ঢাকা মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই, ২০২৫

গাজায় কৌশলগত যুদ্ধবিরতি ক্ষুধার্তদের কাঁধে ত্রাণের বস্তা

ভিনদেশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ২৯, ২০২৫, ১২:১২ এএম

গাজার ঘরে ঘরে ঈদের আনন্দ। দীর্ঘদিন পর অসহায় ফিলিস্তিনিদের কাঁধে উঠল ত্রাণের বস্তা। অর্ধাহারে-অনাহারে থাকা ক্লান্ত শরীরে পরিবারের জন্য একটি বস্তা বয়ে নিতে কষ্ট হলেও, অবশেষে খাবার মিলেছে এই ভেবে খুশি তারা।

বাসিন্দারা বলেন, ক্ষুধার যন্ত্রণায় অনেক কষ্ট পাচ্ছিলাম। ক্ষুধা আর অপুষ্টিতে পরিবার নিয়ে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছিলেন গাজার প্রায় প্রতিটি মানুষ। সেই ঘরে প্রাণের সঞ্চার করেছে ত্রাণের বস্তা। স্থানীয়রা বলেন, প্রায় ৪০ দিনের বেশি ঘরে কোনো আটা ছিল না। প্রতিদিনই আটা সংগ্রহে বের হতাম। কিন্তু হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরতাম। আল্লাহর রহমতে আজ পেয়েছি। রোববার থেকে আকাশ থেকে ত্রাণ ফেলা হচ্ছে গাজাবাসীর জন্য। সন্তানদের ওজন কমে গেছে। আল্লাহ সহায় হয়েছেন। তার দয়ায় আজ খাবার পেয়েছি। কয়েক কিলোমিটার পায়ে হেঁটে ত্রাণ সংগ্রহ করছেন ফিলিস্তিনিরা। কোনো ধরনের যানবাহন না থাকায় কাঁধে করেই সবাইকে বস্তা নিয়ে ঘরে ফিরতে হয়।

আন্তর্জাতিক চাপে রোববার ভোর থেকেই গাজায় ত্রাণ দেওয়া শুরু করেছে ইসরায়েল। এয়ারক্রাফটে করে বস্তায় বস্তায় ত্রাণ ফেলছে তারা। ইসরায়েল ছাড়াও জর্ডান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতও বিমানে করে গাজাবাসীর জন্য ২৫ টন খাবার ফেলেছে। এ ছাড়া মিসর সীমান্ত দিয়েও ট্রাকে করে ত্রাণ প্রবেশ করেছে সেখানে। যদিও জাতিসংঘ বলছে, গাজাবাসীর জন্য এই ত্রাণ যথেষ্ট নয়। গাজায় প্রতি মাসে শিশুদের জন্য প্রায় আড়াই লাখ ক্যান ফর্মুলা দুধ দরকার। সহায়তা সংস্থাগুলো বলছে ২০ লাখ ফিলিস্তিনির শুধু একবেলা খাবারের জন্য কমপক্ষে ১৬০টি বিমানবাহিনীর ফ্লাইট প্রয়োজন। রোববার মানবিক সহায়তার উদ্দেশ্যে গাজার মধ্য ও উত্তরাঞ্চলে সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা আগ্রাসন বন্ধের ঘোষণা দেয় তেল আবিব। এমনকি খাদ্য ও মেডিকেল সহায়তার জন্য সকাল ৬টা থেকে ১১টা পর্যন্ত মানবিক করিডোর খুলে দেওয়ারও ঘোষণা দেয় তারা।
 

এদিকে ক্ষুধা আর অপুষ্টিতে ধুঁকতে থাকা গাজাবাসীর ওপর হামলা থামছে না ইসরায়েলি বাহিনীর। রোববারও বিমান হামলায় প্রাণ যায় অর্ধশতাধিক ফিলিস্তিনির। আহত হন অনেকে। যাদের মধ্যে বেশির ভাগই ত্রাণ নিতে গিয়ে নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি হামলা ছাড়াও ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষে মৃত্যু হয়েছে আরও ৬ ফিলিস্তিনির, যার মধ্যে ২ জন শিশুও রয়েছে। খাবারের অভাবে গাজার নাসের হাসপাতালে জায়নাব নামে ৫ মাসের একটি শিশুরও করুণ মৃত্যু হয়েছে। শিশুটি যে ওজন নিয়ে জন্মেছিল, তার চেয়েও কম ওজনে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হল। যা দেখে বাকরুদ্ধ বিশ্ববাসী।

জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের তথ্য অনুযায়ী, তিন ভাগের এক ভাগ গাজাবাসী অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। এ ছাড়া প্রায় ৫ লাখ ফিলিস্তিনি দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতিতে রয়েছে। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, গাজার প্রায় ২০ শতাংশ গর্ভবতী ও ব্রেস্টফিডিং মা অপুষ্টিতে ভুগছেন। যদিও জাতিসংঘসহ মানবাধিকার এসব সংস্থার সব তথ্যকে মিথ্যা দাবি করলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তার মতে, গাজায় কোনো ক্ষুধার্ত মানুষ নেই। যুদ্ধ শুরুর পরও টনের পর টন সহায়তা পাঠিয়ে গাজাবাসীকে বাঁচিয়ে রেখেছেন তিনি। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, গাজায় কোনো ক্ষুধার্ত মানুষ নেই। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চলছে। পুরো যুদ্ধের সময় গাজায় সহায়তা দেওয়া অব্যাহত রেখেছি। অন্যথায় গাজায় কোনো ফিলিস্তিনি প্রাণে বেঁচে থাকার কথা না। সহায়তা অব্যাহত থাকলেও হামাসকে নির্মূল না করা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতনিয়াহু বলেন, যুদ্ধ চালিয়ে যাব। লক্ষ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত যুদ্ধ থামাব না। আমরা পুরোপুরি জয় চাই। এদিকে হামাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ফিলিস্তিনিদের ক্ষুধার্ত ও অবরুদ্ধ রেখে ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো যুদ্ধবিরতির আলোচনা হতে পারে না।

হামাস প্রধান খালিন আল-হায়া বলেন, গাজা উপত্যকায় যখন নারী-শিশুসহ লাখ লাখ মানুষ না খেয়ে দুর্ভিক্ষের দিকে যাচ্ছে, এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো যুদ্ধবিরতির আলোচনা হতে পারে না। এদিকে গাজা ইস্যুতে নেতানিয়াহুকে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বললেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি থেকে ইসরায়েল ফিরে এলে গাজার কী পরিণতি হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা প্রকাশ করেন তিনি। গাজাবাসীর জন্য ৬ কোটি ডলার সহায়তা পাঠিয়েছেন বলে দাবি করেন ট্রাম্প।

সেই সঙ্গে আক্ষেপ জানান, তার এই প্রতিদান কেউ স্বীকার করছে না। মানবাধিকার সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরেই গাজায় প্রয়োজনীয় খাদ্য, পানি ও চিকিৎসাসামগ্রী পৌঁছাতে বাধা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছিল।

এদিকে গাজায় দ্রুত অবনতিশীল মানবিক বিপর্যয়ের বিষয়ে সতর্ক করে জাতিসংঘের শীর্ষ মানবিক কর্মকর্তা রোববার জানিয়েছেন, সেখানে তিনজনের একজন মানুষ দিনের পর দিন না খেয়ে আছেন এবং শিশুরা ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে খাদ্য সহায়তার ভয়াবহ সংকটে। সোমবার (২৮ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে আনাদোলু এজেন্সি।