বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


এফ এ শাহেদ 

প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০২৫, ১২:৫৯ এএম

নির্বাচন ঘিরে মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা জাপার

এফ এ শাহেদ 

প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০২৫, ১২:৫৯ এএম

নির্বাচন ঘিরে মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা জাপার

  • কঠিন পরিস্থিতিতে আবারও ভাঙল জাপা
  • আমরা মূল জাতীয় পার্টি, লাঙ্গলও আমাদের: চুন্নু
  • যারাই জাপাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চেয়েছেন, তারাই নিশ্চিহ্ন হয়েছেন: শামীম হায়দার পাটোয়ারী
  • নানা ঘটন-অঘটনের মাধ্যমে আলোচনায় থাকতে চাইছে দলটি: অধ্যাপক শামসুল আলম

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পর থেকে রাজনীতির মাঠে একঘরে প্রয়াত সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের হাতে গড়া জাতীয় পার্টি (জাপা)। দীর্ঘদিন থেকে দলটি মাথাচাড়া দিয়ে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করলেও হালে পানি পাচ্ছে না। এরই মধ্যে আরেক দফা ভেঙে দলটি এখন সাত খ-। তবে সর্বশেষ দলটির শীর্ষ নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার নেতৃত্বে এ কমিটিকে নির্বাচন ঘিরে রাজনীতিতে ঘুরে দাঁড়ানোর কৌশল হিসেবে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

তারা বলছেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগের দোসর উল্লেখ করে কোণঠাসা করে রেখেছে। সরকারের কোনো সভায় ডাক পাচ্ছেন না তারা। প্রকাশ্য কোনো সভা-সমাবেশ করতে পারছেন না তারা। দলের অনেক শীর্ষ নেতা জুলাইয়ে ছাত্র-জনতাকে হত্যার মামলা নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে মূল জাতীয় পার্টিকে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় দেখে একটি অংশ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আবারও ঘুরে দাঁড়াতে দলকে ভেঙে আরেক খ- করেছেন।   
দেশের রাজনীতির মাঠ যেখানে উত্তাল, দলের শক্তি প্রদর্শন করে ভোটের মাঠে নিজেদের জনপ্রিয়তা বজায় রাখতে ঐক্যের পরিবর্তে আবারও দেখা দিল ভাঙন। জাপার বহিষ্কৃত নেতাদের নেতৃত্বে এক সম্মেলনের মাধ্যমে সপ্তমবার ভাঙন হলো দলটিতে। দল থেকে বহিষ্কৃতদের নেতৃত্বে নতুন কমিটি করে দাবি করেন তারাই মূলধারার জাপা। জাপার এ অংশের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন বহিষ্কৃত সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। ফলে জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাপা এখন দুই ভাগ।

সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠার ৩৯ বছরে সাতবার ভাঙল দলটি। নতুন অংশে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নাম অনুযায়ী, অর্থাৎ জাপা (আনিস) নামে পরিচিতি পাচ্ছে। জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাপার মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন অংশই মূল জাপা। মূল স্রোতের বাইরে গিয়ে যারা জাতীয় পার্টিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চেয়েছেন, তারাই নিশ্চিহ্ন হয়েছেন। পার্টির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। তবে সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেবে পল্লিবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও জিএম কাদেরের অনুসারীরা। জাতীয় পার্টি জিএম কাদেরের নেতৃত্বে তৃণমূল নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন।

এদিকে জাপার নতুন অংশের নির্বাহী চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চুন্নু রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নতুন কমিটি গঠনের পর জিএম কাদের ও শামীম পাটোয়ারীর জাতীয় পার্টির কোনো অস্তিত্ব নেই। আমরাই মূল জাতীয় পার্টি, লাঙ্গলও আমাদের।’ তিনি বলেন, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর দেশে নতুন প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় নির্বাচন নিয়ে অনেক প্রশ্ন ছিল। ভোটাররা ভোট দিতে পারে নাই, সেই নির্বাচনে আমাদের যাওয়া নৈতিকভাবে সঠিক ছিল না। ফলে আমরা জনগণকে বিষয়টি ক্ষমাসুন্দরভাবে দেখতে বলেছি। জাতীয় পার্টি শান্তিপূর্ণভাবে রাজনীতি করার দল, একটি আধুনিক গণতন্ত্রমনা মডার্ন ডেমোক্রেটিক পার্টি। এ দলকে নিয়ে মানুষের কল্যাণে কাজ করতে চাই।’ 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, সাড়ে পনেরো বছরের দীর্ঘ শাসনামলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতার অহংকারে রাজনীতি বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলো ও সাধারণ মানুষকেও ক্ষেপিয়ে তুলেছিল। এ সময় দলটির ছায়াসঙ্গী এবং সুবিধাভোগী হিসেবে সবচেয়ে লাভবান জাতীয় পার্টি। আওয়ামী লীগ পতনের আগমুহূর্ত পর্যন্ত সরকারের সঙ্গে ছিল জাপা। এদিকে বিএনপি, জামায়াতসহ যে দলগুলো বর্তমানে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে তাদের অবস্থান আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে। তারা মনে করেন, ৭৬ বছরের আওয়ামী লীগ এবার সবচেয়ে বেশি সংকটে রয়েছে। যদিও ততটা বিপদে নয় জাপা। তাদের ওপর একধরনের রাজনৈতিক চাপ রয়েছে। তবে জাপার ওপর ভর করে আওয়ামী লীগের সক্রিয় হয়ে ওঠার জোর সম্ভাবনা রয়েছে। আর জাপা তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে নানা ধরনের কৌশল অবলম্বন করবে বলে জানান তারা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, গণঅভ্যুত্থানের যে স্পিরিট সেটি ধারণ করে আওয়ামী লীগ ও তার সুবিধাভোগীদের বিচার নিশ্চিত করা জরুরি। সে ক্ষেত্রে আ.লীগ সরকারের সুবিধাভোগী হিসেবে জাপা ছাড় পাওয়ার কোনো সুযোগ রাখে না। আসন্ন যে নির্বাচন সেখানে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে জাতীয় পার্টি আ.লীগের ভোটব্যাংক ব্যবহার করবে, সেটি ধারণা করা যায়। যার মাধ্যমে তাদের শক্ত অবস্থান সৃষ্টি হবে। সংসদে জাপার শক্ত অবস্থান পেতে হলে রাজনীতির মাঠে তাদের অবস্থান জানান দিতে হবে। যার অংশ হিসেবে নানা ঘটন-অঘটনের মাধ্যমে আলোচনায় থাকতে চাইছে দলটি। একই সঙ্গে ঘুরে দাঁড়ানোর জোর চেষ্টা চালাচ্ছে।  

তিনি আরও বলেন, বিগত সরকারের গত ১৫ বছর যে অত্যাচার, গুমসহ, জুলাই অভ্যুত্থানে গণহত্যার ঘটনা হয়েছে, সেখানে জাপার অদৃশ্য সম্মতি তাদের বেপরোয়া করেছে। এখনো জাপার সঙ্গে আওয়ামী লীগের যোগসূত্র থাকার সম্ভাবনা খুবই প্রবল। শুধু সম্পর্কই নয়, আগামী নির্বাচনের জন্য অর্থনৈতিকভাবে তারা সহযোগিতা পেতেও পারে। কারণ তাদের মাধ্যমেই আওয়ামী লীগ তাদের প্রতিনিধি পার্লামেন্টে পাঠানোর চেষ্টা করবে।

জাপার সাত ভাঙন: জাপার শীর্ষ নেতাদের দেওয়া তথ্যমতে, ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকতেই ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি জাপা প্রতিষ্ঠা করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। নব্বইয়ের গণআন্দোলনে এরশাদ পতনের পর হুদা-মতিনের নেতৃত্বে প্রথমবার ভাঙে জাতীয় পার্টি। তারপর ১৯৯৭ সালে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এবং শেখ শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে দ্বিতীয় দফা এবং ১৯৯৮ সালে কাজী জাফর ও শাহ মোয়াজ্জেমের নেতৃত্বে তৃতীয় দফা ভাঙে দলটি। এরপর ২০০১ সালে নাজিউর রহমানের নেতৃত্বে চতুর্থ দফা এবং ২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর বিশেষ কাউন্সিলের মাধ্যমে পঞ্চম দফা ভাঙন ঘটে। ষষ্ঠবারের মতো ভাঙন হয় এরশাদের মৃত্যুর পর।

২০১৯ সালের ১৪ জুলাই দলের প্রতিষ্ঠাতা এরশাদ মারা যান। তার মৃত্যুর পর চেয়ারম্যান পদ নিয়ে দ্বন্দ্বে ২০২৪ সালের ৯ মার্চ ষষ্ঠবারের মতো ভাঙে এরশাদের জাতীয় পার্টি। এরশাদের অসিয়তমতো তার ছোট ভাই জিএম কাদের চেয়ারম্যান হলে বেঁকে বসেন স্ত্রী রওশন এরশাদ। নিজেকে জাপার চেয়ারম্যান ঘোষণা করে দলের কমিটি গঠন করেন, যার মহাসচিব করা হয় কাজী মামুনুর রশীদকে। এবার নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে সপ্তমবারের মতো ভাঙল জাপা।

আনিস-হাওলাদার-চুন্নুর নেতৃত্বে নতুন জাপা। জাপার দশম জাতীয় কাউন্সিলে দল থেকে বহিষ্কৃত নেতারা এবং সারা দেশ থেকে আগত প্রায় দুই হাজার কাউন্সিলরের কণ্ঠভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার। এ ছাড়া কাজী ফিরোজ রশিদ সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ও মুজিবুল হক চুন্নু নির্বাহী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

উল্লেখ্য, গত ৭ জুলাই সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুসহ দলের ১০ নেতাকে অব্যাহতি দেন দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের। পরে অব্যাহতি পাওয়া নেতারা আদালতের দ্বারস্থ হলে ৩১ জুলাই জিএম কাদের এবং যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলমের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন আদালত।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!