বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২৫, ১২:১৮ এএম

জবি শিক্ষার্থী জোবায়েদ হত্যা

‘তুমি না সরলে আমি মাহিরের হতে পারব না’

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২৫, ১২:১৮ এএম

‘তুমি না সরলে আমি  মাহিরের হতে পারব না’

  • এক মাস আগে হত্যার পরিকল্পনা
  • বাঁচার আকুতি জানালেও এগিয়ে আসেনি বর্ষা
  • ত্রিভুজ প্রেমের দ্বন্দ্বেই খুন দাবি পুলিশের
  • জবানবন্দি শেষে কারাগারে মাহির-বর্ষা-আয়লান
  • খুনিদের ফাঁসির দাবিতে আদালতপাড়ায় জবি শিক্ষার্থীদের মিছিল

রাজধানীর পুরান ঢাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা জোবায়েদ হোসেনের হত্যার পরিকল্পনায় নাম উঠে এসেছে তারই ছাত্রী ও প্রেমিকা বার্জিস শাবনাম বর্ষা। আর সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন তার প্রথম প্রেমিক মাহির। পুলিশ বলছে, মাহিরের ছুরিকাঘাতে আহত জোবায়েদ তার প্রেমিকা বর্ষার কাছে শেষ মুহূর্তে বাঁচার আকুতি জানিয়ে সিঁড়িতে যখন ছটফট করছিল, তখন জুবায়েদের উদ্দেশে বর্ষা বলেন, ‘তুমি না সরলে আমি মাহিরের হতে পারব না’। এর কিছু সময় পরেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যান জোবায়েদ। এ ঘটনায় মাহির রহমান (১৯), বার্জিস শাবনাম বর্ষা (১৮) ও ফারদীন আহম্মেদ আয়লানকে (২০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গতকাল মঙ্গলবার আদালতে গ্রেপ্তাররা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দি শেষে তিনজনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া মাহিরের বন্ধু প্রীতম চন্দ্র দাস এ মামলায় সাক্ষ্য দেন।

এদিকে জোবায়েদ হত্যাকা-ে জড়িতদের ফাঁসির দাবিতে গতকাল বিকেলে আদালতপাড়ায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন জবি শিক্ষার্থীরা। তারা দ্রুত বিচারের পাশাপাশি এই মামলায় আরও যারা জড়িত তাদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।

গতকাল দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মাহির ও বর্ষার মধ্যে প্রায় দেড় বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। টিউশন পড়াতে গিয়ে জোবায়েদের সঙ্গে বর্ষার ঘনিষ্ঠতা বাড়ে, যা মাহিরের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব হয়নি। এটি মূলত একটি ত্রিভুজ প্রেমের গল্প।’

তিনি আরও বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জোবায়েদ পুরান ঢাকার বংশাল থানার নুরবক্স লেনে বর্ষাকে পড়াতে গিয়ে দু’জনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রেমিকা বর্ষা একই সময়ে মাহির ও জুবায়েদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ত্রিভূজ প্রেম থেকে বের হতে নিজেই হত্যার পরিকল্পনা সাজান বর্ষা।’

পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, মাহিরকে বর্ষা বলেন যে, জোবায়েদকে না সরালে তিনি মাহিরের হতে পারবেন না। এরপর গত ২৩ সেপ্টেম্বর জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানতে পেরেছে পুলিশ।

তিনি আরও জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যার দিন বিকেল ৪টার দিকে জোবায়েদ টিউশন পড়াতে আসবেনÑ এই তথ্য মাহিরকে দেন বর্ষা। এরপর মাহির তার বন্ধু আয়লানকে নিয়ে বর্ষার বাসার নিচের গলিতে অবস্থান নেন। জোবায়েদ বাসার নিচে পৌঁছালে তাদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে মাহির জোবায়েদকে বর্ষাকে ছেড়ে দিতে বলেন, কিন্তু জোবায়েদ রাজি হননি। তখন মাহির ছুরি দিয়ে জোবায়েদের গলায় আঘাত করেন, যার ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘আমরা তদন্তে পেয়েছি মাহির ও বর্ষার দীর্ঘদিনের পরিচয়। তবে তারা প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছেন দেড় বছর আগে। নিহত জুবায়েদ এক বছর ধরে বর্ষাকে পড়াতেন। মেয়েটা জুবায়েদের প্রতি দুর্বল হয়ে যায়। মেয়েটার অবস্থা ছিল এমন যে, সে যখন যার কাছে যেত তার কথা বলত। এমন অবস্থায় মাহিরকে তার প্রেমিকা বর্ষা বলেছে, জুবায়েদকে না সরাতে পারলে আমি তোমার হতে পারব না। এভাবেই তারা জুবায়েদকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে। মাহিরের এক আঘাতেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যান জুবায়েদ।’

মাহিরকে তার মা থানায় হস্তান্তরের বিষয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আসলে আসামি গ্রেপ্তারে পুলিশের নানা কৌশল থাকে। আগে চট্টগ্রামের রাউজানে নিয়মিত শিক্ষার্থী অপহরণ হতো, মুক্তিপণ আদায় করা হতো। আমরা তখন অপহরণকারীদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এসে তাদের ব্যবহার করে সমঝোতার চেষ্টা করতাম। ঠিক এভাবেই আমরা মাহিরকে থানায় দিয়ে যেতে চাপ প্রয়োগ করেছি। এটা আমাদের কৌশলের অংশ। স্বেচ্ছায় থানায় হস্তান্তর করা হয়নি।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হত্যার পুরো পরিকল্পনা বর্ষার। বরগুনার মিন্নির ঘটনার সঙ্গে অনেকাংশ মিল রয়েছে। মেয়েটা দুজনের কারো কাছ থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না। ফলে সে নিজেই হত্যার পরিকল্পনা সাজায়।’

হত্যার পরিকল্পনা ও রাজনৈতিক কোনো বিষয় ছিল কি না জানতে চাইলে অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘মাহির ও বর্ষা ২৩ সেপ্টেম্বর হত্যার পরিকল্পনা করে। এখানে রাজনৈতিক কোনো বিষয় নেই। এটা ত্রিভূজ প্রেমের ঘটনা।’

হত্যার মুহূর্তে জুবায়েদের প্রেমিকা বর্ষার শেষ কথার বিষয়ে লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মল্লিক আহসান উদ্দিন সামী বলেন, ‘বর্ষা আমাদের নিশ্চিত করেছে যে, জুবায়েদ মারা যাওয়ার সময় সে উপস্থিত ছিল।’

তদন্তে জানা গেছে, জুবায়েদের শেষ কথা ছিল বর্ষাকে উদ্দেশ করে ‘আমাকে বাঁচাও’। বর্ষা তখন জুবায়েদের উদ্দেশে বলেন, ‘তুমি না সরলে আমি মাহিরের হব না’। তদন্তে প্রকাশ পায় যে, দোতলার সিঁড়িতে জুবায়েদকে ছুরিকাঘাত করা হয়। এ সময় সে বাঁচার চেষ্টা করছিল। বর্ষাদের বাসা পাঁচতলায় হলেও ঘটনার সময় সে তিনতলার সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে নিচের হত্যাকা- প্রত্যক্ষ করে।

গত রোববার বিকেলে রাজধানীর আরমানিটোলায় টিউশনিতে গিয়ে খুন হন জবির পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী ও জবি ছাত্রদল আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জোবায়েদ হোসেন। আরমানিটোলার একটি বাড়ির সিঁড়িতে রক্তাক্ত অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের  বড় ভাই এনায়েত হোসেন সৈকত রাজধানীর বংশাল থানায় তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

ছাত্রী বর্ষাসহ ৩ জনের জবানবন্দি : এদিকে জোবায়েদ হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার তিনজন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ছাড়া মাহিরের বন্ধু প্রীতম চন্দ্র দাস এ মামলায় সাক্ষ্য দেন। গতকাল ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের পৃথক চার আদালত তাদের জবানবন্দি ও সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। মেহেদী হাসানের আদালতে মাহির, মাসুম মিয়ার আদালতে বর্ষা ও জুয়েল রানার আদালতে আয়লান জবানবন্দি দেন।

রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী জানান, আসামিরা স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দিতে রাজি হওয়ায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বংশাল থানার উপপরিদর্শক মো. আশরাফ হোসেন জবানবন্দি রেকর্ডের আবেদন করেন। আদালত পৃথক চার আদালতে ১৬৪ ধারায় তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। জবানবন্দি শেষে তিনজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

জানা গেছে, জোবায়েদ হত্যার ঘটনায় গতকাল সকালে বংশাল থানায় একটি মামলা করেন জোবায়েদের বড় ভাই এনায়েত হোসেন সৈকত। এতে বর্ষাসহ তিনজনকে এজাহারনামীয় ও অজ্ঞাতনামা হিসেবে ৪-৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

মামলার অভিযোগ বলা হয়েছে, জোবায়েদ হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশন করতেন। প্রতিদিনের মতো তিনি রোববার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বংশাল থানার ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের নুর বক্স লেনের ১৫ নম্বর হোল্ডিং রৌশান প্রাইভেট পড়ানোর জন্য যান। সন্ধ্যা ৫টা ৪৮ মিনিটের দিকে বর্ষা জোবায়েদ হোসেনের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট ভাই সৈকতকে ফেসবুক মেসেঞ্জারের মাধ্যমে জানান, জোবায়েদ স্যার খুন হয়েছে পরে জোবায়েদের ভাই, রাত সাড়ে ৮টায় ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পান, রৌশান ভিলা ভবনের নিচতলা থেকে ওপরে উঠার সিঁড়ি ও দেয়ালে রক্তের দাগ। ওই ভবনের তৃতীয় তলার পূর্ব পাশে সিঁড়ির ওপর জোবায়েদের রক্তাক্ত মরদেহ উপুড় অবস্থায় দেখা যায়। সুরতহাল প্রস্তুত করার সময় তার গলার ডান পাশে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে।

ফাঁসির দাবিতে জবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ : এদিকে গতকাল বিকেলে খুনিদের ফাঁসির দাবিতে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করছেন জবি শিক্ষার্থীরা।  তারা দ্রুত বিচার দাবি করেন এবং এই মামলায় আরও যারা জড়িত তাদেরও শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান। এদিন বিকেলে চিফ মেট্রোপলিট্রন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল থেকে ‘ফাঁসি, ফাঁসি, ফাঁসি চাই, খুনিদের ফাঁসি চাই’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দিব না’, ‘জবিয়ানের রক্ত, বৃথা যেতে পারে না’Ñ এমন বিভিন্ন স্লোগান দেন।

মিছিলে থাকা ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী আবিদ হাসান বলেন, ‘আমরা জোবায়েদের হত্যায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। কোনো রকমের টালবাহানা মেনে নেব না। আর্থিক লেনদেন কিংবা কোনো প্রভাব খাটিয়ে যদি আইনকে কুক্ষিগত করা হয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কঠোর আন্দোলন করবে।’

জবি শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন বলেন, ‘জোবায়েদের খুনিদের আইনানুগ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসন অনেক কিছু আড়াল করে রেখেছে, জোবায়েদের প্রকৃত খুনিদের খুঁজে বের করতে হবে।’

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!