সারা পৃথিবী থেকে অনেক মানুষের স্বপ্ন থাকে লন্ডনে পড়াশুনা করার। সেখানে পড়াশুনার ধরন, নিয়ম, পরিবেশের অবস্থা বুঝতে অনেকের সময় লেগে যায় অনেক, ফলে অনেকে বুঝে উঠতে পারেন না, কী করবেন, কীভাবে করবেন। যারা লন্ডনে পড়াশোনা করতে চান, তারা লন্ডনে পা রাখার পর কী করবেন, তা জানতে রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলেছেন লন্ডনের অ্যাংলিয়া রাসকিন ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষার্থী
ও আন্তর্জাতিক লজিস্টিক কোম্পানি ডিবি সেংকারের সিনিয়র ম্যানেজার রিয়াদ রায়হান
ইংল্যান্ডে একজন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর জীবন অবিশ্বাস্যভাবে সমৃদ্ধ হতে পারে, তবে এর সঙ্গে কিছু চ্যালেঞ্জও আসে। বিভিন্ন দিক থেকে কী আশা করা যায়, তার একটি সারসংক্ষেপ এখানে দেওয়া হলো:
শিক্ষাজীবন
এখানে আছে উচ্চমানের শিক্ষা; ইংল্যান্ডে অক্সফোর্ড, কেমব্রিজের মতো বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় এবং অনেক স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেমিনার, বক্তৃতা, দলগত কাজ এবং স্বাধীন গবেষণা এখানে শিক্ষাদানের প্রদ্ধতি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো লেখার কেন্দ্র, ব্যক্তিগত শিক্ষক এবং আন্তর্জাতিক ছাত্র উপদেষ্টাদের মাধ্যমে সহায়তা দেবে। এখানে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে, তা হলো শিক্ষাগত একটি চাপ আছে গ্রেডিং সিস্টেম এবং স্বাধীনভাবে পড়াশোনার ওপর জোর দেওয়া হয়। যারা নন-ইংলিশ তাদের একটু ভাষাগত বাধায় পড়তে হয়। তারা সাবলীল ইংরেজি ভাষাভাষীদের জন্য একাডেমিক ভাষা এবং ব্রিটিশ ভাষা সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সময় লাগে। এখানে সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা দারুণ; এখানে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়; আপনি সারা বিশ্বের মানুষের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। লন্ডন এলে আশপাশের অনেক দেশে ভ্রমণের সুযোগ আছে ইউরোপ ঘুরে দেখার জন্য সস্তা বিমান এবং ট্রেন থেকে পাওয়া যায়।
লন্ডনের সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা দারুণ এখানে আর্ট গ্যালারি, জাদুঘর, থিয়েটার, উৎসব এবং ঐতিহাসিক স্থান প্রচুর লক্ষ করা যায়। লন্ডনে এলে বেশির ভাগ মানুষ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে তা হলো এখানে সংস্কৃতির ধাক্কা ব্রিটিশ রসবোধ, খাবার, আবহাওয়া এবং রীতিনীতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া প্রথমে কঠিন হতে পারে। আর নিজ দেশের প্রতি আকৃষ্টতা বেড়ে যায়, ফলে পরিবার এবং আপনার বাড়ির সংস্কৃতি মনে পড়ে, যা অনেক সময় মানসিক অবসাদে ভুক্তে হতে পারে ।
ক্যারিয়ারের সুযোগ
লন্ডনে অনেক খ-কালীন কাজের সুযোগ আছে, শিক্ষার্থীরা সাধারণত টার্ম চলাকালীন সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করতে পারে। ইন্টার্নশিপ এবং ক্যারিয়ার সহায়তা করেও আয় করতে পারে যেমন, অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যারিয়ার পরিষেবা রয়েছে যা সিভি, সাক্ষাৎকার এবং প্লেসমেন্টের ক্ষেত্রে সহায়তা করে।
পোস্ট-স্টাডি ওয়ার্ক ভিসা (স্নাতক রুট)
স্নাতকোত্তর পর চাকরি খুঁজে পেতে আপনাকে ২ বছর পর্যন্ত থাকতে দেয়। এখানে অনেক চাকরির প্রতিযোগিতা আছে কারণ সারা পৃথিবী থেকে এখানে মানুষ কাজের জন্য আসে। খ-কালীন কাজের জন্য উচ্চ প্রতিযোগিতা চলে বিশেষ করে ছোট শহরগুলোয়। লন্ডনে ভিসার সীমাবদ্ধতা লক্ষ্য করা যায় মাঝে মাঝে ভিসার শর্তাবলির মধ্যে কাজের সময় এবং কাজের ধরন পরিচালনা করা মাঝে মাঝে জটিল হতে পারে।
থাকার ব্যবস্থা
এখানে বিশ্ববিদ্যালয় হলো সুবিধাজনক এবং সামাজিক কিন্তু পাওয়া যায় না আর বাইরে হলো ভাড়া ব্যয়বহুল। কারো ব্যক্তিগত আবাসন পাওয়া যায়। জীবনযাত্রার খরচ শহর অনুসারে পরিবর্তিত হয়। লন্ডন সবচেয়ে ব্যয়বহুল, যেখানে শেফিল্ড বা নিউক্যাসলের মতো শহরগুলো আরও সাশ্রয়ী।
সামাজিক জীবন
লন্ডনের সামাজিক জীবন নানা সংস্কৃতিতে ভরপুর। সমাজ এবং ক্লাব আপনি বিতর্ক থেকে শুরু করে হাইকিং এবং সাংস্কৃতিক সমাজে যোগ দিতে পারেন। ছাত্র ইউনিয়ন অনুষ্ঠান, অ্যাডভোকেসি এবং সস্তা খাবার-পানীয়ের জন্য সামাজিক কেন্দ্র এখানে আছে। এখানে মানুষ নতুন নতুন বন্ধু পায়, যা বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মানুষ।
চ্যালেঞ্জ
এখানে স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে মিলে মিশে থাকাটা প্রথমে কঠিন হতে পারে। এখানে বিভিন্ন দেশের মানুষ থাকায় অনেক সময় সাংস্কৃতিক ভুল বোঝাবুঝি বিভিন্ন সামাজিক রীতিনীতি বা ভাষার সূক্ষ্মতা ভুল হয়, যা সম্পর্কে প্রভাব ফেলে।
মানসিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতা
বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় বিনা মূল্যে কাউন্সেলিং পরিষেবা প্রদান করে। আপনি যদি অভিবাসন স্বাস্থ্য সারচার্জ পরিশোধ করেন তবে ঘঐঝ অ্যাক্সেস পাওয়া যাবে।
লন্ডনে অবস্থানকালে কি করবেন
সাহায্যের জন্য যোগাযোগ করতে দ্বিধা করবেন না। একটি রুটিন তৈরি করুন এবং স্থানীয় বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন।
দৈনন্দিন জীবন আবহাওয়া: বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকে, বিশেষ করে শরৎ এবং শীতকালে। প্রায়ই ধূসর এবং ঠান্ডা থাকে।
খাবার: সুপারমার্কেটগুলোয় বিভিন্ন ধরনের খাবার থাকে, তবে বাইরে খাওয়া ব্যয়বহুল হতে পারে। ব্রিটিশ খাবার প্রায়ই হালকা, তবে আন্তর্জাতিক বিকল্পগুলো ব্যাপকভাবে পাওয়া যায়।
পরিবহন: গণপরিবহন নির্ভরযোগ্য, বিশেষ করে শহরগুলোয়। আগে থেকে বুকিং না করলে ট্রেন ব্যয়বহুল হতে পারে।