ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ঘিরে যেসব অভিযোগ উঠেছে, এর সুষ্ঠু অনুসন্ধান ও যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন ভিপি পদে ছাত্রদল প্যানেলের পরাজিত প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান।
গতকাল বুধবার ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘ক্ষুদ্র জীবনে আমি এতদূর আসব কোনোদিন ভাবিনি। নির্বাচনের আগের রাতে খালেদ মুহিউদ্দিন ভাই আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ৫ বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে চাই? আমি কোনো সদুত্তর দিতে পারিনি। আমি আসলে কোনোদিনই জানতাম না নিজেকে কোথায় দেখতে হবে, কোথায় দেখা উচিত। একের পর এক আন্দোলন-সংগ্রাম এসেছে, নিজেকে রাজপথে সঁপে দিয়েছি। সেই পথ আজ আমাকে এতদূর নিয়ে আসল। ইটস ওকে’।
গত মঙ্গলবার ভোটের দিনের কথা তুলে ধরে এই ছাত্রদল নেতা বলেন, ‘নির্বাচনে আমার দিনটা শুরু হয় মিডিয়ার অপপ্রচার দিয়ে। দুপুর থেকেই আমি ভোটে বিভিন্ন জায়গায় একের পর এক সমস্যা খুঁজে পেয়েছি, সারাটা দিন সেসব নিয়ে কথা বলেছি। এই সমস্ত অভিযোগের একটা সুষ্ঠু অনুসন্ধান ও যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে আসবে বলে এখনো আশা রাখি’।
এবারের নির্বাচনে বড় জয় পেয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল। ভিপি, জিএসসহ ১২টি সম্পাদকীয় পদের মধ্যে ৯টি জিতে নিয়েছে তারা। ১৪,০৪২ ভোট পেয়ে ভিপি পদে জয়ী হয়েছেন শিবিরের সাদিক কায়েম। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের আবিদ পেয়েছেন ৫,৭০৮ ভোট।
সম্পাদকীয় যে তিনটি পদ শিবিরের হাতছাড়া হয়েছে সেগুলোতে বিজয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। ছাত্রদলের প্রার্থীরা কোনো পদেই জয়ের মুখ দেখেননি। আবিদ লিখেছেন, ‘মানুষ হিসাবে আমরা কেউ পরিপূর্ণ না। আমি জানি, আমি আপনাদের জন্য যথেষ্ট কাজ করতে পারিনি। সত্যি বলতে, জীবন আমাকে সেই সুযোগটুকুও দেয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থী ভাই-বোনদের ভোট দিতে আসার জন্য আমি মন থেকে ধন্যবাদ জানাই। মাত্র ২০ দিনের ক্যাম্পেইনে আমি চেষ্টা করেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ছাত্রের কাছে ছুটে যেতে। অনেকটুকু কাছাকাছি গিয়েছি, কিন্তু সবাইকে হয়তো স্পর্শ করতে পারিনি। তবে আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, আমার যাত্রা এখানেই শেষ নয়, আমার যাত্রা আরও অনেক দীর্ঘ। আমি এখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের একজন ছাত্রনেতা’।
আবিদ বলেন, ‘আমার নির্বাচনি ইশতেহারে যা কিছু ছিল, তা একজন ছাত্রনেতা হিসেবেই প্রশাসনের কাছ থেকে আদায় করে নিতে যা যা করা দরকার, তা আমি করব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতির নতুন শুরুটা আমাদের হাত ধরেই হবে। আমরা অতন্দ্র প্রহরী হয়ে রাজপথ পাহারা দেব, নিজেদের সবটুকু দিয়ে সমগ্র বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসব। ইনশাআল্লাহ, এর প্রতিফলন আপনারা পরবর্তী ডাকসুতে দেখতে পাবেন।‘আবিদ আপনাদের কখনো ছেড়ে যাবে না’। গত মঙ্গলবার রাতে ফল ঘোষণার প্রাথমিক পর্যায়েই তা প্রত্যাখ্যান করেন ছাত্রদলের এই ভিপি প্রার্থী।
ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘পরিকল্পিত কারচুপির এই ফল দুপুরের পরপরই অনুমান করেছি। নিজেদের মতো করে সংখ্যা বসিয়ে নিন। এই পরিকল্পিত প্রহসন প্রত্যাখ্যান করলাম’।
তবে তার ‘রানিং মেট’ জিএস প্রার্থী শেখ তানভীর বারী হামিম শিক্ষার্থীদের রায়কে সম্মান জানানোর কথা বলেন। গতকাল এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমাকে যেভাবে প্রকাশ্যে গ্রহণ করেছিলেন, আমার ওপর আস্থা রেখেছেন, সেটাও ফলে সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয়নি। আমি দুঃখ প্রকাশ করছি তারেক রহমান ও ঢাবি শিক্ষার্থীদের কাছে। ব্যক্তিগত জীবনে অনেক হেরেছি, রাজনৈতিক জীবনে এটাই প্রথম পরাজয়। যদিও এ পরাজয় ভাগ্যের কাছে-পরিবেশ ও পরিস্থিতির কাছে এবং নিছক সময়ের কাছে। সারা দেশের মানুষের কত দোয়া। নিশ্চয় সে দোয়া ব্যর্থ হবে না’।
হামিম লিখেছেন, ‘আমি খুব সাধারণ একজন মানুষ। হাসি-খুশি, তবে সংগ্রামী। জনাব তারেক রহমান ও ছাত্রদল নেতৃবৃন্দ আমাকে সম্মানিত করেছেন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ছাত্রদল থেকে জিএস প্রার্থী করে’। সেজন্য দলের নেতাকর্মী ও শিক্ষার্থীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে জিএস পদের পরাজিত এই প্রার্থী লিখেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ আমার মনের খবর জানতেন, এতটা সহীহ চিন্তাভাবনা থাকার পরেও কেন তাকদিরে এই পরাজয় রেখেছিলেন জানি না। আমি চিরকৃতজ্ঞ এ দলের প্রতিটা নেতাকর্মীর কাছে, আমার বিশ্ববিদ্যালয় আদর্শিক অগ্রজদের নিকট, আমার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। বিশেষ করে তারেক রহমান সাহেবের কাছে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেইসব শিক্ষার্থীর কাছে, যারা আমার জয় নিশ্চিত ভেবেছিলেন। এবং বিশেষ করে সে সকল শিক্ষার্থীদের কাছে, যারা মনে করেননি আমি তাদের জন্য যোগ্য!”। জিএস পদে ছাত্রশিবিরের এসএম ফরহাদ ১০,৭৯৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের এই প্রার্থী পেয়েছেন ৫,২৮৩ ভোট।