জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) তথ্যভান্ডারে নাগরিকদের তথ্য যাচাই সীমিত করে দেওয়ায় ব্যাংকগুলোর অনলাইনে তাৎক্ষণিক গ্রাহক হিসাব খোলা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। বিদেশে বসে দেশের ব্যাংকগুলোতে প্রবাসীদের হিসাব খোলার সুযোগও এখন বন্ধ রয়েছে। এমনকি সনাতন পদ্ধতিতে হিসাব খুলতে গিয়েও ভোগান্তিতে পড়ছে ব্যাংকগুলো।
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন জাতীয় তথ্যভান্ডার পরিচালনা করে থাকে। কয়েক ধাপে তথ্য ফাঁস হওয়ার পর তথ্যভান্ডারের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা, সাইবার হুমকি মোকাবিলা এবং তথ্যের অপব্যবহার রোধে নাগরিকদের তথ্য যাচাই সীমিত করার পদক্ষেপ নেয় নির্বাচন কমিশন। চলতি সপ্তাহে অনেক ব্যাংককে তাদের সার্ভারে প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর পরিবর্তে অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেসের (এপিআই) মাধ্যমে তথ্য যাচাইয়ের সুযোগ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। যেখানে শুধু নাম, জন্মতারিখ ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর (এনআইডি) যাচাই করা যাচ্ছে।
কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) শুধু ওই তথ্যের ভিত্তিতে হিসাব খুলতে দিচ্ছে না। মূলত এপিআইয়ের বাকি তথ্য বাংলা ভাষায় থাকায় ব্যাংকগুলো তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে যাচাই করতে পারছে না। এতেই সংকট তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশন, বিএফআইইউ ও ব্যাংকগুলোর মধ্যে একাধিকবার সভা হলেও বিষয়টির সুরাহা হয়নি।
দেশের বেশির ভাগ ব্যাংকে সনাতন পদ্ধতিতে হিসাব খোলার পাশাপাশি অনলাইনে তাৎক্ষণিক হিসাব খোলার সুযোগ রয়েছে। তাৎক্ষণিক হিসাব খোলার অ্যাপসও রয়েছে ব্যাংকগুলোর। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের সেলফিন, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের নেক্সাস পে, সিটি ব্যাংকের এখনই অ্যাকাউন্ট, সোনালী ব্যাংকের ই-সেবা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) সিম্পল অ্যাকাউন্ট, ইস্টার্ন ব্যাংকের ইবিএল ইন্সটা অ্যাকাউন্ট ইত্যাদি। এ ছাড়া ব্র্যাক ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি ব্যাংকের পৃথক অ্যাপস ও সেবা রয়েছে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, গ্রাহকের স্থায়ী ঠিকানা জানার সুযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। সর্বোচ্চ উপজেলার নাম জানা যায়, যা দিয়ে হিসাব খোলা সম্ভব না। আবার গ্রাহক যে ফন্ট ব্যবহার করে নাম লিখছেন, নির্বাচন কমিশনের এপিআইয়ে সেই ফন্টে লেখা অন্য নাম হয়ে যাচ্ছে। আবার ব্যাংকগুলোতে বাংলা ভাষার চর্চা নেই। এ জন্য তাৎক্ষণিক হিসাব খোলা বন্ধ করে দিয়েছে অনেক ব্যাংক।
এ নিয়ে গত ৪ জুন ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে একটি চিঠি দিয়েছে। ওই চিঠির সূত্রে জানা যায়, নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ব্যাংকগুলো থেকে প্রাপ্ত নাগরিকদের ৮ ধরনের তথ্য যদি পুরোপুরি মিলে যায়, তবে এপিআইয়ের মাধ্যমে ছবি এবং ১০ ও ১৭ ডিজিটের পরিচয়পত্র নম্বরের সব তথ্য দেওয়া হবে। ব্যাংকগুলো অনুরোধ জানিয়েছে, ইংরেজিতে গ্রাহকের নাম, পরিচয়পত্র নম্বর ও জন্ম তারিখ মিল হলেই একজন নাগরিকের ১০ ও ১৭ ডিজিটের পরিচয়পত্রের সব তথ্য দিতে হবে।
পাশাপাশি আঙুলের ছাপ মেলানোর সুযোগ আবারও চালু করার জন্য বলেছে, যা ব্যাংকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, সব ব্যাংক ইংরেজি ভাষায় সব তথ্য ইনপুট দেবে, তাই সংরক্ষিত বাংলা তথ্যের সঙ্গে মিল হওয়ার সম্ভাবনা কম। পাশাপাশি সার্ভারে প্রবেশাধিকারের সুযোগ ৩০ জুলাই পর্যন্ত বাড়ানোর দাবি জানানো হয়।