সুষ্ঠু বিনোদনের কথা উঠলেই ওঠে আসে ১৯৯০ সালে প্রথম সম্প্রচার হওয়া জনপ্রিয় ব্রিটিশ হাস্যরস টেলিভিশন ধারাবাহিক নাটক ‘মিস্টার বিন’-এর কথা। ব্রিটিশ লেখক, অভিনেতা এবং কমেডিয়ান রোয়ান সেবাস্টিয়ান অ্যাটকিনসনের অভিনীত ১৫ পর্বের এই ধারাবাহিক এতটাই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল, গোলাপ ড’ওরসহ অনেক আন্তর্জাতিক পুরস্কার জিতে নেয়।
নাটকটি বিশ্বের ২০০টির বেশি দেশে বিক্রি হয়েছে এবং রোয়ান অ্যাটকিনসনের অভিনয় এতটাই মুগ্ধতা ছড়িয়েছে, সম্প্রচারের প্রায় তিন যুগ পার হয়ে গেলেও ‘মিস্টার বিন’-এর রেশ আজও কাটেনি। তাই তো নির্বাক হাস্যরসের এ জাদুকরের মতোই এখনো পৃথিবীর নানা প্রান্তে অনেকেই হয়ে উঠতে চান জুনিয়র মি. বিন। বাংলাদেশের সালমান আহমেদ তাদেরই একজন। সিলেটের শাহপরাণ থানার খাদিমপাড়ায় জন্ম নেওয়া এ তরুণের মি. বিনের প্রতি কাজ করে অন্যরকম আবেগ এবং নিখাত ভালোবাসা।
এমনকি তার চেহারার গঠনে ছাপ পাওয়া যায় মি. বিনের। তাই বন্ধুদের অনুপ্রেরণা এবং মায়ের সাপোর্ট পেয়ে নিজেকে গড়ে তুলেছেন একজন কমেডিয়ান কনটেন্ট নির্মাতা হিসেবে। পরচিতি পেয়েছেন বাংলাদেশের ‘জুনিয়র মি. বিন’ নামে এবং তৈরি করেছেন নিজস্ব ভক্তবৃন্দ। দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে আলাপচারিতায় এসব গল্প জানাতে সালমান বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমার জীবনযাপন, হাবভাব, হাঁটাচলা অনেকটা মি. বিনের মতো ছিল। আমার নাকের গঠন একেবারে মি. বিনের মতো বলে পাড়ার সবাই আমাকে মি. বিন বলেই ডাকত। তখন আমি অতটা গুরুত্ব দেইনি। তারপর একসময় ভাবলাম, চেহারার গঠন যেহেতু তার মতো একাবার একটু ভয়েসটা দেওয়ার চেষ্টা করে দেখি। প্রথমে হচ্ছিল না। কিন্তু আমি হাল ছাড়েনি, এত চেষ্টা করেছি, একসময় গলা ব্যথা হয়ে যায়, তিন-চার দিন কথা বলাই কষ্টকর হয়ে পড়ে।
তারপর অবশেষে একটা ভয়েস রেকর্ড করে এক বন্ধুকে শুনতে দেই। সে শুনে বলে উঠলÑ‘ভয়েস তো হুবহু মি. বিনের মতো! তোর তো চেহারা মিলছে, একবার চেষ্টা করে দেখ।’ কথাটা শোনার পর শুরু করি সিরিয়াসভাবে নিজে নিজেই অনুশীলন করি ২০১৮ সালেরে দিকে, তখন আমি জেএসসি পরীক্ষার্থী। তবে, শুধু বললেই তো আর অনুশীলন করলেই তো মি. বিন হওয়া যায় না। সে জন্য দরকার সুট-বুটসহ আনুষঙ্গিক পোশাক। আমার এসব কিছুই ছিল না। শুরুতে আমি আমার স্কুলের শার্ট ব্যবহার করি। কিছু টাকা জমিয়ে বানাই একটা ফরমাল প্যান্ট। টাইটা নেই ছোট চাচার কাছ থেকে, আর ব্লেজারটা ছিল দাদার। এ ছাড়া দাদার বাসা থেকেই সংগ্রহ করি একটি পুরোনো বিটকেস।
এরপর সবকিছু গুছিয়ে ‘ঔজ ইবধহ’ নামে একটা ফেসবুক পেজ ও টিকটক অ্যাকাউন্ট খুলি এবং ভিডিও বানানো শুরু করি। ভিডিও বানানোর শুরুরে তেমন সাড়া পাইনি, ভেবেছিলাম হয়তো তেমন সাড়া হয়তো পাব না। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই টিকটিকে আমার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়। তারপর ধীরে ধীরে টিকটক এবং ফেসবুকে সমানতালে আমার ভিডিও জনপ্রিয় হয়ে ওঠতে থাকে। বাড়তে থাকে ভালোবাসার মানুষ এবং শুভাকাক্সক্ষীর সংখ্যা, যা বর্তমানে ২ মিলিয়ন ছাড়িয়েছে। আমার এ যাত্রাপথের শুরু থেকে আমার মায়ের ভূমিকা ছিল অনন্য। তার সাপোর্ট এবং পাশে থাকাই আমার এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। তবে বাবা ততটা সাপোর্ট করত না এসবে।
এমনকি এখনো করছেন না। শুধু মা আর শুভাকাক্সক্ষীদের অনুপ্রেরণা আর সহযোগিতায় আমি আজ এ অবস্থানে এসেছি।’ যোগ করে তিনি আরও বলেন, ‘কনটেন্ট ক্রিয়েশন যাত্রায় আমার কোনো পুরস্কার জেতার ইচ্ছে নেই, বড় অভিনেতাও হতে চাই না। আমি শুধু চাই, মি. বিনের মতো দেশ-বিদেশের মানুষকে সুষ্ঠু বিনোদন দিতে, আনন্দ দিতে। এটাই আমার লক্ষ্য। আর একটা স্বপ্ন আছে জীবনে যদি
কখনো সুযোগ আসে,
একবার মি. বিনের সঙ্গে
দেখা করতে চাই।’