ঢাকা শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৫

বড় ভূমিকম্পের শংকা এখনো রয়ে গেছে

গতকালের ভূমিকম্পের প্রতিক্রিয়ায় ড. আনসারী

মাইনুল হক ভূঁইয়া
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৮, ২০২৫, ০১:২৬ এএম

মাত্র ১৩ ঘণ্টার ব্যবধানে বাংলাদেশে পরপর তিনটি ভূমিকম্পে দেশজুড়ে নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। স্বল্প সময়ে এমন ঘন ঘন কম্পন দেশের ভূতাত্ত্বিক স্থিতিশীলতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। পাঁচ দিনের মাথায় গতকাল বৃহস্পতিবারও তিনবারের ভূমিকম্প কাঁপিয়ে দিয়েছে গোটা দেশ। যদিও কম্পনগুলোর মাত্রা মৃদু-মাঝারি তবুও মানুষ ভীত হয়ে ছোটাছুটি শুরু করেন এবং অনেকেই খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নেন।

ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার রাত সোয়া ৩টা থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটে প্রায় ১৩ ঘণ্টার ব্যবধানে এই কম্পনগুলো অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে কম্পনগুলোর মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৬। বিশেষজ্ঞগণ বলছেন, এটি মাঝারি বা হালকা কম্পন। গতকালের এই কম্পনের উৎপত্তিস্থল নরসিংদীর ঘোড়াশাল বলে দাবি করেছে আবহাওয়া অফিস।

বিষয়টি নিশ্চিত করে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুবাইয়াত কবির বলেন, এটি একটি স্বল্পমাত্রার ভূকম্পন এবং আফটার শক। এদিকে ভারতের জাতীয় ভূকম্পবিদ্যা কেন্দ্র (এনসিএস) জানিয়েছে, ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৬। ভূপৃষ্ঠ থেকে এর গভীরতা ছিল ১০ কিলোমিটার।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও বিশিষ্ট ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, এই ভূকম্পনটি ছোটÑ আগের ভূমিকম্পের ধারাবাহিকতা, যেটিকে আফটার শক বলা হয়। তিনি বলেন, এ ধরনের ছোট ছোট আরও কয়েকটি কম্পন হতে পারে, আবার নাও হতে পারে। ড. আনসারী জানান, বড় ভূমিকম্পের শংকা কিন্তু রয়েই গেছে। তবে এর জন্য সপ্তাহখানেক অপেক্ষা করতে হবেÑ এরপর সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে। তিনি বলেন, এখনই অনুমাননির্ভর কিছু বলা ঠিক হবে না। তিনি সবাইকে বেশি বেশি সৃষ্টিকর্তার নাম স্মরণের পরামর্শ দেন।

উল্লেখ্য, গত ২২ ও ২৩ নভেম্বর দুদিনের ব্যবধানে ঢাকা ও এর আশপাশ এলাকায় চারবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এর তিনটির উৎপত্তিস্থলই ছিল নরসিংদী এবং একটি ঢাকা। এর মধ্যে ২১ নভেম্বর শুক্রবার একটি এবং ২২ নভেম্বর শনিবার তিনটি ভূমিকম্প সংঘটিত হয়।

এদিকে রূপালী বাংলাদেশের পলাশ (নরসিংদী) প্রতিনিধি মাহবুব সৈয়দ জানান, নরসিংদীর পলাশে গতকাল বৃহস্পতিবার আবারও মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। বিকেল ৪টা ১৫ মিনিট ২০ সেকেন্ডে এই ভূকম্পন অনুভূত হয়। এ নিয়ে নরসিংদীর পলাশে চার দফা ভূমিকম্প অনুভূত হলো। গতকালের ভূকম্পনের উৎপত্তিস্থল রাজধানীর আগারগাঁওয়ের আবহাওয়া অধিদপ্তরের সিসমিক সেন্টার থেকে এর দূরত্ব ২৮ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে।

২১ নভেম্বরের মাঝারি মানের ওই ভূমিকম্পে এ পর্যন্ত পলাশে দুজন নিহত হয়েছে। এ ছাড়া ঘোড়াশাল রেলসেতুর দুটি পিলার, ঘোড়াশাল সরকারি খাদ্যগুদাম ভবন, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, স্কুলভবন, পলাশ-ঘোড়াশাল সার-কারখানাসহ আবাসিক ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে।

এর পরদিন ২২ নভেম্বর সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটেও দেশে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। মৃদু ওই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলও ছিল নরসিংদীর পলাশে। রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৩। পরবর্তীতে একই দিন সন্ধ্যায় আবারও দেশে ভূমিকম্প অনুভূত হয়।