একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে বাসায় বসে আয় করার প্রস্তাব পান একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা। প্রস্তাবে রাজি হয়ে ওই অনলাইন প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হওয়ার পর বেশ কয়েক দফায় ছোট অঙ্কের টাকাও পেয়ে যান ওই কর্মকর্তা। একপর্যায়ে গ্রুপের কিছু সদস্যের সঙ্গে পরিচয় হলে তাদের মাধ্যমে জানতে পারেন যত বিনিয়োগ করবেন তার দ্বিগুণ লভ্যাংশ পাবেন। আর এ প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে এক কোটির বেশি টাকা খোয়ান ওই কর্মকর্তা। শুধু ওই ব্যাংকারই নন, বিভিন্ন চাকরিজীবীসহ শ্রেণি-পেশার মানুষকে টোপে ফেলে এভাবে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। চক্রের এক সদস্য গ্রেপ্তার হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে হোতাসহ অন্যরা।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দীন খান রূপালী বাংলাদেশকে জানান, টেলিগ্রাম অ্যাপের মাধ্যমে বিভিন্ন নামে গ্রুপ খুলে একটি সংঘবদ্ধ চক্র বিনিয়োগের ফাঁদে ফেলে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে। চক্রটি সরকারি চাকরিজীবীদের বেশি টার্গেট করে। আপওয়ার্ক নামের একটি পেইজ থেকে বিনিয়োগের নামে প্রতারণার অভিযোগে নাদিম নামের ৩২ বয়সি এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে সাইবার পুলিশ সেন্টার টিম। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে। চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সিআইডি জানিয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, একটি বেসরকারি ব্যাংকের একজন সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসারের হোয়াটসঅ্যাপে অজ্ঞাত নম্বর থেকে একটি বার্তা আসে। বার্তা প্রেরণকারী নিজেকে ‘নাজনীন’ নামে পরিচয় দিয়ে দাবি করে যে সে ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফম @ঁঢ়ড়িৎশ-এর প্রতিনিধি। বাসায় বসে পার্ট-টাইম কাজের মাধ্যমে আয় করার প্রলোভন দেখালে ভুক্তভোগী সরল বিশ^াসে প্রস্তাবটি গ্রহণ করেন। প্রথমে ইউটিউব সাবস্ক্রিপশনসহ কয়েকটি ছোট অনলাইন টাস্ক করিয়ে ভুক্তভোগীর বিকাশ নম্বরে ১৫০ টাকা করে দেওয়া শুরু করে। এরপর দুই হাজার ১০০ টাকা দিতে থাকে। এভাবে আস্থা তৈরির চেষ্টা করার পর ওই ভুক্তভোগীকে @ঁঢ়ড়িৎশভৎড়হঃফবংশ২০১৩ নামক একটি টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত করা হয়। ওইখানে যুক্ত হওয়ার পর ভুক্তভোগীর গ্রুপের বেশ কিছু কথিত বিনিয়োগকারীর পরিচয় হয় যারা মূলত চক্রেরই সদস্য। ওই সব ব্যক্তি নিজেদের বিনিয়োগকারী পরিচয় দিয়ে জানায় তারা এখান থেকে নিয়মিত কাজ করে বড় অঙ্কের অর্থ উপার্জন করছে। এতে ভুক্তভোগীর বিশ^াস আরও বৃদ্ধি পায়। বড় লাভের কথা বলে প্রতারকরা ভুক্তভোগীকে ঈৎুঢ়ঃড় অপপড়ঁহঃ খুলতে দুই হাজার নেয়। এভাবে প্রায় বিভিন্ন ধাপে বিভিন্ন গ্রুপে যুক্ত করে এক কোটি ১০ লাখ ৫৮ হাজার ৩০৫ টাকা হাতিয়ে নেয়।
সিআইডি জানিয়েছে, চক্রের সদস্যরা টার্গেট ব্যক্তিদের কাছ থেকে ইতোমধ্যে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ চক্রের সদস্যরা এখনো সক্রিয় রয়েছে। মূলত তারা প্রথমে বিনিয়োগের বিপরীতে লভ্যাংশ দিতে থাকে। এরপর বিভিন্ন গ্রুপে যুক্ত করার মধ্য দিয়ে বিনিয়োগের বিনিময়ে লভ্যাংশ মোবাইলে পাঠায়। কিন্তু ওই টাকা ভুক্তভোগীরা তুলতে গেলে নানা জটিলতার অজুহাত দেয়। এভাবে তারা টাকা হাতিয়ে নেয়। যারা বুঝতে পারে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় আর যারা টাকা বিনিয়োগ করে তাদের কাছ থেকে টাকা নিতেই থাকে।
সিআইডি আরও জানিয়েছে, এ ধরনের একাধিক চক্রের সদস্যকে ইতোমধ্যে সিআইডি গ্রেপ্তার করেছে। তবে একাধিক চক্র এখনো মাঠে সক্রিয় রয়েছে। সাধারণ মানুষের প্রতি সিআইডির উপদেশ হলোÑ লোভে পড়ে কেউ যেন অনলাইনের কোনো প্ল্যাটফর্মে বিনিয়োগের বিনিময়ে দ্বিগুণ লাভ পাওয়ার ফাঁদে না পড়ে। এ ধরনের প্রতারক চক্র থেকে সাবধান থাকার অনুরোধ করেছে সিআইডি।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন