- ৬ মাসের মধ্যে অধিকাংশ ওষুধের দাম কমবে : ইডিসিএল
- খরচ বাঁচাতে ছাঁটাই হবেন ১ হাজারের বেশি কর্মী
বিগত সরকারের অনিচ্ছার কারণে এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল) স্বয়ংসম্পূর্ণতা পায়নি বলে মন্তব্য করেছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সামাদ মৃধা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ার পর থেকে এই প্রতিষ্ঠানের যে মূল উদ্দেশ্য, সেটিতেই ফোকাস করেছেন বলে দাবি করেছেন তিনি।
গতকাল বুধবার ইডিসিএলের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি আগে বেশির ভাগ সাধারণ ওষুধ তৈরি করে আসছিল। ওষুধের কাঁচামাল ক্রয় প্রক্রিয়া অস্বচ্ছ ছিল, আমরা সেগুলোকে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় মানসম্মত ও ন্যায়সংগত মূল্যে করছি। কোম্পানির অদক্ষ ও অপ্রয়োজনীয় জনবল কমিয়ে উৎপাদনক্ষমতা বাড়াতে সক্ষম হয়েছি এবং এতে উৎপাদন খরচ কমে এসেছে। আর তাই ৩৩টি ওষুধের দাম আগের তুলনায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে পেরেছি। আশা করছি এই অবস্থা চলমান থাকলে আগামী ছয় মাসের মধ্যে অধিকাংশ ওষুধের দাম কমিয়ে ফেলতে পারব।’
আরও ১ হাজারের বেশি জনবল ছাঁটাই করা হবে জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ইডিসিএলের উৎপাদনক্ষমতা অনুযায়ী ২ হাজারের বেশি অতিরিক্ত জনবল ছিল। তারা সবাই অদক্ষ কর্মী, অনেকের জাল সনদ পাওয়া গেছে। তারা কোনো কাজ করত না। এই অদক্ষ জনবলের মধ্যে ৭২২ জনকে ছাঁটাই করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির স্বার্থে আরও হাজারের বেশি জনবল ছাঁটাই করতে হবে। যাদের ছাঁটাই করা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
সামাদ মৃধা বলেন, ‘আগের প্রশাসন নিজের পছন্দমতো অতিরিক্ত জনবল বসিয়েছে। আমাদের এখানে একটা কক্ষের নাম ছিল রোহিঙ্গা কক্ষ। সেখানে কর্মীদের বসিয়ে রেখে বেতন দেওয়া হতো। আমি তো এমন করতে পারি না। আমরা কোম্পানিটাকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই। এটি ধীরে ধীরে বাস্তবায়ন করা হবে।’
এ সময় তিনি বলেন, ইডিসিএল তৃতীয় প্রজন্মের জন্মনিরোধক পিল উৎপাদন ও আইভি ফ্লুইড প্ল্যান্ট চালু করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা তৃতীয় প্রজন্মের জন্মনিরোধক পিল উৎপাদন শুরু করেছি। প্রশাসনিক আনুষ্ঠানিকতা পূরণ করা হলে তা সরবরাহ করা শুরু হবে। ট্রায়াল রান করা হয়েছে। ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে সাধারণ স্যালাইন, কলেরা স্যালাইন উৎপাদন করে সরকারের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে।’
এমডি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা ও সরকারি চাহিদা অনুযায়ী পণ্যের ধরন (প্রোডাক্ট লাইন) সাজানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে সত্যিকারের অতিপ্রয়োজনীয় ওষুধগুলো দ্রুত উৎপাদন করে পর্যায়ক্রমে সরকারের সম্পূর্ণ চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে।
ইডিসিএলের নতুন দুটি প্ল্যান্ট হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্ল্যান্ট দুটি শুধু ওষুধ নয়, টিকা সরবরাহ এবং জীব প্রযুক্তিনির্ভর পণ্য উৎপাদন করতেও সক্ষম হবে। ইডিসিএল শুধু সনাতনি ওষুধ নয়, ভবিষ্যতে সব ধরনের ওষুধ তৈরির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
গত ছয় মাসে ইডিসিএলের উল্লেখযোগ্য অর্জন নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির এমডি বলেন, ৩৩টি ওষুধের দাম কমানোর পাশাপাশি বাকি ওষুধের দাম কমানোর কাজ চলছে। টোল ম্যানুফ্যাকচারিং (চুক্তিভিত্তিক উৎপাদন) অনেকাংশে কমিয়ে আনা হয়েছে এবং শিগগির কিছু মেশিন সংযোজনের মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে টোল বন্ধ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে তুলনামূলকভাবে কম দামে ওষুধের মূল উপাদান নেওয়া হচ্ছে। অযোগ্য ও অদক্ষ জনবল কমানো হয়েছে। ল্যাগ টাইম কমিয়ে কর্মঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে। এতে উৎপাদনশীলতা বেড়েছে। ওভারটাইম কমিয়ে আনা হয়েছে, এতে কোম্পানির সাশ্রয় হচ্ছে। জনবলকে মোটিভেশনের মাধ্যমে কর্মমুখী করা হয়েছে। শ্রমিক-কর্মচারী ও ইউনিয়নের সঙ্গে সুসম্পর্ক করে কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। ওষুধের গুণগত মান বাড়ানোর জন্য নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এতে সরকারি সাপ্লাই চেইনে উন্নতি হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন