দীর্ঘ ৩৩ বছর পর বহু প্রতীক্ষিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন আজ। নির্বাচনকে ঘিরে পুরো ক্যাম্পাসে এখন উৎসবের আমেজ। নির্বাচনের দিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ। জাকসুর ২৫টি পদে এবার ভোটযুদ্ধে লড়ছেন ১৭৮ জন প্রার্থী। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদে ভিপি পদে ৯ ও জিএস পদে লড়ছেন আটজন। হল সংসদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪৪৫ জন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় জাকসু নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করতে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহনীর সঙ্গে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধেক শিক্ষার্থী নারী। তাই জয়-পরাজয়ের সমীকরণে ফ্যাক্টর হতে পারে নারী ভোটাররা। এবারের প্রচারণায় বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছেন নারী ভোটাররা। তাদের ভোট নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ভোটার টানতে অর্থ ব্যয়ের মহোৎসব শুরু করেছে ছাত্র সংগঠন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ও তাদের সমর্থকেরা।
বুথ ২২৪টি, নিরাপত্তায় পুলিশ-আনসার: নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, আজ সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ১১টি এবং ছাত্রীদের ১০ হলে একযোগে বিরতিহীনভাবে ভোট গ্রহণ চলবে। নির্বাচনে ভোটার ১১ হাজার ৯১৯ জন। ভোটারের ৪৮ দশমিক ৮ শতাংশ ছাত্রী।
জাকসু নির্বাচনে বিভিন্ন হলে ২২৪টি বুথ বসানো হবে। ব্যালট পেপারে টিক চিহ্নের মাধ্যমে ভোট দিতে হবে। প্রতি ২০০ ব্যালট পেপারের জন্য একটি বাক্স থাকবে। কেন্দ্রীয় সংসদ ও হল সংসদের ব্যালট বাক্স আলাদা করে চিহ্নিত থাকবে। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য আছেন ৬৭ জন পোলিং এজেন্ট এবং ৬৭ জন সহকারী। ভোটগ্রহণ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে ভোট গণনা করা হবে।
নির্বাচন উপলক্ষে ক্যাম্পাসের শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য ১৫০০ পুলিশ, ৭ প্ল্যাটুন বিজিবি ও ৫ প্ল্যাটুন আনসার ক্যাম্পাসের পরিসীমায় মোতায়েন থাকবে। এ ছাড়াও ক্যাম্পাসে যেকোনো অপ্রীতিকর ও অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা মোকাবিলায় আনসার এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ক্যাম্পাসে এবং ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করবেন।
দুই হলে হবে না হল সংসদের ভোট: হল সংসদ নির্বাচনে বেগম সুফিয়া কামাল হল ও নওয়াব ফয়জুন্নেছা হলে সব প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে। এই দুই হলে শুধু কেন্দ্রীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে। বেগম সুফিয়া কামাল হলে ১৫ পদের ১০টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন, বাকি পাঁচ পদ শূন্য রয়েছে। নওয়াব ফয়জুন্নেছা হলে ১৫ পদের ছয়টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন প্রার্থীরা, বাকি ৯টি পদ শূন্য রয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এ বি এম আজিজুর রহমানের স্বাক্ষরিত এ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আজ জাকসু নির্বাচন উপলক্ষে মীর মশরারফ হোসেন হল গেট এবং প্রান্তিক গেট ব্যতীত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব গেট গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১২ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টা পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব প্রকার ভাসমান দোকান, টারজান পয়েন্টের দোকান, পুরাতন পরিবহন সংলগ্ন দোকান, নতুন কলা ভবন সংলগ্ন মুরাদ চত্বরের দোকান, প্রান্তিক গেটের উত্তর পাশের কাপড়ের মার্কেট ও গেটের সব দোকান এবং প্রধান গেট সংলগ্ন সব দোকানপাট আজ সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। সব হলের অভ্যন্তরে ক্যান্টিন ও দোকান খোলা রাখা এবং পর্যাপ্ত খাবার মজুত রাখার জন্য বলা হয়েছে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ৬টা হতে ১২ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টা পর্যন্ত জরুরি বিভাগ (নিরাপত্তা, পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ইন্টারনেট) ব্যতীত সব প্রকার মোটরসাইকেল চলাচল নিষেধ করা হয়েছে। এই সময়ে শুধু শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলাকার স্টিকার এবং নির্বাচন কমিশনের স্টিকারযুক্ত গাড়ি ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে। সব স্টাফ বাস প্রান্তিক গেট দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার বৃহত্তর স্বার্থে সংশ্লিষ্ট সবার কাছে আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছে।
পাশাপাশি গতকাল যারা ডোপ টেস্ট করেনি তাদের ডোপ টেস্টের জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের প্রধান কমিশনার অধ্যাপক মনিরুজ্জামান বলেন, আজ নির্বাচনের আগেই ডোপ টেস্টের রেজাল্ট দেওয়া হবে। যদি কারো রেজাল্ট নেগেটিভ হয় তার প্রার্থিতা বাতিল হবে।
তিনি আরও বলেন, এক্ষেত্রে ব্যালটে তার নাম থাকলেও তাকে ভোট না দেওয়ার জন্য সেসব প্রার্থীর সম্পর্কে প্রচারণা হবে। যাতে করে ভোটাররা বৈধ প্রার্থীকে ভোট প্রদান করতে পারে।
জাকসু নির্বাচনকে কেউ বাধাগ্রস্ত করতে চাইলে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবেÑ এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সদস্য সচিব অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, জাকসুর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যদি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করে। তাহলে জাকসু গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করবে।
জাকসুর সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, আমরা আশাবাদী জাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হবে। আমাদের শতভাগ প্রস্তুতি নেওয়া শেষ, এখন সাধারণ শিক্ষার্থী এবং প্রার্থীদের সহযোগিতা প্রয়োজন। ব্যালট পেপার এবং বুথ স্থাপন করা শেষ। আশা করছি সুন্দর পরিবেশেই শেষ হবে। আর অছাত্রদের বের করা নিয়ে আমরা কঠোর তৎপরতা চালাচ্ছি। এখন আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করব।
এদিকে, সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করতে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহনীর সঙ্গে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মো. মনিরুজ্জামান জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২টি ফটক ও ক্যাম্পাসজুড়ে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
তিনি বলেন, গতকাল বুধবার দুপুর থেকে আজ বৃহস্পতিবার নির্বাচনের দিন পর্যন্ত প্রায় ১২০০ পুলিশ সদস্য পোশাকে ও সাদা পোশাকে ক্যাম্পাসে অবস্থান করবেন। এ ছাড়া ভোটকেন্দ্র ও হলে দায়িত্বে থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী। নিরাপত্তার সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকবেন ২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। প্রধান নির্বাচন কমিশনার আরও জানান, ঢাকা জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছিল। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে অবস্থান করবে এবং প্রয়োজনবোধে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে কার্যক্রমে অংশ নেবে।