রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


স্বপ্নবাজ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৭, ২০২৫, ০৩:০৯ এএম

ক্যারিয়ারে ইংরেজি বিভাগের প্রভাব

স্বপ্নবাজ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৭, ২০২৫, ০৩:০৯ এএম

ক্যারিয়ারে ইংরেজি বিভাগের প্রভাব

বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন বিষয়ে পড়বেন, এ নিয়ে দ্বিধায় পড়েন অনেকেই। তবে এই সিদ্ধান্ত অনেক সময়ই জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ইতিহাস, বিজ্ঞান, প্রকৌশল, ব্যবসায় ইত্যাদি নানা বিষয় রয়েছে স্নাতক করার জন্য। বিষয় তালিকা যত দীর্ঘ, সিদ্ধান্ত নেওয়া তত কঠিন। কিন্তু যে বিষয়েই পড়ুন, একটি বিষয় সব ক্ষেত্রেই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। জানেন কী কোন সেই বিভাগ? আমি বলছি ইংরেজি বিভাগের কথা। শুধু কথা বলার দক্ষতা নয়, বরং বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ, জ্ঞান অর্জন, প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইংরেজির প্রয়োজন আজ সর্বজনস্বীকৃত। এই বাস্তবতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ বিস্তৃত সাহিত্য, মানববিদ্যা, ভাষাবিজ্ঞান ও আধুনিক ভাবনার এক আলোকিত পৃথিবী। চলুন জেনে নিই ইংরেজি বিভাগে পড়াশোনা ঠিক কী, এর ক্যারিয়ার সম্ভাবনা কতটা এবং কারা এই বিষয়ে পড়লে সবচেয়ে বেশি সাফল্য পাবেন।

কীভাবে এলো

ইংরেজরা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিল আজ থেকে প্রায় এক হাজার বছর আগে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ইংরেজি নিয়ে একাডেমিকভাবে পড়াশোনা শুরু হয় মাত্র দেড় শ বছর আগে। এর আগ পর্যন্ত ইংরেজিকে পড়ানোর অযোগ্য বিষয় মনে করা হতো।  তবে আমাদের অঞ্চলে ইংরেজি শিক্ষার আগমন তুলনামূলক দ্রুত। ব্রিটিশ শাসনকালেই ইংরেজি বিভাগ শিক্ষাব্যবস্থার অংশ হয়। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় হাতেগোনা কয়েকটি বিভাগের মধ্যে ইংরেজি বিভাগ ছিল অন্যতম। এরপর খুব দ্রুত সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে এর জনপ্রিয়তা। আজ দেশের প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজেই ইংরেজি বিভাগ রয়েছে। প্রতি বছর হাজারো শিক্ষার্থী ইংরেজিতে পড়াশোনা করে বের হচ্ছে।

কী পড়ানো হয়

শিক্ষাজীবনের একদম শুরু থেকেই এই দেশে সবাইকে ইংরেজি পড়তে হয়। ভিনদেশি ভাষা হলেও ইংরেজি না জেনে কোনো ডিগ্রি বা ভালো চাকরি পাওয়া এখন একেবারেই অসম্ভব। তাই মানুষ ইংরেজি বিভাগগুলোকে, ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়, বেশ সমীহ করে। বিভাগ হিসেবে এক শ বছর ধরে ইংরেজি তার গুরুত্ব, জনপ্রিয়তা ও সামাজিক অবস্থান ধরে রেখেছে। কিন্তু সারা দেশে এই বিভাগগুলোয় ঠিক কী পড়ানো হয়, কেমন করে পড়ানো হয়Ñ এই সব নিয়ে সাধারণ মানুষের অনেকের মধ্যেই ভুল ধারণা বা ধোঁয়াশা রয়েছে। কেউ কেউ ইংরেজি ভাষা শেখানোর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা কোচিং সেন্টারের সঙ্গে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগকে গুলিয়ে ফেলেন। মনে করেন এখানে ব্যাকরণ ও ইংরেজি পড়া, বলা বা লেখা শেখানো হয়। আদতে এসব শেখানো ইংরেজি বিভাগের কাজ নয়, কখনোই ছিল না।

ইংরেজি বিভাগে স্নাতক পর্যায়ে মূলত ইংরেজি ভাষায় রচিত কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক ও ভাষাবিদ্যা পড়ানো হয়। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে এসবের পাশাপাশি সাহিত্যতত্ত্ব ও ইংরেজি ভাষা শেখানোর তত্ত্ব, নীতি ও পদ্ধতির ওপর জোর দেওয়া হয়। হাল আমলে অবশ্য ইংরেজির নিজস্ব জগতের বাইরেও বাংলা সাহিত্যের পরিচিতি, ইতিহাস, দর্শন, নৃবিজ্ঞান, সংস্কৃতি অধ্যয়ন, লৈঙ্গিক রাজনীতি, মিডিয়া ও চলচ্চিত্রসহ নানা বিচিত্র বিষয় এই বিভাগের সিলেবাসের অংশ।

ক্যারিয়ার সম্ভাবনা

সেই শুরুর সময় থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে ‘ইংরেজিতে অনার্স’ বা ‘ইংরেজিতে এমএ’Ñ এই কথাগুলো বেশ সমীহের সঙ্গে উচ্চারণ করা হয়। ইংরেজি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করলে তাই চাকরির বাজারেও বিশেষ গুরুত্ব পাওয়া যায়। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, এই বিভাগে পড়ে ঠিক কত ধরনের ক্যারিয়ার গঠন করা যায় তার হিসাব কষা মুশকিল।

ইংরেজি পড়ে প্রতি বছর একটা বড় সংখ্যার শিক্ষার্থী স্নাতক স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। প্রতিবার বিসিএস পরীক্ষার কঠিন ধাপগুলো সফলভাবে পার হয়ে বিভিন্ন ক্যাডারে চাকরি পাওয়াদের একটা বড় অংশ আসে বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ইংরেজি বিভাগগুলো থেকে। ব্যাংকসহ অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পাওয়ার সুযোগও থাকে প্রচুর। পত্রিকা, রেডিও, টেলিভিশন, বিজ্ঞাপনী সংস্থা বা বিপণন প্রতিষ্ঠানেও রয়েছে ইংরেজি পড়া স্নাতকদের আলাদা কদর। এ ছাড়া অনলাইনভিত্তিক ফ্রিল্যান্স কাজ বা অনুবাদেও আজকাল এই বিষয়ে শিক্ষিতরা সফল পেশাজীবন গড়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন।

ভবিষ্যৎ

দেড় শ বছর বয়সি এই বিভাগের অতীতের মতো ভবিষ্যৎও বেশ উজ্জ্বল। কালের পরিক্রমায় অনেক বিষয় তাদের কদর ও জৌলুশ হারালেও ইংরেজি রয়ে গেছে স্বমহিমায়। একসময় পড়ার অযোগ্য বলে বিবেচিত হলেও নিকট ভবিষ্যতে এই বিষয়ে পড়ার আগ্রহ ও গুরুত্ব কমার তেমন কোনো আভাস পাওয়া যাচ্ছে না। তবে কালের পরিক্রমায় এর ধরন ও স্বভাব অনেক বদলে গেছে। হয়তো টিকে থাকার জন্যই, যুগের চাহিদা অনুযায়ী ইংরেজি বিভাগ তার পড়ার বিষয়বস্তু ও পড়ানোর ঢঙে অনেক পরিবর্তন এনেছে। নতুন, বিচিত্র অনেক কিছু ঢুকে যাচ্ছে এর সিলেবাসে। তাই শেক্সপিয়ার, জন মিল্টন, জেন অস্টিন, বায়রনদের দাপট ক্রমেই কমছে; আর গুরুত্ব বাড়ছে নোয়াম চমস্কি, মিশেল ফুকো, এডওয়ার্ড সাইদ আর গায়ত্রী স্পিভাকদের।

কারা পড়বে

এখন পর্যন্ত উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে যত বিষয় প্রচলিত আছে, তার মধ্যে ইংরেজি সবচেয়ে বেশি সব্যসাচী। ব্যবসায় প্রশাসন, কারিগরি বা প্রকৌশল পড়ার ফলে মানুষ ক্রমেই মানবিক গুণাবলি হারাচ্ছে বলে অনেক সময় অভিযোগ করা হয়। আবার শিল্প, সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাসের মতো মানববিদ্যা অধ্যয়ন করলে চাকরি মেলে না বলে অনেকেই অনুতাপ করেন। ইংরেজিই হয়তো এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের একমাত্র বিষয় যা পড়ে একূল-ওকূল দুই কূল রক্ষাই সম্ভব।

তবে যারা কেবল ইংরেজি ব্যাকরণ বা ইংরেজি লিখতে, পড়তে, বলতে শেখার আশায় এই বিভাগে ভর্তি হতে চান, তারা সিদ্ধান্ত বদলে ফেলুন, আজ এই মুহূর্তে। এই বিভাগে পড়লে দারুণ প্রয়োজনীয় এই বিদেশি ভাষা নিয়ে আপনার জ্ঞান আরও তুখোড় হবে এটা যেমন সত্য, তেমনি ইংরেজি ভাষা কম জেনে এই বিষয়ে পড়তে এলে পদে পদে আপনি হতাশ হবেন।

বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা বা মানবিক যেকোনো বিভাগ থেকে এসেই আপনি পড়তে পারবেন ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য। তবে যাদের শিল্প-সাহিত্যে ভীষণ আগ্রহ, নতুনকে সহজভাবে যারা গ্রহণ করতে পারেন, যারা চেনাজানা পরিচিত জগতের চেয়ে বৈচিত্র্যকে বেশি প্রাধান্য দেন, তাদের জন্য ইংরেজি বিভাগের আমন্ত্রণ সবচেয়ে বেশি আন্তরিক। নানা দেশ থেকে ইংরেজি ভাষায় লেখা বা অনুবাদ করা সাহিত্য এখন পর্যন্ত এই বিভাগের প্রাণ। এই বিভাগে পড়তে হলে কবিতা, গল্প, নাটক লিখতে জানতে হয় এমন নয়, কিন্তু সাহিত্যের এই ধারাগুলোকে ভালোমতো ভালো না বাসলে এই বিভাগে পড়ার অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখের হয় না।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!