শান্তি প্রস্তাবের মধ্যেই তীব্র হামলা

যুদ্ধবিরতির জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০ দফা পরিকল্পনা করেছে। বর্তমানে হামাসের আলোচনাকারী দল তা পর্যালোচনাও করছে। এমন সময়ই আবারও হামলার ঘটনা ঘটছে। ইসরায়েলের অব্যাহত বিমান ও স্থল হামলায় গাজায় রক্তপাত যেন থামছে না। গতকাল মঙ্গলবার ভোর থেকে গাজার বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৩৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।  কূটনৈতিক সূত্র আলজাজিরাকে জানিয়েছে, হামাসের আলোচক দল গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ শেষ করার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনা অধ্যয়ন করছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছেন, তিনি হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে এ পরিকল্পনায় সম্মত হয়েছেন, কারণ ইসরায়েলি বাহিনী গাজা উপত্যকায় আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে, ফলে মঙ্গলবার কমপক্ষে ৩৭ জন নিহত হয়েছেন। দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে তাদের তাঁবু আশ্রয়স্থলে ইসরায়েলি হামলায় একই পরিবারের তিন সদস্য নিহত হয়েছেন।

গাজার বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধ শেষ করার জন্য ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কায়ার স্টারমার বেশ কয়েকজন ইউরোপীয় এবং উপসাগরীয় নেতার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ওয়াদেফুল বলেছেন যে তার দেশ ট্রাম্পের প্রস্তাবের প্রতি ‘জোরালো’ সমর্থন দিতে প্রস্তুত।

ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফ বলেছেন, পরিকল্পনাটির ‘ব্যাপক’ সমর্থন রয়েছে তবে প্রস্তাবিত আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বাহিনী না আসা পর্যন্ত ইসরায়েলি বাহিনী ফিলিস্তিনি ভূখ- থেকে সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করবে না। যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির প্রাক্তন নেতা জেরেমি করবিন ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনায় টনি ব্লেয়ারের জড়িত থাকার খবরের সমালোচনা করে বলেছেন, সাবেক ব্রিটিশ নেতার ‘ইরাক আক্রমণের বিপর্যয়কর সিদ্ধান্তের ফলে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে’।

ইইউ সামরিক নৌ মিশন অ্যাসপাইডস জানিয়েছে, এডেন উপসাগরে আক্রমণের পর একটি ডাচ পতাকাবাহী পণ্যবাহী জাহাজ আগুনে পুড়ে ভেসে গেছে।

একটি নতুন জরিপে দেখা গেছে, গাজার বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধের প্রতি মার্কিন সমর্থন ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস এবং সিয়েনা রিসার্চ ইনস্টিটিউট দ্বারা পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে যে অর্ধেকেরও বেশি, ৫১ শতাংশ উত্তরদাতা ‘ইসরায়েলকে অতিরিক্ত অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা’ পাঠানোর বিরোধিতা করেছেন। প্রায় ৩৫ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তারা ইসরায়েলকে অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা পাঠানোর তীব্র বিরোধিতা করেছেন, যেখানে মাত্র ১৯ শতাংশ এর পক্ষে ছিলেন। ‘আপনার কি মনে হয় ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করছে?’ জিজ্ঞাসা করা হলে প্রায় ৪০ শতাংশ উত্তরদাতা হ্যাঁ উত্তর দিয়েছেন। আরও বেশি ৬২ শতাংশ বলেছেন যে তারা মনে করেন ইসরায়েল ‘বেসামরিক হতাহত এড়াতে পর্যাপ্ত সতর্কতা অবলম্বন করছে না।’

তুলনামূলকভাবে, মাত্র ২৫ শতাংশ বলেছেন তারা মনে করেন, ‘ইসরায়েল বেসামরিক হতাহত এড়াতে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করছে।’

ট্রাম্প প্রশাসন গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের জন্য অস্ত্র এবং অন্যান্য সামরিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রেখেছে, পাশাপাশি বিতর্কিত জিএইচএফকে কয়েক মিলিয়ন ডলার তহবিল প্রদান করেছে, যা সামরিকায়িত সাহায্য বিতরণ কেন্দ্র পরিচালনা করে যেখানে শত শত ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

গত সপ্তাহে, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন ইসরায়েলের কাছে অ্যাপাচি আক্রমণ হেলিকপ্টারসহ ৬ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অস্ত্র এবং ৩ হাজার ২৫০ পদাতিক আক্রমণকারী যানবাহনের জন্য ১.৯ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির জন্য কংগ্রেসের অনুমোদন চাইছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা নিয়ে নতুন শান্তি পরিকল্পনা দিয়েছেন, এরই মধ্যে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। গতকাল সকালে তোলা ছবিতে গাজা সিটির বিভিন্ন এলাকা থেকে থেকে ধোঁয়ার কু-লী উঠতে দেখা যাচ্ছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গতকাল জানিয়েছে, গত ওই এলাকায় ‘সুনির্দিষ্ট হামলা’ চালানো হয়েছে, যখন দেশটির বিমানবাহিনী গাজাজুড়ে ১৬০টির বেশি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে।