বাড়ির পাশেই একটা খোলা মাঠ। প্রতিদিন বিকেল হলেই সেখানে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা করে। কেউ বলখেলায় মেতে ওঠে, কেউ ক্রিকেট খেলে। মাঠের মধ্যে খেলোয়াড়দের তুলনায় দর্শকের সংখ্যা বরাবরই বেশি। সেই দর্শকদের ভিড়ের মধ্যে একজন আলাদা বালক, আবু বকর।
আবু বকর খেলার মাঠের এক প্রান্তে বসে খেলা উপভোগ করে। গোল হলে সে হাততালি দেয়, আবার ক্রিকেটে চার বা ছয় উঠলেই আনন্দে লাফিয়ে ওঠে। মুখে বলে ওঠে, ছ... য়!, বা চা..র! উইকেট পড়লে তার মন খারাপ হয়ে যায়। তবে সে পক্ষপাত করে না। কারা খেলছে বা কে জিতল, এসব তার কাছে তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। শুধু খেলার আনন্দেই ভরে থাকে তার মন। বলা যায়, আবু বকর একজন পজিটিভ দর্শক, যার মধ্যে কোনো নেগেটিভিটি নেই।
মাঠের পাশেই ঘন ঝোপঝাড়। ভাটি গাছ, আস্টেল গাছ আর নানা অজানা গাছ একসঙ্গে দাঁড়িয়ে আছে। পড়ন্ত বিকেলের স্নিগ্ধময় আলো পড়ে সেগুলোকে আরও সুন্দর করে তুলেছে। ঝোপের উপর রঙবেরঙের ফড়িং উড়ে বেড়াচ্ছে। একসময় খেলা থেকে মন সরে গিয়ে আবু বকরের দৃষ্টি চলে যায় ফড়িংয়ের দিকে। ফড়িং দেখা, ওড়া দেখা কিংবা ফড়িং ধরার চেষ্টা করা, এসব জিনিস তার বরাবরের শখ। তাই খেলার মাঠ ছেড়ে আবু বকর ধীরে ধীরে ঝোপের দিকে এগোয়। সেখানে অসংখ্য ফড়িং উড়ছে, কিন্তু তার চোখ আটকে যায় একটি বিশেষ ফড়িংয়ে। ফড়িংটি নীল বর্ণের। নীল রং তার খুবই প্রিয়। সেই প্রিয় নীল ফড়িংটিকে ধরার জন্য আবু বকরের মনে প্রবল ইচ্ছা জাগে। কিন্তু ফড়িংটি যেন দারুণ বুদ্ধিমান। কাছে গেলেই ডানা মেলে উড়ে যায়। কখনো আস্টেল গাছের আগায় বসে, কখনো আবার বাতাসে ভেসে বেড়ায়। আবু বকর কাছে পৌঁছলেই মনে হয় ধরতে পারবে, ঠিক তখনই ফড়িংটি উড়ে গিয়ে তাকে হতাশ করে। বারবার একই খেলা চলে, ফড়িং যেন তাকে খাটিয়ে মারছে।
আবু বকরও নাছোড়বান্দা। ধৈর্য ধরে আবারও ফড়িংয়ের দিকে এগোয়। এবার মনে হয় সত্যিই সে ধরতে পারবে। পা টিপে টিপে ফড়িংয়ের পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়। ধীরে ধীরে আঙুল বাড়ায় ফড়িঙের লেজের দিকে। আঙুলের চাপ পড়তে আর কেবল এক মুহূর্ত বাকি, তখনই ফড়িংটি ডানা মেলে আকাশে উড়ে যায়। আবারও ব্যর্থ হলো আবু বকর। এভাবে চেষ্টা করতে করতে হঠাৎ চারপাশ অন্ধকার হয়ে আসে। মাঠ ফাঁকা হয়ে যায়। যে ছেলেমেয়েরা খেলছিল তারা সবাই বাড়ির পথে রওনা দেয়। আকাশে শেষ আলো মিলিয়ে যেতে থাকে।
ফড়িংয়ের দলও ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে যায়। আবু বকর হাল ছেড়ে দেয়। পরাজিত মনে মাথা নিচু করে বাড়ির পথে হাঁটা শুরু করে। তবু তার ভেতরে হালকা হাসি খেলে যায়। কারণ ফড়িং তাকে যতই ফাঁকি দিক, আগামীকাল আবার চেষ্টা করব। কাল না হয় সত্যিই ধরে ফেলব নীল ফড়িংটিকে।