রবিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: আগস্ট ১৭, ২০২৫, ০৬:৫১ এএম

টাকায় স্বাক্ষর যাদের, তারাই লুট করেছেন টাকা

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: আগস্ট ১৭, ২০২৫, ০৬:৫১ এএম

টাকায় স্বাক্ষর যাদের, তারাই লুট করেছেন টাকা

যে হাত দিয়ে টাকায় স্বাক্ষর করেছিলেন, একই হাত দিয়ে লুট করেছেন সেই টাকা। ছিলেন অর্থনীতির মূল পাহারাদার, অথচ লুটপাটের পথ প্রশস্ত করে দিয়েছিলেন তারাই। দেশের অর্থনীতিকে যারা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন, তাদের মধ্যে উল্লেখয়োগ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক তিন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, ফজলে কবির ও ড. আতিউর রহমান। তবে অবশেষে শেষ রক্ষা হচ্ছে না তাদেরও। দেরিতে হলেও দৃশ্যমান হচ্ছে তাদের আমলনামা। তাদের আর্থিক খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক তিন গভর্নর ও ছয় ডেপুটি গভর্নরের ব্যাংক হিসাবসংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য তলব করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুরোধে দেশের সব তপশিলি ব্যাংকে এ-সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে সংশ্লিষ্টদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার ফরম, লেনদেনের বিস্তারিত বিবরণ, কেওয়াইসি ফরমসহ সব তথ্য আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে পাঠাতে বলা হয়েছে। যদি কোনো হিসাব বন্ধ হয়ে থাকে, তার তথ্যও জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
যাদের হিসাবের তথ্য চাওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক তিন গভর্নর ড. আতিউর রহমান, ফজলে কবির ও আব্দুর রউফ তালুকদার। আওয়ামী লীগ সরকার বিদায়ের পর ড. আতিউর রহমান দেশত্যাগ করেন।

আব্দুর রউফ তালুকদার পলাতক অবস্থায় গত বছরের ৭ আগস্ট ই-মেইলে পদত্যাগ করেন। ব্যাংক হিসাব তলবের তালিকায় থাকা অন্যরা সবাই সাবেক ডেপুটি গভর্নর। তারা হলেন এস কে সুর চৌধুরী, মো. মাসুদ বিশ্বাস, আবু হেনা মো. রাজী হাসান, এস এম মনিরুজ্জামান, কাজী ছাইদুর রহমান ও আবু ফরাহ মো. নাছের। তাদের মধ্যে এস কে সুর চৌধুরী ও মাসুদ বিশ^াস বর্তমানে দুর্নীতি মামলায় কারাবন্দি। মো. মাসুদ বিশ্বাস বিএফআইইউর প্রধানের পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য হন। আবু হেনা মো. রাজী হাসান দীর্ঘদিন বিএফআইইউর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সরকার পরিবর্তনের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আর্থিক কার্যক্রম নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।

তাদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবেই ব্যাংক হিসাবের তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সাবেক তিন গভর্নর এবং চার ডেপুটি গভর্নরের পাশাপাশি তাদের স্ত্রী, সন্তান এবং সন্তানদের স্বামী বা স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব তলব করেছে বিএফআইইউ। তলবের আওতায় আনা হয়েছে সংস্থাটির সাবেক প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান ও মো. মাসুদ বিশ্বাস এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের হিসাবও।

অভিযোগ রয়েছে, নানা অনিয়মকে নিয়ম বানিয়ে ব্যাংক খাত থেকে নামে-বেনামে বিভিন্ন গ্রুপ প্রতিষ্ঠানকে লক্ষকোটি টাকা লুটপাটের সুযোগ করে দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার। ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার অতি আস্থাভাজন হওয়ায় যখন-তখন যোগাযোগ করতে আব্দুর রউফ তালুকদারের কোনো পর্দা ছিল না। ‘ব্যাংকখেকো’ এস আলমকে হাসিনার ‘ক্যাশিয়ার’ বলা হলেও লুটেরা গোষ্ঠীর ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব পালন করেন আবদুর রউফ তালুকদার। পূর্ণ মেয়াদে দায়িত্ব পালনের সুযোগ না পেলেও দুই বছরে দেশের ব্যাংক খাতকে তিনি ক্ষতবিক্ষত করে দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ব্যাংক খাতে যে পরিমাণ ক্ষত হয়েছে, এমন ঘটনা অতীতে আর কখনো ঘটেনি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তিনি সব অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করেছিলেন। এর ফলস্বরূপ তিনিই একমাত্র গভর্নর, যিনি সরকার পরিবর্তনের পর পালিয়ে যান এবং পলাতক থেকেই পদত্যাগ করেন।

গভর্নরদের মধ্যে ‘আজ্ঞাবহ’ গভর্নর হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ ব্যাংকের ১১তম গভর্নর ফজলে কবির। ব্যবসায়ী, রাজনীতিক ও প্রভাবশালীদের সুযোগ-সুবিধা দিতে কাউকে অখুশি করতেন না। গভর্নরদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় দায়িত্ব পালন করেন তিনি। দেশের ইতিহাসে আইন পরিবর্তন করে দ্বিতীয় মেয়াদে নিযুক্ত করা হয় তাকে। এর আগে অর্থসচিব ও রেলপথ সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ফজলে কবির গভর্নরের দায়িত্বে থাকাকালে সরকারের কোনো সিদ্ধান্তেই আপত্তি জানাননি। খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা, ঋণখেলাপিদের জন্য বিশেষ সুবিধা, নতুন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা, ব্যাংক পরিচালকদের জন্য আইন পরিবর্তন, সুদের হার ৯ শতাংশ করাসহ কোনো ক্ষেত্রেই প্রশ্ন তোলেননি তিনি। অর্থাৎ, তিনি যা করেছেন, সবই ছিল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। ছিল প্রভাবশালীদের চাপও। এসব কারণে বেশ সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছে তাকে।

ব্যাংক খাতে বিপর্যয়ের অন্যতম কারিগর  ড. আতিউর রহমান। তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শৃঙ্খলা ভেঙে ফেলেন, পরিদর্শনব্যবস্থা দুর্বল করে দেন। ব্যাংকিং সেক্টরে লুটপাটের সুযোগ করে দেন তিনি। তার সময়ে নীতিমালার শিথিলতায় শুরু হয় জালিয়াতি। ওই সময়ে হলমার্ক, বেসিক ব্যাংক, ক্রিসেন্ট, অ্যাননটেক্সের জালিয়াতি প্রকাশিত হয়। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে দেওয়া ৯ ব্যাংকের কোনোটিই দাঁড়াতে পারেনি। অপরিকল্পিত ও অদক্ষ আইটি ব্যবস্থাপনা সম্প্রসারণের কারণে রিজার্ভ চুরির সুযোগ তৈরি হয়। অদক্ষতা, ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বকীয়তাকে খর্ব করা, ঋণখেলাপিদের সুবিধা দেওয়ায় খাতটি ক্রমশ দুর্বল হতে থাকে। তিনিই মূলত ব্যাংক খাত ধ্বংসের মূল হোতা। তার সময়েই ব্যাংকের সব সূচকের অবনতি ঘটে।

আওয়ামী সরকারের তিন মেয়াদের পূর্ণ সময়ে দায়িত্ব পালনকারী এই তিন গভর্নরের যারা প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করেছেন, তারা হলেন সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী, মো. মাসুদ বিশ্বাস, আবু হেনা মো. রাজী হাসান, এস এম মনিরুজ্জামান, কাজী ছাইদুর রহমান ও আবু ফরাহ মো. নাছের। এদের মধ্যে শুধু এস কে সুর চৌধুরী ও মাসুদ বিশ্বাস বর্তমানে কারাগারে আটক রয়েছেন।

এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান, যাদের মৌলিক দায়িত্ব ব্যাংকিং খাতের সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করা। বাংলাদেশ ব্যাংকে যারা শীর্ষ পদে ছিলেন, তাদের অনেকেই ব্যাংকিং খাতের লুটপাট থেকে শুরু করে ধসে পড়ার পেছনে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ভূমিকা রেখেছেন, এতে সন্দেহের অবকাশ নাই। এদের সঙ্গে যোগসাজশ এবং তাদের অনুকম্পা ছাড়া লুটপাট ও অর্থ পাচার কোনোভাবেই সম্ভব হতো না। কাজেই অপরাধ প্রমাণিত হলে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।’
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!