ঢাকা মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর, ২০২৫

প্রিয় হিরো  সুপারম্যান

মির্জা হাসান মাহমুদ
প্রকাশিত: অক্টোবর ৭, ২০২৫, ০১:৩০ এএম

সুপারম্যানকে চেনে না, এমন মানুষ পাওয়া সত্যিই কঠিন। ছোটবেলায় টিভির পর্দায় বা কমিক বইয়ের পাতায় তাকে আকাশে উড়তে দেখে একবার হলেও আমরা ভাবতাম- ইশ, আমিও যদি সুপারম্যানের মতো উড়তে পারতাম! লাল চাদর, নীল পোশাক পড়া সেই হিরোর ছবি এখনো রঙিন ফ্রেমে বাঁধা রয়েছে স্মৃতিতে। আজ সুপারম্যানের গল্পই শোনাব চল-

পৃথিবী থেকে বহু দূরের এক গ্রহ, নাম ক্রিপটন। সেই গ্রহ ধ্বংসের মুখে পড়লে এক বিজ্ঞানী নিজের শিশুপুত্রকে মহাকাশযানে তুলে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেন। সেই ছেলেটির নাম ক্যাল-এল। সে পৃথিবীতে এলে সাধারণ মানবশিশু মনে করে তাকে দত্তক নেয় জন ও মার্থা কেন্ট; যারা ছিল সাধারণ কৃষক দম্পতি। তারা ছেলেটির নাম রাখেন ক্লার্ক কেন্ট। পৃথিবীতে এসে ক্লার্ক এখানকার মানুষদের মতোই বড় হতে থাকে। তবে বড় হতে হতে ক্লার্ক বুঝতে পারে, দেখতে অন্যদের মতো হলেও সে আসলে অন্যদের মতো নয়। সাধারণ মানুষদের থেকে সে অনেকটা আলাদা। এভাবে চলতে চলতে ধীরে ধীরে সে নিজের ক্ষমতাগুলো টের পেতে থাকে। তার চোখে রয়েছে অতিমানবীয় দৃষ্টি, সে আকাশে উড়তে পারে, চোখ থেকে রশ্মি ছুড়তে পারে, এমনকি তার শক্তি দিয়ে পাহাড়ও সরানো সম্ভব।

এক সময় সে খুঁজে পায় তার পরিচয়। পৃথিবীতে ক্লার্ক কেন্ট ডেইলি প্ল্যানেট নামের একটি পত্রিকায় একজন সাধারণ সাংবাদিক হিসেবে কাজ করে। অফিসে সে শান্ত এবং একটু লাজুক স্বভাবের। কিন্তু কোথাও বিপদ ঘটলে সেই লাজুক সাংবাদিকই হয়ে ওঠে সবার প্রিয় সুপারম্যান। শহরে বিপদ নামলে তার উড়ন্ত আগমনই সবার মধ্যে ভরসা জাগায়। মানুষ জানে, যত বড় বিপদই আসুক; পাশে আছে একজন প্রকৃত নায়ক। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, এত শক্তিশালী হয়েও সুপারম্যান অত্যন্ত বিনয়ী ও শান্ত স্বভাবের। সে জানে অন্যদের মঙ্গলের জন্য ব্যবহার করাই শক্তির সার্থকতা।

সুপারম্যানের গল্প শুরু হয়েছিল ১৯৩৮ সালে। আমেরিকার দুই তরুণ লেখক জেরি সিগেল ও জো শুস্টার তাকে প্রথমবারের মতো কমিক বইয়ের পাতায় জীবন্ত করে তোলেন। তখন থেকেই ধীরে ধীরে সারা বিশ্বের শিশু-কিশোরদের হৃদয়ে জায়গা করে নেয় এই নায়ক। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সে পেরিয়ে এসেছে বইয়ের পাতা, রেডিও, টেলিভিশন, সিনেমা, এমনকি ভিডিও গেমের পর্দাও। আজও খেলনা

দোকানে গিয়ে দেখা যায় ছোট ছোট বাচ্চারা হাতে নেয় সুপারম্যানের অ্যাকশন ফিগার। আজও যখন পুরোনো কোনো সুপারম্যান সিনেমা দেখি, মনে পড়ে যায় সেই সরল সময়ের কথা। মনে হয়, সুপারম্যান শুধু কমিক বইয়ের চরিত্র নয়; সে আমাদের শৈশব, আমাদের বেড়ে ওঠার গল্পের অংশ।

তুমিও কী সুপারম্যান হতে চাও? যদি তাই চাও, তবে জেনে নাও- সুপারম্যানের আসল জাদু কিন্তু তার অতিমানবীয় শক্তিতে নয়, বরং তার নৈতিকতাই তার সবচেয়ে বড় শক্তি। সুপারম্যান কখনো হাল ছাড়ে না, কখনো মিথ্যার পক্ষে দাঁড়ায় না। সত্য, ন্যায় ও মানবতার প্রতি তার অনড় বিশ্বাসই তাকে আলাদা করে। হয়তো এই কারণেই পৃথিবীর প্রতিটি প্রজন্মের শিশুরা তার মধ্যে নিজেদের স্বপ্ন খুঁজে পায়।