বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকের ইস্যু করা ক্রেডিট কার্ড দিয়ে বিদেশে সবচেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও থাইল্যান্ডে। আগে একসময় সবচেয়ে বেশি খরচ হতো ভারতে, কিন্তু ভিসা জটিলতায় তা ৭ নম্বরে নেমে এসেছে। আর ব্যাংকগুলোর ইস্যু করা ডেবিট কার্ড বিদেশে বেশি ব্যবহার হচ্ছে যুক্তরাজ্যে, প্রি-পেইড কার্ড বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে সৌদি আরবে। এই হিসাব গত জুন মাসের; এটি শুধু দেশের বাইরে খরচের হিসাব। গতকাল বুধবার ক্রেডিট কার্ডে দেশে-বিদেশে লেনদেনসংক্রান্ত চলতি বছরের জুন মাসের হালনাগাদ প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশ করেছে। এই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৫৬ ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের ক্রেডিট কার্ড সেবা দিয়ে থাকে, যাদের তথ্য নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিভাগ দেশের ক্রেডিট কার্ডের এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে।
প্রতিবেদনে দেশের অভ্যন্তর ও বিদেশে বাংলাদেশের নাগরিকদের এবং দেশের ভেতরে বিদেশি নাগরিকদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে দেখা যায়, বাংলাদেশিরা বিদেশে ভ্রমণ ও কেনাকাটায় ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার আবার বাড়িয়েছেন। বিদেশে ভ্রমণ ও লেনদেনে বাংলাদেশি নাগরিকদের খরচের ধরন পরিবর্তন হচ্ছে। দেশ-বিদেশে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার ধারাবাহিক বাড়ছে। তবে তুলনামূলকভাবে যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড ও সৌদি আরবে এই খাতে ব্যয় বাড়লেও ব্যাপক হারে কমেছে প্রতিবেশী দেশ ভারতে। একসময় বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ডে খরচের শীর্ষে ছিল ভারত।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন মাসে বিদেশের মাটিতে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশিরা ৫৪৯ কোটি টাকা খরচ করেছেন। এই পরিমাণ আগের মে মাসের তুলনায় ২৯ দশমিক ৩০ শতাংশ বেশি। মে মাসে খরচ হয়েছে ৩৮৬ কোটি টাকা। প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের জুন মাসে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বিদেশে সবচেয়ে বেশি খরচ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে বাংলাদেশীরা খরচ করেছেন ৭৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশিরা থাইল্যান্ডে ৫২ কোটি, সৌদি আরবে ৫১ কোটি, মালয়েশিয়ায় ৪৮ কোটি, যুক্তরাজ্যে ৪৬ কোটি, সিঙ্গাপুরে ৪৫ কোটি, ভারতে ৩৩ কোটি, কানাডায় ২৭ কোটি, নেদারল্যান্ডসে ২২ কোটি, সংযুক্ত আরব আমিরাত দুবাইয়ে ১৯ কোটি, অস্ট্রেলিয়ায় ১৬ কোটি, আয়ারল্যান্ড ১৪ কোটি এবং অন্যান্য দেশে ৯৬ কোটি টাকা খরচ করেছেন।
ক্রেডিট কার্ডের মধ্যে জুন মাসে বিদেশে সবচেয়ে বেশি খরচ হয়েছে ভিসা কার্ড ব্যবহার করে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৭৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে ভিসা কার্ড ব্যবহার করে, ১৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ মাস্টারকার্ড এবং ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ এমেক্স কার্ড ব্যবহার করা হয়েছে। এদিকে ক্রেডিট কার্ডে গত জুন মাসে বিদেশে বাংলাদেশিরা সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ করেছেন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে, টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ১৮৩ কোটি টাকা। এরপর ক্রেডিট কার্ডের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবহার হয়েছে খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানে, টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ৯৬ কোটি টাকা। এরপর ক্রেডিট কার্ডের তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যবহার হয়েছে পরিবহন খাতে, টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ৬০ কোটি টাকা। এ ছাড়া ওষুধ কেনা বাবদ ৫৯ কোটি, ব্যবসা সেবায় ৪০ কোটি, পোশাক কেনা বাবদ ৪০ কোটি, নগদ অর্থ উত্তোলন বাবদ ৪০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।
এদিকে ডেবিট কার্ড দিয়ে গত জুন মাসে দেশের বাইরে খরচ হয়েছে ৩৪৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি যুক্তরাজ্যে খরচ হয়েছে ৪৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে ৩৯ কোটি, চীনে ২৮ কোটি, ভারতে ২৭ কোটি, সৌদি আরবে ২৭ কোটি, মালয়েশিয়ায় ২৫ কোটি, আয়ারল্যান্ডে ২৪ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। প্রিপেইড কার্ড দিয়ে দেশের বাইরে খরচ হয়েছে ৫৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে সৌদি আরবে খরচ হয়েছে ১৪ কোটি টাকা, ভারতে ৬ কোটি, যুক্তরাষ্ট্রে ৬ কোটি, নেদারল্যান্ডসে ৫ কোটি এবং যুক্তরাজ্যে ৪ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে।
বিদেশে বাড়লেও দেশে কমেছে ক্রেডিট কার্ডে খরচ
বিদেশে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার বাড়লেও দেশের মধ্যে ব্যবহার কমেছে। মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার কমেছে ৪ শতাংশ। মে মাসে যেখানে লেনদেন ছিল ৩ হাজার ২২০ কোটি টাকা, জুন মাসে তা কমে ৩ হাজার ১১৪ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের ভেতরে ১১টি খাতে সবচেয়ে বেশি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার হচ্ছে। এর মধ্যে ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে ১ হাজার ৪৪৮ কোটি, খুচরা পণ্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানে ৩৬০ কোটি, বিভিন্ন সেবা প্রদানে ৩০৭ কোটি, সরকারি সেবা পরিশোধে ২৫৬ কোটি, নগদ অর্থ উত্তোলন ১৯৭ কোটি, ওধুষ কেনা বাবদ ১৮৪ কোটি, তৈরি পোশাক কেনা বাবদ ১৪৮ কোটি, ব্যবসা সেবায় ৯৩ কোটি, পরিবহন খাতে ৮৯ কোটি এবং অর্থ হস্তান্তর বাবদ খরচ হয়েছে ৯ কোটি টাকা।
ক্রেডিট কার্ডের মধ্যে জুন মাসে দেশে সবচেয়ে বেশি খরচ হয়েছে ভিসা কার্ড ব্যবহার করে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে ভিসা কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে। ৫২১ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে মাস্টার কার্ড এবং ২৪২ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে সিটি এমেক্স কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন