বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: জুলাই ২৩, ২০২৫, ১১:৩১ পিএম

পাশাপাশি কবরে চিরঘুমে ছোট্ট নাজিয়া ও নাফি

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: জুলাই ২৩, ২০২৫, ১১:৩১ পিএম

পাশাপাশি কবরে চিরঘুমে ছোট্ট নাজিয়া ও নাফি

দুই সন্তান নাজিয়া ও নাফির ভালো পড়াশোনার জন্যই বুকভরা আশা নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন ভোলার অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আশরাফুল ইসলাম। ছেলে-মেয়েকে ভর্তি করিয়েছিলেন রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে।

নাজিয়া তাবাসসুম পড়ত স্কুলটির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ষষ্ঠ শ্রেণিতে আর আরিয়ান আশরাফ নাফি দ্বিতীয় শ্রেণিতে। তবে, মুহূর্তেই সেই স্বপ্ন ভেঙে ছারখার হয়েছে গত সোমবার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের পর। একে একে দুই সন্তানকে হারিয়ে শোকে ভেঙে পড়েছেন তাদের বাবা-মা।

‘গত মঙ্গলবার রাতেও আমার ছেলেকে রক্ত দেওয়া হয়। ডাক্তাররা বলেছিল জানাবে। তবে, জানাল ছেলে মারা গেছে! আমার মেয়েটা এক দিন আগে চলে গেল, পরদিন রাতে ছেলেও চলে গেল। এখন আমি কী নিয়ে বাঁচব...!’ কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহত নাজিয়া-নাফির মা।

বারবার গলা আটকে আসছিল, হারিয়ে ফেলছিলেন কথা বলার শক্তি। এক দিনের ব্যবধানে দুই আদরের সন্তানকে হারানোর বেদনার কোনো মাপকাঠি হয় না। ১৩ বছর আগে অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য আশরাফুল ইসলাম দম্পতির কোল আলো করে পৃথিবীতে এসেছিল নাজিয়া তাবাসসুম নিঝুম। নিঝুমের জন্মের চার বছর পর কোলজুড়ে আসে ছেলে আরিয়ান আশরাফ নাফি (৯)। বাবা-মায়ের ইচ্ছা ছিল ছেলে-মেয়েকে ভালো স্কুলে পড়িয়ে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার বানাবেন। ভর্তি করেছিলেন উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে। 

যে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে দিনরাত সময় কেটেছে বাবা-মায়ের, তারা আজ পৃথিবীর সবচেয়ে নিঃসঙ্গ মানুষ। যেন কেউ নেই তাদের সঙ্গে। শোকে পাথর পুরো পরিবার। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, নিহত নাজিয়ার ইচ্ছা ছিল ডাক্তার হবে। সাদা অ্যাপ্রোন পরে বলত ‘ভয় নেই, আমি আছি।’ সব ভয়কে জয় করে নাজিয়া ও তার ছোট ভাই পাড়ি জমিয়েছে না ফেরার দেশে। নাজিয়া-নাফির মা ডুকরে ডুকরে কেঁদে জানান, ‘ঘটনার দিন দুই ছেলেমেয়ে স্কুলে ছিল। আমি ওদের আনতে স্কুলে যাই। আমি স্কুলের ওয়েটিং রুমে বসে ছিলাম। ছেলেকে (নাফি) বলছিলাম মেয়েকে (নাজিয়া) আনার জন্য। মাঝে মধ্যে ও ওর বোনকে নিয়ে আসত।

ঠিক সেই মুহূর্তে বিমান এসে বিধ্বস্ত হয়। স্কুল থেকে তাদের নিয়ে আর বাসায় যাওয়া হয়নি। গন্তব্য ছিল হাসপাতাল। সেখানেই সব শেষ। 

গত সোমবার আহত হওয়ার পর নাজিয়া ও তার ভাই নাফিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সেদিনই রাত ৩টার দিকে নাজিয়া মারা যায়। আর মৃত্যুর সঙ্গে লড়তে থাকে তার ছোট ভাই নাফি। তবে গত মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে নাফিও পাড়ি জমায় না ফেরার দেশে। জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শাওন বিন রহমান জানান, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ নাজিয়ার শরীরের ৯০ শতাংশ বার্ন হয়েছিল। আর নাফির শরীরের ৯৫ শতাংশ ফ্লেম বার্ন ছিল। 

দুই শিশুর মামা ইমদাদুল হক তালুকদার বলেন, পরিবারের সবারই মানসিক অবস্থা খুবই খারাপ। আমার বোন ও দুলাভাই দুজনই ভেঙে পড়েছেন। সবার কাছে দোয়া চাই। গত মঙ্গলবার নাজিয়ার জানাজা শেষে উত্তরায়ই দাফন করা হয়েছে। নাফিরও কবর হয়েছে বোনের পাশেই।

নিহত নাজিয়া ও নাফির দাদা এ কে এম আলতাফ হোসেন মাস্টার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ওদের বাবার ইচ্ছা ছিল ছেলেমেয়েকে ভালো স্কুলে পড়িয়ে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার বানাবে। সে জন্য ১৫-১৬ বছর আগে থেকে ঢাকার উত্তরা দিয়াবাড়ি কামারপাড়া এলাকায় বাসাভাড়া করে বসবাস করছিল। ছেলেমেয়েকে ভর্তি করেছিল কাছাকাছি উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে। কিন্তু আজ আমাদের সবার সে স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। নাতি-নাতনিকে হারিয়ে আমরা নিঃস্ব।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!