- প্রধান উপদেষ্টার টিম সিলেটে
- নাম জড়ানোয় বিব্রত বিএনপি
লুট করে যখন পুরো সাদাপাথর এলাকা সাবাড় করে ফেলা হয়েছে, মাটি ও অবশিষ্ট বালু ছাড়া কোথাও আর কিছু নেই; তখনই সেখানে ‘রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায়’ অভিযানে এসেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)! দুদকের দল গতকাল বুধবার যখন সাদাপাথর পরিদর্শনে আসে, তখন চারদিকে বিরানভূমি। গত কয়েক দিনে দুইশ কোটি টাকারও বেশি দামের পাথর লুটের পর বিরানভূমিতে দাঁড়িয়ে তারা পরিদর্শন শেষ করে সিলেট ফিরেছেন।
দুদকের দল সাংবাদিকদের জানিয়েছে, তারা দেশের মূল্যবান রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা করতে এসেছে। তবে খানিকটা দেরি হয়েছে এ কথা স্বীকার করেন তারা। এর জন্য সিলেট থেকে ঘটনাস্থলের দূরত্বকে দায়ী করে বলেন, ঘটনাস্থল দূরে হওয়ায় তারা আগে আসতে পারেননি।
কোম্পানীগঞ্জের সাদাপাথর এলাকা ছাড়াও গতকাল গোয়াইনঘাটের জাফলংয়েও অভিযানে নামে স্থানীয় প্রশাসন। তবে এ সময় কাউকে আটক বা নির্দিষ্ট কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ আনতে পারেনি তারা।
এদিকে একটি সূত্র জানিয়েছে, সাদাপাথর, বিছানাকান্দি ও জাফলং থেকে পাথর লুটের ঘটনা সারা দেশে আলোচিত-সমালোচিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়ে অনুসন্ধান চালাতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের একটি টিম গতকাল সিলেটে এসেছে। দলটি গোপনে সিলেট সফর করায় প্রশাসন থেকে কাউকে কিছু জানানো হয়নি। তারা জেলা প্রশাসন ছাড়াও সিলেটে বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের সাথে বসবেনÑ সূত্রটি এমন তথ্যও জানিয়েছে।
অপরদিকে সাদাপাথরে ব্যাপক লুটপাটের ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে প্রধান করে এই কমিটি গঠন করা হয়।
এই তথ্য নিশ্চিত করে গতকাল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ জানান, গত মঙ্গলবার এ কমিটি গঠন করা হয়। দ্রুততম সময়ের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে বিএনপির একটি সূত্র জানায়, লুটের ঘটনায় দলের নেতাকর্মীদের নাম জড়িয়ে পড়ায় বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছে দলটি। লুটপাটের পেছনে দলের সিলেট জেলা ও মহানগরের অনেক সিনিয়র নেতাসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের নামও রয়েছে গোয়েন্দা তালিকায়। তারা বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কে আছেন।
দুদক সূত্র জানায়, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর এলাকায় লুট হওয়া মূল্যবান পাথর উদ্ধারে গতকাল অভিযান পরিচালনা করে দুদক। দুপুরে সিলেট সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক নাজমুস সাদাত রাফির নেতৃত্বে এ অভিযান শুরু হয়।
দুদকের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) তানজির আহমেদ জানান, রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় কমিশন শুরু থেকেই কঠোর অবস্থানে রয়েছে। স্থানীয় কিছু অসাধু প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তির যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে ভোলাগঞ্জ এলাকায় অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করে সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্বের ক্ষতি করা হচ্ছেÑ এমন অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।
ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর এলাকা বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ পাথর উত্তোলন অঞ্চল। এখানকার প্রাকৃতিক সম্পদ দীর্ঘদিন ধরে সরকারের রাজস্ব আয়ের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হলেও কয়েকটি চক্র অবৈধভাবে এসব পাথর উত্তোলন ও পাচার করে আসছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত সদস্য এবং রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় এসব কার্যক্রম বছরের পর বছর ধরেই চলে আসছে।
দুদকের উপপরিচালক নাজমুস সাদাত রাফি অভিযান সম্পর্কে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, এখানে প্রাথমিক তদন্তে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাটের সুস্পষ্ট আলামত মিলেছে। আমরা পাথর উত্তোলনের বৈধতা, অনুমোদিত সীমা এবং প্রকৃত উত্তোলনের পরিমাণ যাচাই করছি। এই অভিযানের মাধ্যমে অপরাধীদের চিহ্নিত করে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দুদক সূত্র জানায়, অভিযানে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের পর সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দ্রুত চার্জশিট দাখিল করা হবে। একই সঙ্গে ভোলাগঞ্জ অঞ্চলে নিয়মিত মনিটরিং চালু এবং স্থানীয় প্রশাসনের স্বচ্ছতা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন