- ব্যাংক কোম্পানি আইনে নয়, প্রচলিত আইনে খোলা যাবে
- লকারের দুটি চাবির একটি হাসিনার কাছে
- ১২ লাখের এফডিআর ও যৌথ সঞ্চয়ী হিসাবে ৪৪ লাখ টাকার সন্ধান
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে পূবালী ব্যাংকে থাকা একটি লকার জব্দ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি)। ঢাকার মতিঝিলে সেনাকল্যাণ ভবনের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত পূবালী ব্যাংকের এই শাখার লকারটি ছিল বলে গতকাল বুধবার তথ্যটি নিশ্চিত করেন সিআইসির মহাপরিচালক আহসান হাবিব।
তিনি জানান, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে পূবালী ব্যাংকের সেনাকল্যাণ ভবনের দ্বিতীয় তলায় লকারের সন্ধান পাওয়া গেছে। লকার নম্বর-১২৮। লকারের দুটি চাবির মধ্যে একটি শেখ হাসিনার কাছে রয়েছে। তাই সিআইসির একটি টিম লকারটি আপাতত জব্দ করেছে।’
তবে ব্যাংক কোম্পানি আইনি জটিলতায় এখনই লকার খোলা সম্ভব নয়। তা ছাড়া লকার খোলা ও বন্ধ করতে দুটি চাবির প্রয়োজন হয়। একটি চাবি ব্যাংক ব্যবস্থাপকের কাছে এবং অন্যটি রয়েছে ভারতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। যার কারণে লকারে কী পরিমাণ মূল্যবান ধাতব সম্পদ বা তথ্য স্থিতি রয়েছে, তা অজানাই থাকছে।
পূবালী ব্যাংকের একটি সূত্র জানিয়েছে, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালে দুইবার লকার খুলেছিলেন। কবে নাগাদ লকার খোলা হয়েছিলÑ তা নির্দিষ্ট করে তথ্য তুলে ধরেনি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। আরেকটি পক্ষ জানিয়েছে, শেখ হাসিনা ১৬-১৮ বছর বয়সে এই লকার ব্যবহার করেছিলেন। তবে কোনো পক্ষেরই তথ্য শুদ্ধি যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
অন্যদিকে সিআইসি জানায়, পূবালী ব্যাংকে নিজ নামে ১২ লাখ টাকার একটি এফডিআর এবং তার বোন রেহেনার সঙ্গে যৌথ নামে সঞ্চয়ী হিসাবে ৪৪ লাখ টাকার সন্ধান পেয়েছে সিআইসি। সরকার পরিবর্তনের বিভিন্ন মামলায় শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সব ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।
তবে ‘আদালতের নির্দেশে লকার খোলা যাবে’ বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি ডিপার্টমেন্টের পরিচালক (এসএসডি) মোহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘ব্যাংক কোম্পানি আইনে সরাসরিভাবে কিছু বলা নেই। তবে নির্দিষ্ট করে বলা আছে, কেউ মৃত্যুবরণ করলে তার নমিনি এটা পাবেন। তবে খোলার প্রক্রিয়ায় জেনারেল ব্যাংকাররা কিছু নিয়ম ফলো করেন। খোলার আগে একটি দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয়। যে ব্যাংকের শাখায় লকারটি আছে সেই ব্যাংকের কর্মকর্তা ও একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে লকার খোলার পরে একটি জব্দ তালিকা করা হয়।
তিনি রূপালী বাংলাদেশকে আরও বলেন, ‘লকারে ভেতরে কী থাকে শুধু মালিক জানেন। তবে এখানে মালিক যেহেতু অনুপস্থিত তাই আদালতের নির্দেশনা অনুসারে খোলা যাবে। ব্যাংকের লকার ভাঙার আগে তারিখ দিতে হবে। নির্দিষ্ট তারিখে সবার উপস্থিতিতে প্রচলিত আইনে খোলা হবে।’
তার আগে সিআইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিষয়ে জানতে দেশের ৬৫টি ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে সম্প্রতি চিঠি দেওয়া হয়। চিঠির মাধ্যমে হাসিনা ও তার পরিবারের নামে ব্যাংকে অনুমোদিত লকার এবং সম্পদের তথ্য জানতে চাওয়া হলে সেই চিঠির আলোকে ব্যাংকগুলো তাদের তথ্য এনবিআরকে জানিয়েছে। চিঠির আলোকে সিআইসি তপশিলি ব্যাংকে গতকাল অভিযান পরিচালনা করেছে।
অনুমান করা হচ্ছে, ব্যাংকের লকারে রাখা গোপন তথ্য সম্বলিত ফাইল, মূল্যবান দলিল এবং অলঙ্কার, ধাতব সম্পদ থাকতে পারে। এ ছাড়া বিভিন্ন মালামাল লুকিয়ে রাখা হয়েছে। লকার খোলার জন্য অবশ্যই দুটি চাবির প্রয়োজন হয়। যার একটি গ্রাহক এবং অপরটি ব্যাংকের নির্ধারিত কর্মকর্তার কাছে থাকে। একক চাবি দিয়ে কখনোই এই লকার খোলা যায় না। আবার লকার আটকাতেও দুটি চাবির প্রয়োজন হয়। তাই লকারে কী সম্পদ রয়েছে, তা আগাম বলা সম্ভব নয় বলে জানানো হয়েছে।