ঢাকা শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর, ২০২৫

হতে চাইলে আধুনিক স্থাপনার কারিগর

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ১০, ২০২৫, ০৮:০৭ এএম

ভবন, রাস্তা, রেলপথ ও সেতু থেকে শুরু করে বিমানবন্দর, নৌবন্দর, খনি কিংবা ভূগর্ভস্থ টানেল- সবকিছুই সিভিল ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা নির্মিত। মজার ব্যাপার হচ্ছে পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা, এমনকি বন্যা প্রশমনের কাজগুলোর জন্য আমাদের আধুনিক সমাজ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের ওপর নির্ভরশীল। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অন্যতম সৌন্দর্য হচ্ছে সৃষ্টিশীলতা এবং পেশাগত জীবনের বৈচিত্র্য। আর এ কারণেই পৃথিবীব্যাপী প্রকৌশলবিদ্যায় আগ্রহী শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় থাকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং। এ বিভাগে পড়াশোনা ও ক্যারিয়ারসহ নানা বিষয় নিয়ে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলেছেন স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী এবং সড়ক ও জনপথ মন্ত্রণালয়ের একজন কলসাল্টেন্ট ইঞ্জিনিয়ার আজিজুল ইসলাম আজিজ

শুরুর অভিজ্ঞতা 
প্রত্যেকটা চাকরিরই শুরুর অভিজ্ঞতা কিছুটা কঠিন হয়। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজস্ব অভিজ্ঞতা দিয়ে ক্ষেত্রটা সহজ করে নিতে হয়। আমার ক্ষেত্রে চাকরি জীবনের শুরুটা হয়েছে পদ্মা বহুমুখী ব্রিজের একজন সাইট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে। সে সময় আমার জন্য কিছুটা চ্যালেঞ্জিং থাকলেও পরবর্তী চার বছর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে পদ্মা রেল লিংক প্রকল্পের জুনিয়র কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করেছি। এভাবেই ধীরে ধীরে এগিয়ে যাওয়া। 

শিক্ষাগত যোগ্যতা 
অবশ্যই বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি এবং এইচএসসি সম্পন্ন করার পর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত মানদ-ের ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়তে পারবেন। বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে। 

বিষয়ভিত্তিক পড়াশোনা 
বলা হয় সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং হলো সব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সূচনা। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অনেক শাখা রয়েছে, ৪ বছরের স্নাতক ডিগ্রির শেষ বছরে একজন সিভিল ডিপার্টমেন্টের ছাত্রকে তার ভবিষ্যৎ দক্ষতা এবং কর্মক্ষেত্র নির্ধারণ করতে হয়। যদিও সব ক্ষেত্রেই তাকে সাধারণ শিক্ষাটুকু প্রথম তিন বছরে দেওয়া হয় তবে শেষ বছরে তাকে মেজর মাইনোর নির্বাচন করে কিছু গভীরতর জ্ঞান অর্জন করতে হয়। যেগুলোয় দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী তার কাজের স্থান নির্ধারণ করে নেন। প্রধান শাখাগুলো হচ্ছে স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং বা কাঠামোগত প্রকৌশল। এ শাখাটিতে স্থাপনার নকশা, নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে আলোচনা করা হয়। ট্রান্সপোর্টেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বা যোগাযোগ প্রকৌশল শাখাটি পরিবহন নেটওয়ার্কের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকল্পগুলোর নকশা ও নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণের পরিকল্পনা ও তত্ত্বাবধানের সঙ্গে সম্পর্কিত। জিওটেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বা ভূ-প্রযুক্তিগত প্রকৌশল শাখায় নির্মাণ প্রকল্পে ভূতাত্ত্বিক গঠনের প্রভাব এবং কাঠামোগত ভিত্তির ডিজাইন ও স্থায়িত্ব নিয়ে কাজ করা হয়। পরিবেশগত প্রকৌশলে পরিবেশের সমস্যা চিহ্নিতকরণ এবং এগুলো মোকাবিলায় কার্যকর ও দায়িত্বশীল সমাধান তৈরি করা এ শাখার কাজ। এ ছাড়া অন্য উল্লেখযোগ্য শাখা হচ্ছে জরিপ কৌশল, পানিসম্পদ প্রকৌশল, ভূমিকম্প প্রকৌশল ইত্যাদি।

চাকরির বাজার
আজিজ বলেন এই ডিপার্টমেন্টে ডিগ্রি অর্জনের পর কাউকে বেশি দিন বেকার থাকতে হয় না, যদি তার পরিশ্রম করার ইচ্ছা থাকে, তবে অভিজ্ঞতা অর্জন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অভিজ্ঞ প্রকৌশলীদের সবত্র মূল্যায়ন করা হয়, তাই চাকরি বা ইন্টার্নের শুরুতে কাজ শেখা এবং নিজেকে যেকোনো পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে পেশা হিসেবে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের কর্মক্ষেত্র ব্যাপক। সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা সরকারি ও বেসরকারি উভয় প্রতিষ্ঠানেই নিজেদের জন্য একটি সফল ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারেন। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, পানি উন্নয়ন বোর্ড, গণপূর্ত অধিদপ্তর, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, এলজিইডি, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ রেলওয়ে, সিটি করপোরেশন ইত্যাদি। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা, সেনা, নৌ কিংবা বিমানবাহিনীতে মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস, পাওয়ার সেক্টর (বিদ্যুৎ উৎপাদন খাত, পেট্রোবাংলা) ইত্যাদি ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গড়ার জন্য রয়েছে সুবর্ণ সুযোগ। চাইলে সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা নিজস্ব কনসালট্যান্সি ফার্মের মাধ্যমেও নিজেদের ক্যারিয়ারের বিকাশ ঘটাতে পারেন। এ ছাড়া বেসরকারি খাতের মধ্যে বাংলাদেশের রিয়েল এস্টেট সেক্টরে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের প্রচুর চাহিদা রয়েছে।