আগামীতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় এলে তিনটি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধিদলকে জানিয়েছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। গতকাল রোববার দুপুরে জামায়াত আমিরের কার্যালয়ে সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইলেকশন অবজারভেশন মিশনের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হয়। এ সময় তিনি এ কথা বলেন। বৈঠকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পক্ষ থেকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ বিশেষজ্ঞ মেটে বাক্কেন, ম্যানুয়েল ওয়ালি ও ইইউ ডেলিগেশন টু বাংলাদেশের ডেপুটি হেড বাইবা জারিনা উপস্থিত ছিলেন।
জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধিদলে ছিলেন সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন, ঢাকা মহানগরী উত্তর জামায়াতের মেডিক্যাল থানার আমির ডা. এসএম খালিদুজ্জামান এবং জামায়াত আমিরের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মাহমুদুল হাসান। বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘ইইউ প্রতিনিধিদল জামায়াত আমিরের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে মতবিনিময় করেছেন। তারা জানিয়েছেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক দল ও স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে মতবিনিময়ই তাদের সফরের মূল উদ্দেশ্য। তারা নির্বাচনকালীন ৬৪টি জেলায় পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম চালানোর পরিকল্পনা করেছেন এবং প্রত্যেক জেলায় একজন প্রতিনিধি পাঠাবেন।
নির্বাচন শেষে পর্যবেক্ষণের বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে বলে তারা জামায়াত আমিরকে অবহিত করেন। ডা. শফিকুর রহমান প্রতিনিধিদলকে জানান, শুধু নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নয়, বরং একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে ইইউর টেকনিক্যাল সাপোর্টের সহযোগিতা প্রয়োজন। বৈঠকে প্রবাসীদের ভোট ও ভোটাধিকার সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইলেকশন অবজারভেশন টিম। তখন জামায়াত আমির বলেন, জামায়াতই প্রথম এক কোটির বেশি প্রবাসী ভোটারের ভোটাধিকার নিয়ে দাবি তুলেছে।
এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশন বরাবর জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন ও সরকার তা গ্রহণ করে ইতোমধ্যে প্রবাসীরা যাতে ভোট দিতে পারেন সে প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইলেকশন অবজারভেশন টিম জানতে চেয়েছেন, জামায়াতে ইসলামী যদি আগামীতে রাষ্ট্রের দায়িত্ব পায়, তাহলে মূল এজেন্ডা কী হবে? এ ব্যাপারে জামায়াত আমির তিনটি বিষয় উল্লেখ করেছেন। প্রথমত, এ দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে নৈতিকতা, উৎপাদনমুখী, টেকনিক্যাল, দক্ষতা, বৈষয়িক, মানবিক সব দিক থেকে নাগরিকরা যোগ্য হতে পারে সে ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দ্বিতীয়ত, করাপশন ফ্রি সোসাইটি গড়ে তোলা হবে। সমাজের সর্বস্তরে দুর্নীতি চেপে বসেছে। জামায়াতে ইসলামী দায়িত্ব পেলে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ে তোলা হবে। তৃতীয়ত, সোশ্যাল জাস্টিস। সামাজিক ন্যায়বিচারের দারুণ সংকট আমাদের সমাজে রয়েছে। এ প্রসঙ্গে জামায়াত আমির বিগত ১৫ বছরে ফ্যাসিস্ট সরকারের কারণে কীভাবে মানুষ বঞ্চিত হয়েছে, নির্যাতন করা হয়েছে, জামায়াতের রাজনৈতিক কার্যালয় বন্ধ করা হয়েছে, ভিন্নমতের ওপরে জুলুম করা হয়েছে, নিজেসহ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ২০২৩ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইলেকশন অবজারভেশন টিম এসেছিল। তখন জামায়াতে ইসলামীর আমির-সেক্রেটারিসহ অনেকে আমরা কারাগারে ছিলাম। দলের পক্ষে নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইলেকশন অবজারভেশন ডেলিগেটের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা স্মরণ করিয়ে দেন।
জামায়াত আমির আরও উল্লেখ করেন, বিগত দেড় যুগে গণতন্ত্র দমন, বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ন এবং জামায়াতে ইসলামীর সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে দেওয়া হয়নি। আমরা আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুত, তবে শর্ত হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদের আইনিভিত্তি প্রদান করে তার আলোকে নির্বাচন অবশ্যই ফ্রি, ফেয়ার ও গ্রহণযোগ্য হতে হবে। সেক্রেটারি জেনারেল আরও বলেন, জামায়াত আমির ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলকে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন জানিয়েছে যে, তারা নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার আগে আবারও বাংলাদেশ সফরে আসবে এবং ঘনিষ্ঠভাবে মতবিনিময় করবে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন