ঢাকা বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০২৫

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ৩৯ আসনের সীমানায় ছোটখাটো পরিবর্তন

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: জুলাই ৩১, ২০২৫, ১২:৩৬ এএম

দ্বাদশ সংসদের ২৬১ আসনের সীমানা বহাল রেখে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ৩৯টি আসনে ছোটখাটো পরিবর্তন করে নতুন সীমানার খসড়া প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পরিবর্তনের মধ্যে গাজীপুরে একটি আসন বাড়ানো হয়েছে এবং বাগেরহাটে একটি আসন কমানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার।

নির্বাচন কমিশনের অনুমোদনের পর গতকাল বুধবার প্রস্তাবিত ৩০০ আসন নিয়ে ১০ আগস্টের মধ্যে দাবি-আপত্তি জানানোর সুযোগ রাখা হয়েছে। এবার ভোটার সংখ্যাকে আমলে নিয়ে ইসির বিশেষায়িত কমিটির সুপারিশ ও সীমানাসংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করে সংসদীয় এলাকার খসড়া প্রকাশ করা হলো। 
নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, বিশেষায়িত কমিটি ভোটার সংখ্যা এবং জনসংখ্যা বিশ্লেষণ করে গাজীপুর ও বাগেরহাট নিয়ে কমানো-বাড়ানোর প্রস্তাব রেখেছিল। বর্তমানে বাগেরহাটে চারটি আসন ও গাজীপুরে পাঁচটি আসন রয়েছে। নতুন প্রস্তাবে বাগেরহাটে তিনটি ও গাজীপুরে ছয়টি সংসদীয় আসন হবে।

ঢাকার আগারগাঁওয়ে গতকাল বুধবার বিকেলে নির্বাচন ভবনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার। এ সময় নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। সীমানা নির্ধারণে বিশেষায়িত কারিগরি কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর ইসির অনুমোদন নিয়ে এদিন সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

নির্বাচন ভবনে আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, আমরা ৬৪ জেলার গড় ভোটার নির্ধারণ করেছি ৪ লাখ ২০ হাজার ৫শ। এটা ধরে উপরের জেলায় একটি আসন বাড়ালে তা গাজীপুরে হবে। এ গড়ের কম বাগেরহাটে একটি কমালে সমতা চলে আসে। বাকিগুলোয় আসন কমবেশি প্রস্তাব দেওয়া হয়নি। দুই জেলার আসনই এফেক্টেড হয়েছে। আর কোথাও ঝামেলা নেই। ৩৯টি আসনে অ্যাডজাস্টমেন্ট রয়েছে। বড় ধরনের কোনো পরিবর্তনের প্রস্তাব ছিল না জানিয়ে ইসি সচিব বলেন, খুবই মাইক্রো লেভেলের প্রস্তাব। 

যেসব আসনে পরিবর্তন করা হয়েছে: পঞ্চগড়-১ ও ২, রংপুর-৩, সিরাজগঞ্জ-১ ও ২, সাতক্ষীরা-৩ ও ৪, শরীয়তপুর-২ ও ৩, ঢাকা-২, ৩, ৭, ১০, ১৪ ও ১৯, গাজীপুর-১, ২, ৩, ৫ ও ৬, নারায়ণগঞ্জ-৩, ৪ ও ৫, সিলেট-১ ও ৩, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও ৩, কুমিল্লা-১, ২, ১০ ও ১১, নোয়াখালী-১, ২, ৪ ও ৫, চট্টগ্রাম-৭ ও ৮ বাগেরহাট-২ ও ৩ আসন। এসব আসনের নাম জানিয়ে আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, এ প্রস্তাব কমিশনে আমরা উপস্থাপন করেছি। ইসি সেটা অনুমোদন দেয়। ১০ আগস্ট পর্যন্ত আবেদন (দাবি বা আপত্তি) করা যাবে। এরপর দাবি আপত্তি শুনানি শেষ করে চূড়ান্ত সীমানার গেজেট প্রকাশ করা হবে।

যেভাবে কাজ হয়েছে এবার: নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, সংবিধান অনুযায়ী সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের এখতিয়ার ইসির।

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের সীমানা নির্ধারণ করতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৬ জুলাই সীমানা নির্ধারণে ভূগোলবিদ, নগরবিদ, পরিসংখ্যানবিদসহ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ৯ সদস্যের বিশেষায়িত কারিগরি কমিটি করা হয়। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, এ টিম ৬৪ জেলার ৩০০ আসনের পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করে। আইন অনুযায়ী প্রশাসনিক ব্যবস্থা, ভৌগোলিক অখ-তা ও আদমশুমারিকে গুরুত্ব দিয়ে নির্ধারণ করতে হয়।
আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, আদমশুমারি ২০২২ ধরে কাজ করতে গিয়ে কারিগরি কমিটি দেখতে পায় অসামঞ্জস্য রয়েছে আদমশুমারিতে। বর্তমানে ইসির হালনাগাদ ভোটার সংখ্যা রয়েছে। সেই ভোটার সংখ্যার ভিত্তিতে চার লাখ ২০ হাজার ৫০০ কমবেশি গড় ভিত্তিতে গ্রেডিং করে কারিগরি কমিটি।

কোন জেলায় ভোটার বেশি, কোন জেলায় কম তাও পর্যালোচনা করা হয়। এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, সর্বনি¤œ ভোটার সংখ্যা যে জেলায় সেখানে ফিক্সআপ করেছে। এক, দুই, তিন আসনবিশিষ্ট জেলাগুলোকে আসন বাড়ানো বা কমানোয় বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।

তিনি বলেন, আড়াই শতাধিক আসনের বিষয়ে কারো কোনো আপত্তি আবেদন না আসায় বিদ্যমান সীমানাই বহাল রাখা হয়েছে। সর্বোচ্চ ভোটার রয়েছে এমন জেলায় একটি আসন বাড়ালেও সেখানে জাতীয় গড়ের চেয়েও ভোটার বেশি থাকে। সবচেয়ে কম ভোটার রয়েছে এমন জেলায় একটি আসন কমালে সেখানে জাতীয় গড় ভোটারের কাছাকাছি থাকে। তিনি আরও বলেন, সেক্ষেত্রে কারিগরি কমিটি সবচেয়ে বেশি ভোটারের জেলায় একটি আসন বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন। সর্বনি¤œ ভোটারের জেলায় একটি আসন কমানোর প্রস্তাব করেছে।

ছোটখাটো পরিবর্তন: নির্বাচন কমিশনে এ পর্যন্ত ১৫০০-এর মতো আবেদন পেয়েছে কমিশন। তিনি বলেন, কারিগরি কমিটির প্রস্তাব অনুযায়ী ইসির এ-সংক্রান্ত কমিটি প্রস্তাব প্রস্তুত করেছি। পরিবর্তন বলতে খুব মাইনর। কোথাও আবেদন করা হয়েছে, উপজেলাকে খ-িত করা যাবে না, কোথাও এ ইউনিয়ন রাখলে সুবিধা হয়। কোথাও ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায় সুবিধা-অসুবিধা তুলে ধরা হয়। এ নির্বাচন কমিশনার জানিয়েছেন কারিগরি কমিটির তথ্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ ভোটার এলাকা গাজীপুর জেলা আর সর্বনিম্ন ভোটারের জেলা বাগেরহাট। সর্বনি¤œ যেটি সেখানে আসন একটি কমানো ও সর্বোচ্চ ভোটার এলাকা গাজীপুরে একটি আসন বাড়ানো হয়।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ১২টি আসনে পরিবর্তন: সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ৩৮টি আসনে দাবি-আপত্তির আবেদন এলেও, ১০-১২টি আসনের বিষয়ে যুক্তিতর্ক ও বিশ্লেষণই বেশি আমলে নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। এক ডজন আসনে সামান্য পরিবর্তন এনে গেজেট হয় ২০২৩ সালের ৩ জুন।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালে খসড়া প্রকাশ করে দাবি-আপত্তি ও নিষ্পত্তি শেষে ৩০ এপ্রিল তিনশ আসনের গেজেট হয়। খসড়ায় ৪০ আসনে পরিবর্তনের প্রস্তাব করে; পরে ২৫টি আসনে ছোটখাটো পরিবর্তন আনা হয়।

দশম সংসদ নির্বাচনের আগে ৮৭টি সংসদীয় আসনে পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করে ইসি। এ খসড়া প্রস্তাবের ওপর দাবি-আপত্তি শুনানি শেষ হয় এপ্রিলে। সব বিষয় পর্যালোচনা করে ৫০টি আসনে ছোটখাটো পরিবর্তন করে ২০১৩ সালের ৩ জুলাই সীমানা চূড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশ করা হয়।

২০০৮ সালে সংসদীয় আসনে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়। ওই বছর নবম সংসদ নির্বাচনের জন্য ১৩৩ আসনে সীমানা পরিবর্তনের প্রস্তাব করে ইসি। পরে শতাধিক আসনে পরিবর্তন চূড়ান্ত হয়।