নিউইয়র্কে বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত পুলিশ কর্মকর্তা বীর দিদারুল ইসলামকে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা আর চোখের জলে চিরবিদায় জানিয়েছে নিউইয়র্কবাসী। টিপ টিপ বৃষ্টির মধ্যে স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কের ব্রঙ্কসের পার্কচেস্টারের জামে মসজিদ থেকে লাশবাহী গাড়ি বের হওয়ার মুহূর্তে পুরো শহর যেন থমকে দাঁড়িয়েছিল। আকাশের অশ্রু আর মানুষের চোখের জল মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল। দিদারুল ইসলামের বিদায়ের মুহূর্তে শহরজুড়ে নেমে এসেছিল গভীর শোকের ছায়া। তবে এমন বর্ণাঢ্য অন্তিম যাত্রা আর কোনো দিন দেখেনি নিউইয়র্কবাসী।
ব্রঙ্কসের পার্কচেস্টারে দিদারুল ইসলামের জানাজায় অংশ নেন প্রায় ২০ হাজার মানুষ। পরে তাকে নিউ জার্সির লোরেল গ্রোভ কবরস্থানে দাফন করা হয়। নিউইয়র্কের মেয়র এরিক অ্যাডামস, গভর্নর ক্যাথি হোচুল এবং পুলিশ কমিশনার জেসিকা টিশসহ অসংখ্য সহকর্মী, প্রতিবেশী ও স্থানীয় বাসিন্দারা তার প্রতি শ্রদ্ধা জানান। জানাজা শেষে দিদারুল ইসলামকে মরণোত্তর ‘ডিটেকটিভ ফার্স্ট গ্রেড’ পদমর্যাদায় ভূষিত করা হয়। পুরো মাঠজুড়ে করতালির আওয়াজ আর অশ্রুসিক্ত চোখে ভাসছিল শোকের আবেগ। তাদের প্রত্যেকেরই কণ্ঠে ছিল দিদারুলের আত্মত্যাগের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা আর কৃতজ্ঞতা। তাদের বক্তব্যে বারবার উচ্চারিত হয়েছে বাংলাদেশের নাম।
পুলিশ কমিশনার জেসিকা টিশ বলেন, দিদারুল ছিল নিউইয়র্কেরই প্রতিচ্ছবি-একজন অভিবাসী, একজন সেবক এবং একজন রক্ষক। পুলিশ হলো সেই কম্বল, যা মানুষকে সান্ত¡না দেয়। দিদারুল তার জীবনে তা প্রমাণ করে গেছেন।
জানাজা শেষে দিদারুলের মরদেহ দাফনের উদ্দেশে নেওয়া হলে রাস্তার ধারে হাজার হাজার পুলিশ সদস্য তাকে শেষবারের মতো স্যালুট জানায়। আকাশপথেও হেলিকপ্টারে দেওয়া হয় গার্ড অব অনার।
বাংলাদেশি আমেরিকান পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, দিদারুল ইসলামকে মরণোত্তর ফার্স্ট গ্রেড ডিটেকটিভ হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এতে নিহত দিদারুলের স্ত্রী, সন্তান ও পরিবার পেনশন ও অন্যান্য সর্বোচ্চ সুবিধা পাবে।
দিদারুলের সহকর্মী পাবলো তার বন্ধুত্বের গল্প শোনান। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দিদারুল আর ডোমিনিকান বংশোদ্ভূত পাবলোÑ দুই ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষ নিউইয়র্কের ছায়াতলে গড়ে তুলেছিলেন আত্মীয়তার বন্ধন। দিদারুলের স্ত্রীর একটি বাণী পড়ে শোনানো হয় জানাজায়: সে ছিল আমাদের পৃথিবী। একজন দায়িত্বশীল পুলিশ, একজন সাহসী মানুষ এবং হৃদয় দিয়ে ভালোবাসতে জানা একজন মানুষ। মৃত্যুর আগের মুহূর্ত পর্যন্তও সে অন্যদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছে।
গত সোমবার নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের পার্ক অ্যাভিনিউয়ে ভয়াবহ বন্দুক হামলায় কর্তব্যরত অবস্থায় ৩৬ বছর বয়সি পুলিশ অফিসার দিদারুল ইসলামসহ চারজন নিহত হন। হামলাকারী ২৭ বছরের শ্যেন ডেভন তামুরা নিজেও আত্মহত্যা করে। দিদারুল ইসলাম ৪ বছর আগে পুলিশে যোগ দেন। এর আগে তিনি স্কুল সেফটি ও ট্রাফিক বিভাগেও কাজ করেছেন। তার বাড়ি বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায়। দিদারুলের দুই পুত্রসন্তান রয়েছে। স্ত্রী আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
আপনার মতামত লিখুন :