাড়া একসঙ্গে ২০ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন হবে না। এই অর্থ ধাপে ধাপে দেওয়া হবে আর সরকারও ধাপে ধাপে বিল বিক্রি করে টাকা সংগ্রহ করে দিতে পারবে।
জানা গেছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সমস্যায় পড়া পাঁচটি ইসলামি ধারার ব্যাংক একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই উদ্যোগে সম্মতি দিয়েছে সরকারও। এই পাঁচ ব্যাংক একীভূত করে একটি ইসলামি ধারার ব্যাংক গঠন করা হবে। সেটির জন্য প্রাথমিকভাবে ২০ হাজার ২০০ কোটি টাকা মূলধন জোগান দেবে সরকার। তবে নতুন এই ব্যাংকের মূলধন হবে ৩৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা, যা দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে।

একীভূত হতে যাওয়া পাঁচ ব্যাংক হলো ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক। এই পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে চারটিই ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ও ব্যাপক সমালোচিত ব্যক্তি এস আলমের মালিকানায়। আর এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারও ছিলেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!