মঙ্গলবার, ০৫ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


করিম আহমদ

প্রকাশিত: আগস্ট ৪, ২০২৫, ১১:৫১ পিএম

উজ্জীবিত থাকুক জুলাই চেতনা

করিম আহমদ

প্রকাশিত: আগস্ট ৪, ২০২৫, ১১:৫১ পিএম

উজ্জীবিত থাকুক জুলাই চেতনা

দগদগে স্মৃতির পাহাড়ে একাধিক প্রত্যাশা। নানা অস্পষ্টতার দোলাচলের মধ্য দিয়ে বাক বদলের এক বছর পার করল জুলাই গণঅভ্যুত্থান। একাত্তরের পর জুলাইয়ের আন্দোলন দেশের আপামর জনসাধারণকে এক সুতোয় বেঁধে অপ্রতিরোধ্য শক্তির দূর্গ গড়ে তুলা হয়েছিল। ফলে ক্ষমতার চেয়ারে চেপে বসা শেখ হাসিনার দীর্ঘ দেড় দশকের শাসনকে উপড়ে ফেলা হয়। 


২০২৪ সালের জুলাই বাংলাদেশের অনন্য ইতিহাসের সাক্ষী। কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলন, মাত্র কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে রূপ নেয় গণঅভ্যুত্থানে। গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও নাগরিক অধিকারের দাবিতে অনবদ্য গণপ্রতিরোধেরও উদাহরণ। জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরিকল্পিত কোনো রাজনৈতিক আন্দোলনের ফসল নয়। এটি ছিল মূলত ছাত্রদের আত্মস্ফূর্ত রোষ; যারা বছরের পর বছর ধরে নিয়োগে বৈষম্য, শিক্ষাব্যবস্থায় দলীয়করণ ও প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচার সহ্য করে এসেছে। তারা প্রশ্ন তুলেছিলÑ কেন মেধার চেয়ে পরিচয় বড় হবে? কেন রাষ্ট্র নাগরিকের পরিবর্তে কোনো দলের প্রতি দায়বদ্ধ থাকবে? সেই প্রশ্নগুলোই ধীরে ধীরে সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন পেশাজীবীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
আন্দোলনের সবচেয়ে বেদনাদায়ক দিক ছিল রাষ্ট্রীয় দমননীতি। অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের ফলে অসংখ্য ছাত্র-জনতা নিহত হয়, অনেকেই পঙ্গুত্ববরণ করেন। হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে চালানো হয় দমনপীড়ন। কিন্তু ইতিহাস বলে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে যখন একটি প্রজন্ম দাঁড়িয়ে যায়, তখন কোনো শক্তিই টিকে থাকতে পারে না। ২০২৪ সালের ৩৬ জুলাই (৫ আগস্ট) রাষ্ট্রযন্ত্র কার্যত ভেঙে পড়ে। শুরু হয় নতুন যাত্রার। 


এক বছর পেরিয়ে এসে স্বভাবতই মনের কোণে প্রশ্ন উঁকি দেয়Ñ আমরা কতটা এগিয়েছি? 
অস্থায়ী সরকারের অধীনে বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন শাসন চলছে। সংবিধান পুনর্লিখনের উদ্যোগ, বিচার বিভাগে স্বাধীনতার ইঙ্গিত, গুম-খুনের তদন্ত এবং শিক্ষাব্যবস্থায় দলীয়করণ রোধে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হলেও অনেক ক্ষেত্রেই সেই সংস্কার প্রক্রিয়া এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে। কিছু প্রভাবশালী গোষ্ঠী ও পুরোনো রাজনৈতিক সংস্কৃতি এখনো প্রতিরোধ গড়ে তুলছে, যারা পরিবর্তনকে শঙ্কার চোখে দেখে। 
তবু সবচেয়ে বড় অর্জন, জনগণের সামষ্টিক সচেতনতার বোধ। আজকের তরুণ প্রজন্ম জানে, তারাও রাষ্ট্রের মালিক। তারা শুধু আন্দোলন করতে জানে না, তারা প্রশ্ন করতেও জানে, সংগঠিত হতে জানে, নেতৃত্ব দিতেও জানে। এই মনোভাবই আগামী দিনের জন্য সবচেয়ে বড় আশার আলো।
আমরা যদি সত্যিই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ধরে রাখতে চাই, তাহলে প্রয়োজন হবে দীর্ঘমেয়াদি প্রতিষ্ঠানগত সংস্কার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ চর্চার। সবচেয়ে বেশি জরুরি একটি নতুন রাজনৈতিক চুক্তি, যেখানে জনগণের অধিকার আর কখনো সরকারের দয়ার বস্তু হয়ে থাকবে না।


আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, কোনো রাজনৈতিক পরিকল্পনা সামনে রেখে গণঅভ্যুত্থান হয়নি। তবে ছাত্রদের সঙ্গে লাখো জনতার একাত্মতা এ আন্দোলনকে রাজনৈতিক অভ্যুত্থানে রূপ দেয়। দেড় দশক ধরে জমে থাকা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটায় জাতি। যা গণঅভ্যুত্থানের পর মানুষের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে টের পেয়েছিল বিশ্ব।  


তবে গণঅভ্যুথানের পর দেশের মানুষ রাষ্ট্রের আমূল পরিবর্তনের যে স্বপ্ন দেখেছিল, পরবর্তীতে একাধিক ঘটনায় তা ম্লান হতে শুরু করে। গণঅভ্যুথান পরবর্তী  সময়ে দলীয় নকশায় গড়ে তোলা প্রশাসন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছিল। ক্ষমতায় থাকা সরকারের ইন্ধনে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানো পুলিশ বাহিনীও তার নৈতিক মনোবল হারিয়ে ফেলে। বলতে গেলে দেশের প্রশাসনযন্ত্র ভেঙে পড়ে। যার মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে দেশ পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়ে।


অভ্যুত্থান পরবর্তী আরেক বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছি আমরা। এই আন্দোলন আর অভ্যুত্থানকে নিজেদের বলে প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে যে বিরোধ দেখা দিয়েছেÑ তা নিঃসন্দেহে সামগ্রিক ঐক্যে ফাটলেরই ইঙ্গিত। বলতে চাই, জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল একটি প্রজন্মের আত্মদানের ফল। এই অভ্যুত্থান বাংলাদেশে উজ্জ্বল প্রজন্মের অভিষেক ঘটিয়েছে। যারা মৃত্যু উপত্যকা পার হয়ে একটি নতুন সূর্যোদয় ঘটিয়েছে বাংলার আকাশে।  


গণঅভ্যুত্থান আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেÑ রাষ্ট্রযন্ত্র যখন ভেঙে পড়ে, জনগণের আস্থা যখন চূড়ান্তভাবে বিনষ্ট হয়, তখন আর কোনো ক্ষমতার বলয় কাজ করে না। শেখ হাসিনার প্রস্থান একদিকে ইতিহাসের অবসান, অন্যদিকে নতুন ইতিহাস রচনার সূচনা। তবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রকৃত সাফল্যের প্রতিফলন তখনই ঘটবে যখন এই অর্জনকে পরিপূর্ণ রক্ষা ও বাস্তবতায় রূপ দিতে পারব। তাই সব পক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে। বিভেদ ভুলে দেশপ্রেম জাগ্রত রাখতে হবে। যা কিছু ভালো তার সঙ্গে থাকতে হবে। ঐক্যের মাধ্যমে সব জাতীয় সংকট দূর করতে হবে। তবেই গড়ে উঠবে বৈষম্যহীন সোনার বাংলা। 


লেখক: প্রধান সম্পাদক  

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!