ঢাকা বুধবার, ২০ আগস্ট, ২০২৫

গাজা যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব - হামাস সম্মত, যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত ইসরায়েলের

ভিনদেশ ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ২০, ২০২৫, ০৮:৪৫ এএম

গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে হামাস সম্মত। তবে ইসরায়েলের অবস্থান এখনো স্পষ্ট নয়। গাজা যুদ্ধবিরতির সর্বশেষ প্রস্তাব মেনে নিয়েছে হামাস। পাশাপাশি তারা যুদ্ধের ইতি টানতে আলোচনা শুরু করতেও প্রস্তুত। ফিলিস্তিনের সংগঠনটি মধ্যস্থতাকারীদের এমনটা জানিয়েছে। নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, হামাস চাপে আছে বলেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইসরায়েলের গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনায় ভয় পেয়ে হামাস যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে বলে দাবি তেল আবিবের। এদিকে যুদ্ধবিরতির আলোচনার মধ্যে গাজায় ইসরায়েলের ধ্বংসযজ্ঞ চলছেই।

দেশটির সেনাবাহিনীর হামলায় বুধবার ২১ ফিলিস্তিনির প্রাণহানির খবর নিশ্চিত করেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। কোনো ধরনের শর্ত ছাড়াই গাজায় যুদ্ধবিরতির নতুন প্রস্তাবে সম্মত হামাস। বিবিসি  বলেছে, মধ্যস্থতাকারী- কাতার ও মিসরের কাছে এরই মধ্যে লিখিতভাবে সম্মতির কথা জানিয়েছে সংগঠনটি। মূলত মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফের জুনে প্রস্তাবিত কাঠামোর ওপর ভিত্তি করেই এ যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব। যার মধ্যে আছে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি, হামাসের কাছে থাকা ৫০ বন্দির মধ্যে ২৫ ইসরায়েলির মুক্তি। যুদ্ধবিরতির সময়ে দুই দফায় এসব বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার কথা আছে প্রস্তাবে।

এ সময়ে একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির বিষয়েও আলোচনা হতে পারে। যুদ্ধবিরতির বিষয়ে নেতানিয়াহু সরাসরি কথা না বললেও জানান, হামাসের সিদ্ধান্ত থেকে বোঝা যাচ্ছে, তারা চাপে আছে। আর দেশটির সেনাবাহিনী প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আইয়েল জামির জানিয়েছেন, তাদের মূল লক্ষ্য গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে হামলা আরও জোরদার করা। ইসরায়েলের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, তেল আবিবের গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনায় ভয় পেয়ে হামাস যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে। এ সপ্তাহের শেষের দিকে গাজা সিটি দখলে সেনাবাহিনীর পরিকল্পনার অনুমোদন দিতে পারে ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা। ইসরায়েলি গণমাধ্যমকে দেশটির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা হামাসের সিদ্ধান্তের বিষয়ে অবগত আছে।

যদিও গত সপ্তাহে তারা জানিয়েছিল, সব বন্দিকে ফেরত দিলেই কেবল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হবে ইসরায়েল। এদিকে যুদ্ধবিরতির আলোচনার মধ্যেও গাজায় থামছে না ইসরায়েলের আগ্রাসন। খান ইউনিস, দেইর আল বালাহতে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের তাঁবুতে হামলায় নতুন করে আরও কয়েকজন নিহত হয়েছে। এ ছাড়া গাজার উত্তরাঞ্চলে বেইত লাহিয়া অঞ্চলের কাছে ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করার সময় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিহত হয়েছেন আরও কয়েকজন। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক ত্রাণ ও মানব উন্নয়ন সংস্থা বলছে, গাজা যুদ্ধে এ পর্যন্ত সংস্থাটির ৩৬০ কর্মীর মৃত্যু হয়েছে।

কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান বিন জসিম আল থানি কায়রোতে মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সঙ্গে সাক্ষাতের পর হামাসের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব মেনে নেওয়ার এই ঘোষণা এলো। তবে আগের ব্যর্থ আলোচনাগুলো বিবেচনায় নিলে বোঝা যায়, এ ঘোষণার অর্থ এই নয় যে যুদ্ধ খুব শিগগিরই শেষ হতে চলেছে। কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান বিন জাসিম আল থানি কায়রোতে মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সঙ্গে বৈঠক করার পর হামাস তাদের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেয়। গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করতে আলোচনা পুনরায় শুরু করতে প্রস্তুত হামাস। তারা জানিয়েছে, সর্বশেষ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব তারা অনুমোদন দিয়েছে।

এ যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৬২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি মারা গেছে এবং মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষের কারণে আরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সোমবার এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে হামাস বলেছে, ‘হামাসসহ ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলো কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতাকারীদের দেওয়া প্রস্তাব মেনে নেওয়ার বার্তা দিয়েছে।’ ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস অব ইসরায়েল এবং চ্যানেল ১২ জানিয়েছে, ইসরায়েল হামাসের প্রতিক্রিয়া পেয়েছে। আলজাজিরাকে এক আলোচনাসংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে ৬০ দিনের জন্য সামরিক অভিযান সাময়িকভাবে স্থগিত করা। এ সময় ইসরায়েলি সেনারা অবস্থান পরিবর্তন করবে, যাতে মানবিক সহায়তা গাজায় প্রবেশ করতে পারে। এই সময়সীমার মধ্যেই বন্দি ৫০ জন ইসরায়েলির মধ্য থেকে ২৫ জনকে ফিলিস্তিনি বন্দিদের বিনিময়ে মুক্তি দেওয়া হবে।

সূত্রটি আরও বলেছে, নতুন এই প্রস্তাবটি ‘একটি পূর্ণাঙ্গ সমাধানের পথে সূচনা হতে পারে।’ কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান বিন জাসিম আল থানি কায়রোতে মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সঙ্গে বৈঠক করার পর হামাস তাদের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেয়। ইসরায়েলের অবরোধ আর অব্যাহত হামলা গাজার বেশির ভাগ এলাকাকে একদিকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে, অন্যদিকে খাবারের অভাবে উপত্যকাটিতে দেখা দিয়েছে চরম দুর্ভিক্ষ। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের হামলায় ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত প্রাণহানি ছাড়িয়েছে ৬২ হাজার। অন্যদিকে ক্ষুধা আর অনাহারেও প্রতিদিন মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। গত সোমবার (১৮ আগস্ট) পর্যন্ত অনাহারে ২৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার ১১২ জনই শিশু।

এদিকে গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করে হামাসের কাছে বন্দিদের মুক্তির দাবিতে তেল আবিবের একটি প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন ইসরায়েলিরা। আর গাজা যুদ্ধ শুরুর পর ইসরায়েলে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ হয়েছে গত রোববার (১৭ আগস্ট)। এদিন একই দাবিতে লাখ লাখ মানুষ ইসরায়েলজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ করেন।