জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের এবং দলটির যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলমের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রত্যাহার করেছেন আদালত। একই সঙ্গে সপ্তমবার ভাঙনের মধ্য দিয়ে নবগঠিত আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমিন হাওলাদারের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) স্বীকৃতি চেয়ে চিঠি দিয়েছে। ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বরাবর এই চিঠি দেয় জাতীয় পার্টির এই অংশ।
গতকাল বুধবার জি এম কাদেরের আইনজীবী মনোয়ার হোসেন আলম বলেন, মামলার বাদী জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ গত ২ আগস্ট মামলাটি প্রত্যাহার করে নেওয়ার আবেদন করেন। পরে ১১ আগস্ট মামলাটি ঢাকার যুগ্ম জেলা জজ আদালতে বদলি হয়। পরদিন বিচারক রুবায়েত ফেরদৌস মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদন মঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে জি এম কাদের ও মাহমুদ আলমের দলীয় কার্যক্রমে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রত্যাহার করা হয়। এর ফলে জি এম কাদেরের সাংগঠনিক কার্যক্রমে আর কোনো বাধা নেই। এর আগে প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম গত ৩০ জুলাই জি এম কাদের ও মাহমুদ আলমের সাংগঠনিক কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন। একই সঙ্গে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদসহ ১০ জনের প্রাথমিক পদসহ সাংগঠনিক পদ ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত যাদের পদ ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়, তারা হলেনÑ জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু, জাতীয় পার্টির দপ্তর সম্পাদক-২ এম এ রাজ্জাক খান, প্রেসিডিয়াম সদস্য সোলায়মান আলম শেঠ (চট্টগ্রাম), প্রেসিডিয়াম সদস্য নাজমা আকতার (ফেনী), প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. জহিরুল ইসলাম জহির (টাঙ্গাইল), প্রেসিডিয়াম সদস্য মোস্তফা আল মাহমুদ (জামালপুর), প্রেসিডিয়াম সদস্য জসীম উদ্দিন (নেত্রকোনা) এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য আরিফুর রহমান খান (গাজীপুর)। অব্যাহতিপ্রাপ্তদের ১০ জনের পক্ষে জাতীয় পার্টির কো চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ গত ১০ জুলাই এই আদালতে মোকাদ্দমা দায়ের করেন।
মোকাদ্দমার অভিযোগে বলা হয়, ২০১৯ সালের ১৮ জুলাই পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা গঠনতন্ত্র পরিপন্থিভাবে জি এম কাদেরকে পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন। ওই বছরের ২৮ ডিসেম্বর জি এম কাদের পার্টির সম্মেলন ও কাউন্সিল করে অবৈধভাবে নতুন গঠনতন্ত্র অনুমোদন করেন। সর্বশেষ ২০২৫ সালের ২৮ জুন প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পদ থেকে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ সাতজনকে, পরে আরও তিনজনকে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং জাতীয় পার্টির নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকেও তাদের নাম মুছে ফেলা হয়।
এদিকে, সম্প্রতি দশম কাউন্সিলের মাধ্যমে জাতীয় পার্টির নবনির্বাচিত কমিটির চারজনের তালিকাসহ চিঠি গতকাল ইসিতে জমা দেওয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়, ৯ আগস্ট গুলশানের একটি কমিউনিটি সেন্টারে সারা দেশের প্রায় ৫ হাজার কাউন্সিলরের অংশগ্রহণে চারজনকে কণ্ঠভোটে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির শীর্ষ পদে নির্বাচিত করা হয়েছে। শিগগিরই কমিশনে হালনাগাদ তথ্য দেওয়া হবে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বাদ দিয়ে দলের এই জ্যেষ্ঠ নেতারা কাউন্সিল করেন। এই কাউন্সিলকে তারা দলের ‘দশম কাউন্সিল’ বলছেন। সেখানে আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে চেয়ারম্যান ও রুহুল আমিন হাওলাদারকে মহাসচিব নির্বাচন করা হয়। আনিসুল ইসলাম মাহমুদরা নিজেদের এই কমিটিকে জাতীয় পার্টির ‘মূলধারা’ দাবি করছেন। ওই কাউন্সিলকে গঠনতান্ত্রিকভাবে ‘বৈধ’ দাবি করে তারা বলছেন, লাঙ্গল প্রতীক ব্যবহারের বৈধ অধিকার কেবল তাদের কমিটিরই আছে। তবে চিঠিতে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন তারা।
এর আগে জি এম কাদের গত ৭ জুলাই তখনকার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুসহ দলের ১০ নেতাকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন। পরে অব্যাহতি পাওয়া নেতারা আদালতের দ্বারস্থ হলে গত ৩১ জুলাই জি এম কাদের ও যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলমের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন আদালত। এরপর তাকে বাদ দিয়েই দশম জাতীয় কাউন্সিল করেন বিদ্রোহী জ্যেষ্ঠ নেতারা।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন