*** জেলে তালিকায় মুদি দোকানির নাম
*** ২১ ইউনিয়নে প্রায় শতাধিক ভিন্ন পেশার মানুষ পেয়েছে বাছুর
*** রাজনৈতিক নেতাদের হাত ধরেই মৎস্য অফিসে তালিকা লিপিবদ্ধ
বকনা বাছুর বিতরণের তালিকায় নাম ছিল নিরঞ্জন চন্দ্র দাসের (৫০)। তিনি প্রকৃত জেলে না হলেও পেশায় একজন কাঁকড়া বিক্রেতা ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, বাছুর হাতে পাওয়ার ১ ঘণ্টার মধ্যে তারই এলাকার এক রিকশাচালকের কাছে ১৬ হাজার ৫০০ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিয়েছেন। এই ঘটনার সত্যতা জানতে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার জিন্নাগড় ৪নং ওয়ার্ডে গিয়ে তার বাড়িতে ওই বকনা বাছুর সম্পর্কে নিরঞ্জনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বকনা বাছুরটি আমি একজন রিকশাচালকের কাছে পালতে দিয়েছি। বাছুরটি পালন করার মতো কেউ নেই।’ পরক্ষণে তার কাছে ওই রিকশাচালকের নাম ও ঠিকানা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি তার নাম জানি না। আপনারা এত কথা জিজ্ঞেস করছেন কেন? এত ঝামেলা বুঝলে আমি বকনা বাছুর আনতাম না।’
বিতরণের তালিকায় নিরঞ্জনের মতো অন্য পেশার অধিকাংশ মানুষ বকনা বাছুর পেয়েছেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই তালিকাটি রাজনৈতিক নেতাদের হাত ধরেই মৎস্য অফিসে লিপিবদ্ধ হয়েছে। জেলে নয়, তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন এমন অনিয়মের খোঁজ নিতে গেলে উপজেলার ২১টি ইউনিয়নে প্রায় শ’খানেক অপ্রকৃত জেলেদের সন্ধান মিলেছে। একই তালিকায় মিলেছে জিন্নাগড় ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের দাসকান্দি গ্রামের মুদি দোকানি উমেশ তালুকদারের নাম। পেশায় মুদি দোকানি হলেও নাম লেখিয়েছেন জেলে কার্ডে। এই জেলে কার্ড দেখিয়ে পেয়েছেন বকনা বাছুর। সরেজমিন গিয়ে ওই মুদি দোকানেই তার দেখা মিলেছে।
আপনি জেলে না হয়ে কীভাবে জেলে কার্ড পেলেন ও ওই কার্ড দিয়ে কীভাবে বকনা বাছুর পেলেন? জবাবে উমেশ তালুকদার বলেন, ‘আমি জিন্নাগড় ৪নং ওয়ার্ডের মৎস্যলীগের সভাপতি ছিলাম। তখন আমার নামে এই জেলে কার্ডটি হয়েছে। আমি কখনোই জেলে ছিলাম না। আমার কর্মজীবনের শুরু থেকেই ব্যবসা করে আসছি।’
এদিকে জিন্নাগড় ইউনিয়নের কার্ডধারী জেলে জাকির হোসেন, জামাল হোসেন, মনির হোসেন, নুরে আলম, শাহাবুদ্দিন, আবুল বশার, কামাল হোসেন, মফিজুল ইসলামদের জেলে কার্ড থাকলেও জেলে চাল ও বকনা বাছুর পাননি। এমন বিস্তর অভিযোগ তাদের। তাদের মতো মাদ্রাজ ইউনিয়নের কার্ডধারী জেলে ইয়াছিন, তোফায়েল, মোশাররফ হোসেন, বেল্লাল সিকদার ও আমজাদ হোসেনরাও এসব সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তারা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই সাগরে মাছ শিকার করে আসছেন। প্রতিবছরই নিষেধাজ্ঞায় মাছ শিকার থেকে বিরত থাকেন। তাদের জেলে কার্ড থাকলেও অন্য পেশার মানুষ যারা জেলে নয়, এমন কিছু লোক বকনা বাছুর ও নির্দিষ্ট স্লিপে চাল পান। উপজেলা মৎস্য কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে পৌরসভাসহ ২১ ইউনিয়নে ১৭৪ জন তালিকাভুক্ত জেলেদের মাঝে ৪ কিস্তিতে বকনা বাছুর বিতরণ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট দপ্তর জানায়, প্রান্তিক কার্ডধারী জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে সরকার প্রতিবছর বকনা বাছুর জেলেদের মাঝে বিতরণ করে আসছেন। নিষেধাজ্ঞায় জেলেরা মাছ ধরা থেকে বিরত থাকে, তখন তারা বেকার হয়ে যায়। পরিবারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে সরকার এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।
সুবিধাভোগীর তালিকায় ওয়ার্ড নম্বর উল্লেখ না থাকা ব্যক্তিদের বিষয়ে দীর্ঘ অনুসন্ধানেও কোনো হদিস পাওয়া যায়নি এবং জেলে নয়, ভিন্ন পেশার মানুষ পেয়েছে বকনা বাছুর! এমন প্রশ্নের জবাবে চরফ্যাশন উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু বলেন, ‘এই তালিকা স্থানীয় জনপ্রতিনিধরা দিয়েছে। তবে ওইসব জনপ্রতিনিধিদের নামের তালিকা আমার কাছে সংরক্ষিত নেই।’

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন