গত জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষতায় বসেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর পর থেকেই বিভিন্ন দেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করতে শুরু করেন ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্ট শুল্কযুদ্ধের কারণে বাণিজ্য ও বিনিয়োগে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। সরবরাহশৃঙ্খলে আসবে পরিবর্তন। এতে ২০২৭ সালের মধ্যে বিশ্ব অর্থনীতি থেকে উধাও হয়ে যাবে দুই ট্রিলিয়ন ডলার। গত সোমবার এক রিপোর্টে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ। যেসব দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে সেসব দেশের রপ্তানি পণ্যে গত এপ্রিলে তিনি সর্বজনীনভাবে ১০ শতাংশ শুল্ক ধার্য করেন। কিছু দেশের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি করে শুল্কের হার নতুন করে নির্ধারণ করেন ট্রাম্প। বাণিজ্যচুক্তি না হলে এপ্রিলে নির্ধারিত শুল্কই বহাল থাকবে। যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), জাপান, ভিয়েতনাম ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে প্রাথমিক চুক্তি করেছে। চুক্তির অপেক্ষায় আছে কানাডা, মেক্সিকো, ভারত ও পাকিস্তান। ২০১৭ সালে ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত শুল্ক বেড়েছে ছয় গুণ। ১৯৩০ সালের পর যুক্তরাষ্ট্র কখনো এত অধিক হারে শুল্ক আরোপ করেনি। একপক্ষীয় এই শুল্কনীতির কারণে অনেক কম্পানি ব্যয়ের হার কমিয়েছে। সরবরাহশৃঙ্খলে পরিবর্তন এনেছে। খরচ বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর লাভের অঙ্কও কমে এসেছে। সারা বিশ্বেই দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগকে (এফডিআই) জরুরি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে এফডিআইয়ের হার কমেছিল ১১ শতাংশ।
ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এখনো কোনো বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছাতে পারেনি। আর তাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশটির ওপর ন্যূনতম ২৫ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করে দিয়েছেন। পাশাপাশি, তাঁর দেশ ভারতের ছয়টি কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছে। ভারত যখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখতে নাকানিচুবানি খাচ্ছে, ঠিক সেই সময় পাকিস্তান একের পর এক সুবিধা আদায় করে নিচ্ছে ওয়াশিংটন থেকে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক ও অতিরিক্ত জরিমানা ঘোষণা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাকিস্তানের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তির কথা জানান। এই চুক্তির আওতায় পাকিস্তানে তেল উত্তোলনে যৌথ উদ্যোগ নেওয়া হবে। এমনকি ভবিষ্যতে ইসলামাবাদ ভারতে তেল রপ্তানি করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এদিকে শুক্রবার থেকে ব্রাজিলের ওপর মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সম্প্রতি এ নিয়ে হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন তিনি। কার্যকর আলোচনা না হওয়ায় স্থানীয় সময় বুধবার আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। সিএনএন জানিয়েছে, ট্রাম্পের এ আদেশের মাধ্যমে ব্রাজিলের ওপর বাড়তি শুল্ক যোগ হলো ৪০ শতাংশ। আদেশে বলা হয়েছে, ব্রাজিল সরকার গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, যা দেশটির আইনের শাসনকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। চলতি মাসের শুরুতে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা ডি সিলভাকে ট্রাম্প যে চিঠি পাঠিয়েছিলেন, সেখানে উল্লেখ ছিলÑ বর্তমান সরকার যদি দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ও ডানপন্থি নেতা জইর বলসোনারোর বিরুদ্ধে চলমান বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ না কওে, তাহলে এই উচ্চ শুল্ক আরোপ করা হবে। ব্রাজিলের গণমাধ্যম দ্য রিও টাইমস বলছে, ব্রাজিলের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও বাণিজ্যনীতি মার্কিন স্বার্থের বিরুদ্ধে যাওয়ার উদ্বেগ থেকেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ট্রাম্পের মিত্র হিসেবে পরিচিত ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট বলসোনারো। বর্তমান প্রেসিডেন্ট লুলার বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের চেষ্টার অভিযোগে তাঁর বিচার চলছে। ট্রাম্প প্রকাশ্যে এই বিচার প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করেছেন। শুল্ক সংক্রান্ত আদেশে উল্লেখ করেছেন, বলসোনারোর বিচার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
ভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণার এক দিন পর বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভারত ও রাশিয়ার সম্পর্ক নিয়ে তিনি বলেছেন, নয়াদিল্লি-মস্কোর সম্পর্ক নিয়ে তিনি মোটেও চিন্তিত না। এ দুই দেশ চাইলে তাদের মৃতপ্রায় অর্থনীতি একসঙ্গে ডোবাতে পারে। নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘ভারত রাশিয়ার সঙ্গে কী করে, আমি তা নিয়ে মাথা ঘামাই না। তারা চাইলে তাদের মৃতপ্রায় অর্থনীতি একসঙ্গে ডোবাতে পারে- তাতে আমার কিছু যায় আসে না।’ ইরান থেকে পেট্রোলিয়াম কেনাবেচায় জড়িত থাকার অভিযোগে ভারতের ৬ কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি। প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানের পেট্রোলিয়াম ও পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য কেনাবেচায় জড়িত থাকার অভিযোগে ছয়টি ভারতীয় কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে যুক্তরাষ্ট্রে বা মার্কিন নাগরিকদের নিয়ন্ত্রণাধীন যেকোনো স্থানে এসব কোম্পানির সম্পদ ও স্বার্থ ‘ব্লক’ বা জব্দ থাকবে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দাবি, এসব লেনদেন মার্কিন নির্বাহী আদেশ ১৩৮৪৬ অনুযায়ী নিষিদ্ধ। ইরানের ওপর ২০১৮ সালের পর সবচেয়ে কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এবার দেশটির নৌপরিবহন খাতের সঙ্গে যুক্ত শতাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও জাহাজের ওপর কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে ওয়াশিংটন। বুধবার (৩০ জুলাই) মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট এ নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেয়। এতে অন্তত ৫২টি নৌযানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, যার অধিকাংশই তেল ও পণ্যবাহী জাহাজ। মার্কিন প্রশাসনের দাবি, এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ইরান ও রাশিয়া তেল ও পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য রপ্তানি করছে। পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পাকিস্তানের পক্ষ থেকেও চুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। এই চুক্তির আওতায় দেশটির ওপর মার্কিন শুল্ক কমবে এবং ইসলামাবাদের তেলের মজুদ বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে ওয়াশিংটন। ভবিষ্যতে পাকিস্তান ভারতে তেল বিক্রি করতে পারে, চুক্তির পর এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন ট্রাম্প। গত বুধবার নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, ‘আমরা পাকিস্তানে সঙ্গে একটি চুক্তি করেছি, যার মাধ্যমে পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্র মিলে দেশটির বিশাল তেল মজুতের উন্নয়নে কাজ করবে। আমরা এখন সেই তেল কোম্পানিকে খুঁজছি, যে এই অংশীদারত্বে নেতৃত্ব দেবে।
আপনার মতামত লিখুন :