চারদিকে ক্ষুধায় কাতর শিশুদের কান্না। শোকার্ত মায়ের আর্তনাদ। আর হাসপাতালের বারান্দায় নিথর দেহ। এটাই গাজার প্রতিচ্ছবি। একদিকে ইসরায়েলি হামলায় প্রতিদিন ঝরছে নিরীহ প্রাণ, অন্যদিকে খাবারের অভাবে ধুঁকে ধুঁকে মরছে মানুষ। গত ২৪ ঘণ্টায় দুই শিশুসহ আটজন মারা গেছে অনাহারে। একই সময়ে ইসরায়েলি সেনাদের হামলায় নিহত হয়েছেন ৬৩ ফিলিস্তিনি। খবর আলজাজিরার। আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী গাজা সিটির ভেতরে আরও অগ্রসর হয়েছে। প্রায় ১০ লাখ মানুষকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার অংশ হিসেবে শহর দখলের চেষ্টা চলছে।
আলজাজিরা আরবিতে প্রকাশিত ফুটেজে দেখা গেছে, ইসরায়েলি ট্যাংক সাবরা এলাকায় প্রবেশ করেছে। এর পাশেই অবস্থিত অবরুদ্ধ জাইতুন মহল্লা, যেখানে এক সপ্তাহ ধরে ব্যাপক হামলা চালানো হচ্ছে। শনিবার সকালে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় আসদা এলাকায় বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর অস্থায়ী তাঁবুতে গোলাবর্ষণ করে ইসরায়েলি সেনারা। এতে অন্তত ১৬ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে ছয়জন শিশু। হাসপাতাল সূত্র জানায়, সারা দিনে মানবিক সহায়তার খোঁজে বের হওয়া অন্তত ২২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে একজনকে গুলি করে হত্যা করা হয় খান ইউনিসের দক্ষিণ-পূর্বে বিতরণকেন্দ্রের কাছে। আরেকজন নিহত হন ইসরায়েল নিয়ন্ত্রিত নেতসারিম করিডরের কাছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মুনির আল-বরশ জানিয়েছেন, অনাহারে এখন পর্যন্ত মোট ২৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ১১৪ জন শিশু।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি লিখেছেন, ‘দুর্ভিক্ষ নীরবে বেসামরিক মানুষের দেহকে গ্রাস করছে, শিশুদের জীবন থেকে বঞ্চিত করছে এবং প্রতিদিন তাঁবু ও হাসপাতালগুলোকে পরিণত করছে একেকটি ট্র্যাজেডির মঞ্চে।’
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত হামলায় নতুন করে অন্তত ৬৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। নিহতদের মধ্যে অন্তত ২২ জন ছিলেন মানবিক সহায়তা নিতে আসা সাধারণ মানুষ। একই সঙ্গে অনাহারে আরও আটজনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। রোববার (২৪ আগস্ট) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। চিকিৎসা সূত্র আলজাজিরাকে জানিয়েছে, শনিবার গাজাজুড়ে এক দিনেই অন্তত ৬৩ জন নিহত হয়েছে।
একই সঙ্গে ইসরায়েলি সেনারা গাজা সিটির ভেতরে আরও গভীরভাবে প্রবেশ করেছে। শহরটি দখল ও প্রায় এক মিলিয়ন মানুষকে জোরপূর্বক উৎখাতের অংশ হিসেবে এই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। আলজাজিরা অ্যারাবিকের হাতে আসা ফুটেজে দেখা গেছে, ইসরায়েলি ট্যাংক গাজা সিটির সাবরা এলাকায় প্রবেশ করছে। এটি স্থল অভিযান আরও বিস্তৃত হওয়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অনাহারে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮১ জনে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মুনির আল-বুরশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, মৃতদের মধ্যে ১১৪ জন শিশু। তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘ক্ষুধা নিঃশব্দে বেসামরিক মানুষকে কাবু করছে, শিশুদের বেঁচে থাকার অধিকার কেড়ে নিচ্ছে, আর প্রতিদিন তাঁবু ও হাসপাতালগুলোকে নতুন ট্র্যাজেডির দৃশ্যে পরিণত করছে।’
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে। অপুষ্টির শিকার এসব শিশুর চিকিৎসা করতে অন্তত ১০টি হাসপাতাল দরকার। গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ আবু সালমিয়া ও নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সের শিশু হাসপাতালের পরিচালক আহমদ আল-ফারা এ কথাগুলো বলেছেন। আবু সালমিয়া বলেন, শিশুদের পাশাপাশি গাজার বিভিন্ন হাসপাতালে আহত হয়ে আরও যাঁরা ভর্তি হয়েছেন, তাঁরাও বিভিন্ন মাত্রায় অপুষ্টিতে ভুগছেন।
জাতিসংঘসহ একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশের অনুদান ও সহায়তায় পরিচালিত আইপিসির প্রতিবেদন প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে ইসরায়েল গাজায় দুর্ভিক্ষের দাবি অস্বীকার করেছে। কিন্তু জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস আইপিসির প্রতিবেদন আমলে নিয়ে এক বিবৃতিতে গাজার দুর্ভিক্ষকে ‘মানবসৃষ্ট বিপর্যয়’ ও ‘মানবতার ব্যর্থতা’ বলে মন্তব্য করেছেন। সংস্থাটির মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক ‘গাজার দুর্ভিক্ষকে ইসরায়েল সরকারের কর্মকা-ের সরাসরি ফলাফল’ বলে উল্লেখ করেছেন। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই প্রতিবেদনকে ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’ বলে প্রত্যাখ্যান করেন।
ডা. ফাররা আরও বলেন, ‘গাজায় প্রতি চারজন শিশুর মধ্যে একজন ইতিমধ্যে অপুষ্টিতে ভুগছে। শুধু দক্ষিণ গাজাতেই ৬০ থেকে ৭৫ হাজার শিশু ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এই সংখ্যা ভীতিকর এবং নজিরবিহীন।’ ইসরায়েলি সেনাদের নিষ্ঠুরতা থেকে মুক্তি পাচ্ছে না গাছও। হাজার হাজার নিরীহ ফিলিস্তিনিকে হত্যার পাশাপাশি অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লাহ থেকে ৩ হাজার জলপাইগাছ ধ্বংস করা হয়েছে। স্থানীয় কাউন্সিলের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
খবর আলজাজিরার।