নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে একটি দোকানঘর দখল করে বিএনপির দলীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহারের পর দলটির নেতাদের কাছে ভাড়া চাওয়ায় মালিককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলার সালমদি বাজারে এ ঘটনা ঘটে। নিহতের নাম জাহাঙ্গীর ভূঁইয়া (৫৭)। তিনি উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের সালমদি বাজার এলাকার বাসিন্দা এবং ওই বাজারেই একটি মুদি দোকানের মালিক ছিলেন। তার মালিকানায় আরও তিনটি দোকান রয়েছে।
নিহতের ছেলে রাসেল বলেন, ‘গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের কয়েক দিন পর পাশাপাশি তিনটি দোকান একত্র করে স্থানীয় বিএনপির কার্যালয় হিসেবে গড়ে তোলেন মাহমুদপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ও মাহমুদপুর ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য তোতা মিয়া প্রধান। কার্যালয়টিতে মাহমুদপুর ইউনিয়ন ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির কার্যালয়ের ব্যানারও সাঁটানো হয়। আমাদের কিছু না জানিয়ে এখানে তারা পার্টি অফিস বানান। পাশাপাশি বাকি দুটো দোকান আমার চাচাদের। চাচাদের ভাড়া দিলেও আমাদের কোনো ভাড়া দিচ্ছিলেন না তারা। এ নিয়ে আমরা তাদের সঙ্গে বসলেও কোনো ভাড়া পাইনি। আজ (গতকাল) আব্বু ভাড়া চাইতে গেলে তোতা মেম্বার তাকে চড় মারেন। পরে তোতা মেম্বারের ছেলে খোকন, রাসেল, ভাতিজা সাদ্দাম ও আলমসহ আরও কয়েকজন দলবেঁধে আব্বুকে অফিসের ভেতরে এলোপাতাড়ি মারধর করেন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’
ঘটনার পর তোতা মেম্বার ও তার সহযোগীরা এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যান। এ বিষয়ে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও মাহমুদুর রহমান সুমন ফোন রিসিভ করেননি।
এ ব্যাপারে আড়াইহাজার থানার ওসি খন্দকার নাসির উদ্দিন জানান, সেখানে কয়েকটি দোকান মিলে একটি অফিস করা হয়েছে। দোকানগুলোর একটি অংশ জাহাঙ্গীরের। বুধবার সকালে তিনি দোকানের ভাড়া চাইতে গেলে সেখানে মারধরের ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক আশরাফুল আমীন বলেন, তাকে নিয়ে আসার আগেই তিনি মারা গেছেন। তার মাথায় আঘাতের গভীর ক্ষত দেখা গেছে।
যোগাযোগ করা হলে তোতা মিয়ার ছেলে খোকন প্রধান টেলিফোনে বলেন, ‘জাহাঙ্গীর আমাদের পার্টি অফিসের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন। আজ (গতকাল) এ নিয়ে তর্কের সময় তোতা প্রধান তাকে (জাহাঙ্গীর) একটি থাপ্পড় দেন। জাহাঙ্গীরও তোতা প্রধানের গায়ে হাত তোলেন। সেখানে আরও মানুষ ছিল। পরে হাতাহাতির সময় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।’
নিজেকে বিএনপির কর্মী পরিচয় দিয়ে খোকন আরও বলেন, ‘আমরা তার দোকানের অংশটি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি এসে খুব হট্টগোল করেন। তাকে মারধর করা হয়নি, হাতাহাতির সময় আঘাতে মারা গেছেন।’
নিহত মো. জাহাঙ্গীর হোসেন মাহমুদপুর ইউনিয়ন মৎসজীবী দলের সহসাধারণ সম্পাদক ছিলেন বলে জানা গেছে।
তবে তার ছেলে রাসেল বলেন, ‘আব্বু কখনো রাজনৈতিক পদে আছেন বলে আমি শুনিনি। তিনি রাজনীতি করতেন না। কেউ ডাকলে যাইতেন। তিনি আগে মুদির দোকান চালাতেন। যেখানে এখন বিএনপির অফিস, সেখানেই মুদি দোকানটি চালাতেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপির সভাপতি ইউসুফ আলী ভূঁইয়া বলেন, ‘আমি নিজে নিহতের বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। তারপর জেনেছি, বিএনপির নামে একটি কার্যালয় করা হয়েছিল, যেটার ভাড়া না দিয়ে ঘোরাচ্ছিল। পরে লোকটাকে মারধর করে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনা খুবই ন্যক্কারজনক।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত বলে অভিযোগ পাচ্ছি, সেই তোতা মেম্বার ও তার পরিবারের লোকজন বিএনপির কোনো পদে নাই। তোতা সাবেক সভাপতি ছিলেন। কিন্তু আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই এবং হত্যাকারী যেই হোক না কেন, জড়িত সবার আইনের মাধ্যমে বিচার চাই।’