অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের পর আকরাম হোসেন (৩০) নামে এক বাংলাদেশি যুবককে গণপিটুনিতে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এতে আরও অন্তত পাঁচজন আহতের খবর পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার সকালে ঘটনাটি জানাজানি হয়।
এর আগে গত সোমবার বিকেলে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খাসি হিলস জেলার কৈথাকোনা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত যুবক আকরাম হোসেন শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের বাঁকাকুড়া গ্রামের মৃত জহির উদ্দিনের ছেলে।
বাঁকাকুড়া এলাকার ইউপি সদস্য মোছা সরদার ও গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আকরাম দীর্ঘদিন ধরে বরিশালে থাকতেন। সোমবার বিকেলে আকরামসহ কয়েকজন মিলে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেন। পরে ভারতের অভ্যন্তরে গণপিটুনিতে তার মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।
এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনাটি জানাজনি হলে বিজিবির পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে বিজিবির পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআইসহ একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা গেছে, ৯ আগস্ট মধ্যরাতে আকরামসহ আটজন বাংলাদেশি সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খাসি হিলস জেলার রোংদাংগাই গ্রামে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করেন। পরে ওই গ্রামের এক বাসিন্দাকে অপহরণের চেষ্টা এবং বাড়িঘরে হামলার অভিযোগে পাঁচ বাংলাদেশিকে আটক করে পিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশি পুলিশ কনস্টেবল পরিচয়দানকারী জামালপুরের মারুফুর রহমান (৩২), জামালপুর সদর উপজেলার জাহাঙ্গীর আলম (২৫), নারায়ণগঞ্জের সায়েম হোসেন (৩০), কুমিল্লার মেহফুজ রহমান (৩৫) ও সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের মোবারক হোসেন (৩২)।
ভারতের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে পুলিশ জানিয়েছে, আকরামসহ অন্যদের অনুপ্রবেশ ও অপহরণের চেষ্টার সন্দেহে মারধর করা হয়। এ ঘটনায় এখনো স্থানীয় কাউকে গ্রেপ্তার বা আটক করা হয়নি। ভারতের খাসি হিলস জেলার পুলিশ সুপার বানরাপলাং জিরওয়া স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেন, আটক ব্যক্তিদের কাছ থেকে একটি রিভলবার, পরিচয়পত্র, তিনটি ওয়্যারলেস সেট ও একটি ম্যাগাজিন জব্দ করা হয়েছে। আটক বাংলাদেশিদের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আকরাম হোসেনের মৃত্যু হয়েছে।
আকরামের বড় ভাই শেখ ফরিদ বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমরা আকরামের মৃত্যুর খবর জানতে পারি। তবে কীভাবে সে ভারতে গেল, সে বিষয়ে কিছুই জানি না। তার লাশ ফেরত আনার জন্য আমরা বিজিবির সঙ্গে যোগাযোগ করেছি।’
বিজিবির নৌকুচি সীমান্ত ফাঁড়ি সূত্রে জানা গেছে, বিষয়টি জানার পর বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এ সময় বিএসএফের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ভারতের রোংদাংগাই গ্রামের এক বাসিন্দাকে অপহরণ ও ছিনতাইয়ে চেষ্টা করে কয়েকজন যুবক। পরে ওই গ্রামের বাসিন্দারা তাদের গণপিটুনি দেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আকরাম হোসেনের মৃত্যু হয়। আহতদের মধ্যে ৩ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ভারতের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। বাকি ২ জন এখনো চিকিৎসাধীন।
ঝিনাইগাতী থানার ওসি মো. আল আমীন বলেন, ভারতীয়দের গণপিটুনিতে বাংলাদেশি এক যুবকের মৃত্যুর খবর শুনেছি। আকরাম হোসেনের বিরুদ্ধে থানায় অপহরণ মামলার একটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে। বিস্তারিত পরে জানানো সম্ভব হবে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন